সর্বশেষ:
ঢাকা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

cosmicculture.science: বিজ্ঞানকে জানতে ও জানাতে
সোমবার ● ৩০ জুলাই ২০১২
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ » আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি
প্রথম পাতা » আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি
১১৩৭ বার পঠিত
সোমবার ● ৩০ জুলাই ২০১২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি

আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরিএই বাংলাদেশের এমন একজন দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর, যিনি সকল ধরনের কুসংস্কার, যুক্তিহীনতা আর অন্ধত্বের বিপক্ষে নিয়ত সংগ্রাম করে গেছেন। পেশায় কৃষক এই মানুষটির ছিল না বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ডিগ্রী। দু’চোখে জ্ঞানের প্রতি অসীম ভালোবাসা আর বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গঠনের এক দুর্নিবার ইচ্ছা নিয়ে নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন কয়েক হাজার বইয়ের এক সর্মদ্ধ সংগ্রহশালা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরিটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই অতীত ইতিহাসকে, যেখানে বরিশালের প্রত্যন্ত গ্রামে একাকী পথচলা নিঃসঙ্গ এক দার্শনিকের কথা রয়েছে। সেই সমৃদ্ধ অতীত সময়ের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে বর্তমান বাস্তবতায় টিকে থাকা আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরির বিস্তারিত .. ..
এথনো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই স্বশিক্ষিত দার্শনিকের গড়ে তোলা লাইব্রেরি এক নজর দেখতে আসে। ছবি: কসমিক কালচার, ২০০৭বরিশাল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে চড়বাড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত লামচড়ি গ্রাম। অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর ধর্মান্ধতা এখনো ঘিরে রেখেছে এই প্রাচীণ জনপদকে। এই জনপদেই বাংলা ১৩০৭ সনের ৩ পৌষ (ইংরেজি ১৯০০) এক কৃষক পরিবারে জন্ম আরজ আলী মাতুব্বরের। শৈশব থেকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠা আরজ আলীর মনে বাসা বেঁধেছিল জগত, জীবন সম্পর্কিত নানা জিজ্ঞাসা। যার যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও উত্থাপিত প্রশ্নের সমৃদ্ধতা তাকে উপস্থাপন করেছে একজন বিস্ময়কর ব্যক্তি হিসেবে। তাঁর দর্শন বিদগ্ধজনকে বিস্মিত করে, তার চেয়েও বেশি বিস্ময়কর হচ্ছে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষিতে তাঁর বিস্ময়কর অর্জন। গ্রামের মক্তবে ‘বাল্যশিক্ষা’ বই পড়ে তার বাল্যশিক্ষার সমাপ্তি ঘটলেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে গড়ে ওঠা একজন সাধারণ মানুষের এ স্বনির্মাণ প্রতিষ্ঠা লাভ বাঙালি মননে আজও বিস্ময় হয়ে রয়েছে। বিজ্ঞান, ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব সবক্ষেত্রেই ছিল তাঁর যৌক্তিক পদচারণা। বরিশাল গণগ্রন্থাগার, ব্রজমোহন কলেজ গ্রন্থাগার এবং অন্যান্য বিদ্বজনের পারিবারিক গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। আর এই বই পড়ার স্পৃহায় তিনি নিজ গ্রামে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন, যা তাকে স্বপ্ন দেখাত যুক্তিহীন কুসংস্কার ও অন্ধত্বের বিপরীতে একটি বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ প্রতিষ্টার। এভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে কয়েক হাজার বইয়ের এক সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা। কিন্তু ১৯৬১ সালে ভয়াবহ বন্যায় তাঁর অধিকাংশ সংগ্রহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরে ১৯৮০ সালে তাঁর ৮০ তম জন্মবার্ষিকীতে তিনি বিগত বিশ বছরের সমূদয় উপার্জন দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’। এজন্য তিনি ব্যবহার করেন নিজ বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে পাঁচ শতাংশ জমি। এর মধ্যে আধা শতাংশের উপর নির্মাণ করেন একতলা গ্রন্থাগার ভবন, পৌণে এক শতাংশে ফুলের বাগান, পৌণে এক শতাংশে সমাধি স্থান, দেড় শতাংশে প্রাঙ্গণ এবং বাকি দেড় শতাংশে ফলের বাগান। জমির চতুর্দিকে বেষ্টিত ছিল পাতাবাহারের সুসজ্জিত ঝোপ। গ্রন্থাগার কক্ষে বইগুলোকে সাজানো হয়েছিল বিজ্ঞান, গণিত, ভূগোল, দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, সাহিত্য প্রভৃতি বিভাগে। পাশের কক্ষে রাকা হয়েছিল ‘স্মৃতিমালা’ শিরোনামে তাঁর আবিষ্কৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নমুনা ও তাঁর ব্যবহৃত জামাকাপড়-তৈজসপত্র প্রভৃতি। আরজ আলী মাতুব্বর তাঁর জীবদ্দশায় গঠন করে যান পরিচালনা কমিটি। ট্রাস্টিবোর্ডের শর্তানুসারে বরিশাল জেলার ডেপুটি কমিশনার পদাধিকার বলে পরিচালনা কমিটির সভাপতি। এছাড়া থাকবে সভাপতির মনোনীত কোন বিদ্যোৎসাহী ও স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এই তিনজন স্থায়ী সদস্যের পাশাপাশি থাকবে গ্রন্থাগারের পাঠকদের মধ্যে থেকে তাদের নির্বাচিত চারজন, গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা বা তাঁর স্ববংশীয়দের মনোনীত অথবা নির্বাচিত আরও চারজন। এই নিয়ে ১১ সদস্যের পরিচালনা কমিটি।
