রবিবার ● ২৯ জুলাই ২০১২
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ » বাংলাদেশের সক্রেটিস
বাংলাদেশের সক্রেটিস
এথেন্স থেকে লামচরি কতদূর? এশিয়া থেকে ইউরোপ! সমুদ্রপথে বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে ভারত মহাসাগর দিয়ে দক্ষিণ আটলান্টিক ও উত্তর আটলান্টিক হয়ে ভূমধ্যসাগরের কোল ঘেঁষে এথেন্স। এশিয়া ও ইউরোপ দুই মহাদেশের মাঝে এথেন্স। এখন থেকে দুই হাজার চারশত সাতাত্তর বছর আগে এই এথেন্সে জন্মগ্রহণ করেন গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস। আর এখন থেকে একশত সাত বছর আগে বাংলাদেশের এক অজ পাড়াগাঁ লামচরি গ্রামে আরজ আলী’র জন্ম। সক্রেটিসকে হেমলক নামক বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল ঈশ্বরের প্রতি তাঁর অন্ধ বিশ্বাসের অভাবের জন্য। আরজ আলীকে সমাজের কুসংস্কার বিষ দেয়া হয়েছিল যা তিনি কন্ঠে ধারণ করে হয়েছিলেন নীলকন্ঠ। একাত্তর বছর বয়সে সক্রেটিসকে হত্যা করে এথেন্স ভারমুক্ত হয়। পচাঁশি বছর বয়সে আরজকে মৃত দেখে লামচরি কি ভারমুক্ত হয়েছিল?
গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস প্রথম জীবনে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। পেলোপনেশিয়ার যুদ্ধে বীরত্ব দেখিয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে এথেন্সের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। অবশেষে সবকিছু ছেড়ে এসে দাঁড়িয়েছিলেন মানুষের মাঝে - মানুষকে প্রশ্ন করতে ও জাগাতে। এথেন্সের তরুণ সমাজ ভীড় জমালো সক্রেটিসের চারিদিকে। তরুণেরা নতুনত্বের পূজারী। কিন্তু সক্রেটিসের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ভাবিয়ে তুলল এথেন্সের শাসককূলকে। কিভাবে নিস্তার পাওয়া যায় এই বুড়ো দার্শনিকের হাত থেকে? অবশেষে অজুহাত পাওয়া গেল। সক্রেটিস ঈশ্বর বিদ্বেষী। অতএব তাকে হত্যা কর।
এথেন্স থেকে লামচরি। মৃত মায়ের ছবি তুলেছিলেন বলে আরজ আলী’র মায়ের জানাজা হলো না। আরজ আলীর’র অন্তরাত্মা থেকে উঠে আসতে লাগল হাজারো প্রশ্ন। প্রশ্ন করে করে নাড়িয়ে দিতে লাগলেন কুসংস্কারের ভিত। এথেন্সের রাস্তায় যেভাবে প্রশ্নের পর প্রশ্ন ঝরে পড়েছিল সক্রেটিসের মুখ থেকে তেমনই প্রশ্ন বাংলাদেশের, বরিশালের, লামচরির রাস্তায় রাস্তায়। বেঁচে থেকে তিনি কিছুই পাননি সমাজ থেকে। বরং আরজ আলী সমাজকে দিয়ে গেছেন অনেক কিছু। পচাঁশি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করলেও তার অনেক আগেই এই সমাজ তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেছিল। নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত তাঁর লাইব্রেরিটির ভগ্নদশা দিয়ে সেটাই বুঝি বলতে চায় সমাজ। সর্বোতভাবে চেষ্টা করা হয়েছে আরজকে মারতে। মরতে মরতে কখন যেন সেই আরজ আলী মাতুব্বর হয়ে যান বাংলাদেশের চারণ দার্শনিক - বাংলাদেশের সক্রেটিস।
লেখক: ড. অনীশ মন্ডল, সহকারী অধ্যাপক, অমৃত লাল দে কলেজ, বরিশাল।