

শনিবার ● ২০ জুন ২০১৫
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: বাংলাদেশ প্রবাহ » ঘনচিনি নামে আমরা যা খাচ্ছি
ঘনচিনি নামে আমরা যা খাচ্ছি
ঘনচিনি এর রাসায়নিক নাম সোডিয়াম সাইক্লামেট। সাধারণ চিনির চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ গুণ বেশি মিষ্টি এই ঘন চিনি। ১৯৫৮ সাল থেকে আমেরিকার ওষুধশিল্পে এই রাসায়নিক উপাদান ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিভিন্ন তিক্ত স্বাদযুক্ত ওষুধের তিক্ততা দূর করতে। আমরা ডায়াবেটিক রোগীদের বিভিন্ন খাবারে চিনির বিকল্প হিসাবে একে ব্যবহৃত হতে দেখি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এর ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু এটি মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, যা মানবদেহের ক্যান্সার, কিডনি অকেজো হয়ে পড়া, পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া, হজমশক্তি হ্রাস সহ নানাবিধ জটিল রোগ সৃষ্টিকারী উপাদান।
মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এই রাসায়নিক পদার্থটি ১৯৬৯ সালে আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ প্রসাশন খাবারের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বাংলাদেশেও ১৯৮২ সালে সোডিয়াম সাইক্লামেট আমদানি, বাজারজাত, কোন ধরনের খাবারে ব্যাবহার করা নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো অনেক দেশেই এটি আইনের ফাঁক গলে নিয়মিতভাবেই আমদানি হয়ে চলেছে। কারণ অধিক লাভের আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা আইসক্রিম, জুস ও মিষ্টিজাতীয় পণ্য তৈরিতে সাধারণ চিনির পরিবর্তে ঘনচিনি ব্যবহার করেন। কারণ ১ কেজি ঘনচিনি প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কেজি সাধারণ চিনির সমান কাজ করে। তাই এটি ব্যবহারে অধিক লাভের হাতছানি রয়েছে।
যেহেতু আইনত এই রাসায়নিক আমদানির অনুমতি নেই তাই ঘনচিনির মতো দেখতে অন্য কোন রাসায়নিক, যার আমদানি করা আইনসিদ্ধ সেই নামে ঘনচিনি দেশে প্রবেশ করছে। সাইট্রিক অ্যাসিড (ওপরের হালকা নীল রঙের ব্যাকগ্রাউন্ড দেয়া ছবি) ও সোডিয়াম সাইট্রেট (ওপরের সাদা রঙের ব্যাকগ্রাউন্ড দেয়া ছবি) দেখতে ঘনচিনি বা সোডিয়াম সাইক্লামেট এর মতোই। কোন রাসায়নিক পরীক্ষা না করে খালি চোখে এদের পার্থক্য করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে আমাদের দেশে সাইট্রিক এসিড নামে ও কোডে ঘন চিনি আমদানি করা হচ্ছে। দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, কাস্টমস্ সূত্র মতে বাংলাদেশে সাইট্রিক অ্যাসিডের আমদানি হঠাৎ বেড়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ২ হাজার ৪৭২ টন সাইট্রিক অ্যাসিড আমদানি হয়। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয় ৪ হাজার ৫৫ টন।
সহজেই অনুমেয় কিভাবে সাধারণ মানুষকে ফাঁকি দিয়ে দেশে অননুমোদিত ও ক্ষতিকর রাসায়নিক বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশে যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এর থেকেও ভয়াবহতা আমাদের দেশেই চলছে। প্রতি কেজি খাটি ঘনচিনির মূল্য ২২০ টাকা। এই ঘনচিনির সাথে অন্য ভেজাল মিশ্রিত করে কোথাও কোথাও কেজি প্রতি বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০/১৫০ টাকায়। নাহয় মানা গেল ঘনচিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু ঘনচিনির সাথে কিইবা মিশ্রিত হতে পারে ভেজাল হিসেবে? উত্তরটা পিলে চমকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট! ম্যাগনেসিয়াম সালফেট (একদম নীচের গাঢ় নীল রঙের ব্যাকগ্রাউন্ড দেয়া ছবি) নামে একটি সার পাওয়া যায় বাজারে যা দেখতে ঘনচিনির মতই, আর দাম কেজি প্রতি প্রায় ২০ টাকা। ফলে খুব সহজেই এই সার ঘনচিনির সাথে মিশে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে চলে যাচ্ছে। লাভের উপর লাভ করতে গিয়ে ভেজাল ঘনচিনির বাজার জমজমাট। একে তো সাধারণ চিনি ব্যবহার না করে ঘনচিনি ব্যবহার করায় লাভের পাল্লা ভারী হচ্ছে, তার ওপরে ভেজাল ঘনচিনি লাভটাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেখানে ঘনচিনিই মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সেখানে সার মিশ্রিত ঘনচিনিকে নেহায়েত বিষ বলাই সমীচীন। এই ঘনচিনি মিশ্রিত বিভিন্ন মিষ্টিজাত খাবার আমাদেরকে নিত্য শ্লথ গতিতে মৃত্যুর কাছাকাছিই নিয়ে যাচ্ছে।
এই অনৈতিকা রোধে রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কাস্টমস্ থেকে পরীক্ষা করে পণ্য খালাস করা ও একইভাবে সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প পন্থা নেই।
কৃতজ্ঞতা: মাহবুব কবির মিলন এবং দৈনিক প্রথম আলো, ১৬ জুন, ২০১৫
বিষয়: #ঘনচিনি #ম্যাগনেসিয়াম সালফেট #সাইট্রিক এসিড #সোডিয়াম সাইক্লামেট #সোডিয়াম সাইট্রেট