লাইব্রেরির সামনে নিজের হাতে গড়ে তোলা নিজের সমাধিস্থল। ছবি: কসমিক কালচার, ২০০৭ সময়ের সাথে সাথে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আরজ আলী মাতুব্বরের স্মৃতি। ছবি: কসমিক কালচার
কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান দৈনদশা এখন শুধু বিব্রতই করে সচেতন মানুষকে। এই জ্ঞান সাধকের মৃত্যু ঘটেছে বাংলা ১৩৯২ সনের ১ চৈত্র (ইংরেজি ১৯৮৫), আজ থেকে বাইশ বছর আগে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠাকালীন যে পরিচালনা কমিটি তিনি করে গেছেন তাদের কেউ কেউ এখন জীবিত নেই। ফলে আরজ আলী’র মৃত্যু পরবর্তীকালীন কিছু সময় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম টিকে থাকলেও এখন দায়সারার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পর পরিচালনা কমিটির কোন সভা হয়েছিল কিনা তাও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারে না। আর কমিটির জীবিত সদস্যদের মধ্যেও নেই কোন উৎসাহ। আরজ আলীর সন্তানদের মধ্যে এখন জীবিত আছে ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থাভাবে তারাও উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসেনি কোন প্রকার সংস্কারে। এছাড়া ডেপুটি কমিশনার বা তার মনোনীত কোন ব্যক্তিও এগিয়ে আসেনি প্রতিষ্ঠানটি রক্ষার ভূমিকায়। মাঝে মধ্যে ছিঁটে-ফোঁটা যেটুকু সাহায্য পাওয়া যায় তা কোনভাবেই এই প্রতিষ্ঠান বা এই মহতী প্রচেষ্টার স্বার্থে ব্যবহৃত হওয়ার প্রয়াস রাখে না। ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’র টানে দীর্ঘ পথ ছুটে এসে শুধু খুঁজে পাওয়া যায় গ্রন্থাগারিক গোলাম রসুলকে, এই বাইশ বছরে যার প্রাপ্তি শুধুই হতাশা। তার নির্ধারিত নামমাত্র পারিশ্রমিকও জোটেনি গত ষোল বছরের বেশি সময় ধরে। নিজের সংসার টিকিয়ে রাখার ব্যস্ততায় তারও এদিকে নজর দেওয়ার সময় বা আগ্রহে ভাটা পড়েছে। এখন এই প্রতিষ্ঠানটি টিকে আছে শুধু গ্রন্থাগার ভবনের পলেস্তারা খসে পড়া কঙ্কালসার কাঠামোর মধ্যেই। গ্রন্থাগার কক্ষে এখন কয়েক’শ বই থাকলেও পর্যাপ্ত সংরক্ষণের অভাবে এগুলো ব্যবহারের অযোগ্যতাই প্রমাণ করেছে। আর ‘স্মৃতিমালা’ কক্ষে রক্ষিত সামগ্রীর ভগ্নাবশেষ থেকে প্রকৃত বস্তুগুলোর অস্তিত্ব আলাদা করাটাই কঠিন। এছাড়া গ্রন্থাগারের দেয়ালে ঝোলানো তাকে দেওয়া সন্মাননা পত্রে এই ক’বছরে ধুলো-ময়লা ছাড়া আর কিছু যুক্ত হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,‘আরজ আলী মাতুব্বরের পান্ডুলিপিও সংরক্ষিত নেই এখানে। গোলাম রসুল জানিয়েছেন, আইয়ুব হোসেন নামক জনৈক প্রকাশক কয়েক বছর আগে ফেরত দেওয়ার শর্তে তাঁর মূল পান্ডুলিপি ঢাকা নিয়ে গেলেও তা আর ফেরত পাওয়া যায়নি।
সময়ের সাথে সাথে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আরজ আলী মাতুব্বরের স্মৃতি। ছবি: কসমিক কালচার, ২০০৭ নিজ লাইব্রেরিতে বসা আরজ আলী মাতুব্বর। ছবি: সংগৃহীততিনি আরও জানান, আরজ আলী মাতুব্বরের রচনাবলী ঢাকার আজিজ সুপার মার্কেটের প্রকাশক ‘পাঠক সমাবেশ’ প্রকাশ করলেও কোন রয়্যালিটি প্রদান করেনি তাকে। এমনকি আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরিতেও পাঠানো হয়নি কোন সৌজন্য কপি। নানামুখী আশ্বাস আর প্রাপ্তির প্রত্যাশা নিয়ে যারা এখনো ধারণ করে আছেন আরজ আলী মাতুব্বরের চেতনাকে,স্বপ্ন দেখছেন এই সেঁজুতি গ্রন্থাগারের সমৃদ্ধির তারাও যেন ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হয়ে আসছেন বিলুপ্তপ্রায় এই প্রতিষ্ঠানটির মতই। এখন আর আরজ আলী মাতুব্বরের জন্ম কিংবা মৃত্যুবার্ষিকীতে মুখর হয়ে ওঠে না লামচরি গ্রামের ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’ প্রাঙ্গণ। প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতার যুগে আমরা যখন খুঁজে ফিরি আন্তঃনাক্ষত্রিক সভ্যতা তখন হয়তো স্মৃতির আড়ালে চলে যায় আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস। নাকি এখনো আমাদের তাড়িত করে রেপটাইল কমপ্লেক্সের অশুভ তাড়না?



আর্কাইভ

মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার খোঁজেজেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম রঙীন ছবি প্রকাশ
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথম চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স এর জীবনাবসান
মঙ্গলে ইনজেনুইটি’র নতুন সাফল্য
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আফ্রিকায় ৫০ বছর পরে নতুনভাবে হস্তিছুঁচোর দেখা মিলল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা