রবিবার ● ১২ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: বাংলাদেশ প্রবাহ » রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত ধূমকেতু নিওওয়াইস-কে খালি চোখেই দেখা যাবে রাতের আকাশে। এটি ২০২০ সালের প্রথম দৃশ্যমান ধূমেকতু। আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী অংশ থেকে আসা এই ধূমকেতুটি আমাদের জীবদ্দশায় মাত্র একবারই দেখা মিলবে। গত ৩ জুলাই এটি সূর্যের সবচেয়ে নিকট অবস্থানে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ শেষে ফের যাত্রা শুরু করেছে তার মহাজাগতিক আস্তানা ওর্ট মেঘের এলাকায়। আবিষ্কারের পর থেকে এতোদিন নিওওয়াইস-কে মোটামুটি উজ্জ্বল ভাবে দেখা যাচ্ছিল সূর্যোদয়ের ঘণ্টাখানেক আগে। এখন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম আকাশে ১৪ জুলাই হতে সূর্যাস্তের ঘন্টাখানেক পর থেকেই ধূমকেতুটি দৃশ্যমান হবে। মধ্য আগস্টে এটি পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে চলে যাবে। এখন সন্ধ্যের আকাশে কুড়ি মিনিটের মতো দৃশ্যমান হবে ধূমকেতুটি, তারপরে দিগন্তের নিচে চলে যাবে। তবে জুলাই মাসের শেষের দিকে প্রায় ঘন্টাখানেক আকাশে দেখা মিলবে ধূমকেতুটির।
ধূমকেতুটির দাপ্তরিক নাম সি/২০২০এফ৩ নিওওয়াইস, যা মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র নিওওয়াইস স্যাটেলাইট গত মার্চ মাসে খুঁজে পেয়েছে। ২২ জুলাই ধূমকেতুটি পৃথিবীর সাপেক্ষে নিকটতম অবস্থানে থাকবে। তবে পৃথিবীর নিকটবর্তী হলেও এর দূরত্ব থাকবে পৃথিবী থেকে ১০ কোটি ৩০ লাখ কিলোমিটার। পর্যবেক্ষকরা অন্ধকার আকাশে খালি চোখে ধূমকেতুটির নিউক্লিয়াস দেখতে সক্ষম হবেন, তবে দূরবীণ ব্যবহার করলে ধূমকেতুর দীর্ঘ পুচ্ছকে আরও ভালোভাবে দেখা যাবে। ধূমকেতুটি এখন বনমার্জার বা Lynx নক্ষত্রমণ্ডলীতে রয়েছে, ধীরে ধীরে তা সপ্তর্ষিমণ্ডলের নিচে অবস্থান করবে।
গত তেইশ বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে উজ্জ্বল ধূমকেতু। এর আগে ১৯৯৭ সালে হেল-বপ ধূমকেতুটি আকাশের উজ্জ্বলতম ধূমকেতু হিসেবে বিরাজ করেছিল, যা প্রায় আঠারো মাস ধরে খালি চোখে দৃশ্যমান ছিল। ধূমকেতু নিওওয়াইস-এর পর্যায়বৃত্ত কাল, অর্থাৎ ধূমকেতুটিকে পুনরায় পৃথিবী থেকে দেখতে পাওয়া যাবে ৬৭৬৭.৫৫ বছর পরে।
ধূমকেতু হল ধুলো, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু। এর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস পাথর, ধূলা,জলীয় বরফ, বরফায়িত গ্যাস - কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি দিয়ে গঠিত।ধূমকেতু সৌরজগতের অভ্যন্তরে আসার পরে সূর্যের বিকিরণে উদ্বায়ী পদার্থগুলো ধূলো ও গ্যাস হয়ে ছড়িয়ে পড়ে কমা'র সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে সূর্যের বিকিরণ বল ও সৌরবায়ুর প্রভাবে সূর্যাবিমূখি একটি বিশাল পুচ্ছ বা লেজ তৈরি হয়। সূর্যের আলোয় পুচ্ছটি অত্যুজ্জ্বল হয়ে ওঠায় আমরা তা দেখতে পাই। বেশিরভাগ ধূমকেতুর উৎস হচ্ছে সৌরজগতের বাইরে ওর্ট মেঘে।
ধূমকেতু রাতের আকাশকে আলোকিত করে যেমন মানুষের মনে একটা মোহজাল তৈরি করে, তেমনি এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য যে পানি, কার্বন ও অন্যান্য উপাদানের প্রয়োজন তা কোটি কোটি বছর পূর্বে ধূমকেতুই বয়ে এনেছিল।
সূত্র: নাসা জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি
বিষয়: #ধূমকেতু #নিওওয়াইস