রবিবার ● ৩১ মে ২০২০
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: মহাকাশ » মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা
খারাপ আবহাওয়ায় ২৭ মে পূর্ব নির্ধারিত ফ্যালকন রকেটের উৎক্ষেপণ পিছিয়ে গেলেও সফলভাবে গত শনিবার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের ৩৯-এ প্যাড থেকে মার্কিন মহাকাশযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের রকেটে করে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার দুজন নভোচারী রবার্ট বেনকেন (৪৯) এবং ডগলাস হার্লে (৫৩) আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাত্রা শুরু করেছেন। কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মহাকাশযানে নভোচারী পাঠানোর ঘটনা এটাই প্রথম। এর মধ্যে দিয়ে মহাকাশ যাত্রার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় শুরু হলো।
গত বুধবার স্পেস এক্স এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির জন্য রকেটের উৎক্ষেপণ থামিয়ে দিতে হয়েছে। তার আগে ঘণ্টা দুয়েক নিজেদের বিশেষ স্পেস স্যুটে ড্রাগন ক্যাপসুলের ভেতরে মহাকাশ যাত্রার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন বেনকেন ও হার্লে। মিশন থমকে গেলেও হাল ছাড়েননি এই দুই নভোচারী। বরং হাসতে হাসতেই তাঁদের রকেট থেকে নেমে আসতে দেখা যায়। দু'জনেই জানান, কাউন্টডাউনের সময়টা বাড়ল ঠিকই, তবে উৎসাহ বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং নতুন উদ্যোমে আরও একটা নতুন দিনের অপেক্ষা করছেন তাঁরা।
স্পেস এক্সের এই মহাকাশ যাত্রাকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ২০১১ সালে স্পেস শাটলগ বাতিল ঘোষণার পর গত প্রায় ১০ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর কোনও প্রযুক্তি ছিল না। সেজন্য রাশিয়ার ওপর ভরসা করতে হত তাদের। রুশ মহাকাশযান সয়ুজ-এ আসন ভাড়া করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে নভোচারীদের পাঠাত নাসা, যা ষাটের দশকে নকশা করা হয়েছিল। এবার আর অন্য দেশের সাহায্য নয়, মার্কিন বেসরকারি গবেষণা সংস্থাই গোটা মিশনের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সাজিয়েছে। পরবর্তী প্রজন্মের মহাকাশযান তৈরির জন্য বেসরকারি সংস্থা স্পেস এক্সের সঙ্গে চুক্তি করেছিল নাসা। তারাই বানিয়েছে ড্রাগন নামে এই মহাকাশযান। অত্যাধুনিক এই মহাকাশযান স্বচালিতভাবে উৎক্ষেপিত হতে ও অবতরণ করতে পারে। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য যানটিতে রয়েছে বিশেষ প্রযুক্তি। এই ঐতিহাসিক মহাকাশ যাত্রা নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডেমো ২’। এটা ডেমোনস্ট্রেশন মিশন যা প্রমাণ করবে স্পেস এক্স শুধু স্পেসক্রাফ্ট বানাতেই দক্ষ নয়, নিরাপদে মহাকাশে মানুষও নিয়ে যেতে পারে। নিয়মিত যাত্রী নিয়ে মহাকাশযাত্রার আগে স্পেস এক্সের ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলটি এর মাধ্যমে নাসার সনদ পাবে। তার আগে এটাই এর শেষ পরীক্ষামূলক যাত্রা।
নাসা প্রধান জিম ব্রিডেনস্টাইন জানিয়েছে, প্রথমবার কোনও বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা মহাকাশ মিশনের এত বড় উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে নভোচারীদের পৌঁছতে সময় লাগবে ১৯ ঘণ্টার মতো। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে ২১০ দিন তাঁরা কাটাতে পারবেন স্পেস স্টেশনে। তবে নভোচারীরা স্পেস স্টেশনে পৌঁছানোর পরেই পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক হবে। বেনকেন (৪৯) ও হার্লে (৫৩) সাবেক মিলিটারি টেস্ট পাইলট হিসেবে ২০০০ সালে নাসায় যোগ দেন। বেনকেনের ২৯ দিন মহাশূন্যে কাটানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে । তাঁরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নভোচারী ক্রিস ক্যাসিডি ও রাশিয়ান নভোচারী অ্যানাতোলি ইভানিশিন এবং ইভান ভাগনারের সঙ্গে যোগ দেবেন। তাঁরা স্পেস স্টেশন ক্রুদের সঙ্গে গবেষণা এবং অন্যান্য কাজ পরিচালনা করার পাশাপাশি ক্রু ড্রাগনের ওপর পরীক্ষা করবেন।
২০০৮ সালে পৃথিবীর কক্ষে ফ্যালকন ১ রকেট পাঠানোর মাধ্যমেই স্পেস এক্স-এর মহাকাশ মিশনের সূচণা। এরপরে ২০১০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন স্পেসক্রাফ্ট মহাকাশে পাঠায়। পরবর্তীতে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে ফ্যালকন ৯ রকেট পৃথিবীর কক্ষপথে গিয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালে প্রথমবার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছায় স্পেস এক্সের ড্রাগন স্পেসক্রাফ্ট। মাঝে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে গত বছর থেকেই স্পেসএক্সের ‘ক্রু ড্রাগন’ ক্যাপসুল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কার্গো আনা-নেওয়ার কাজ করছে এবং এবারে নভোচারী পাঠানোর উদ্যোগ নেয় তারা। স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্পোরেশন বা সংক্ষেপে পরিচিত স্পেস এক্স একটি মার্কিন মহাকাশযান প্রস্তুতকারক এবং মহাকাশ যাতায়াত সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। মহাকাশ ভ্রমন সহজলভ্য এবং মঙ্গল গ্রহে মনুষ্য বসতির স্বপ্ন নিয়ে ইলন মাস্ক ২০০২ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
সূত্র: নাসা, স্পেস এক্স