বুধবার ● ১২ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: মহাকাশ » বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
মঙ্গল ও বৃহস্পতির গ্রহের মধ্যবর্তী গ্রহাণু বেল্টে অবস্থিত বামন গ্রহ সেরেস কে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে নাসার ডন মহাকাশযান। অক্টোবর ২০১৮ তে মিশন শেষ করার মুহুর্তে অরবিটারটি সেরেসের পৃষ্টের ৩৫ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে থেকে গ্রহটির রহস্যময় উজ্জ্বল অঞ্চলগুলির তথ্য প্রকাশ করে।
বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন যে উজ্জ্বল অঞ্চলগুলি বেশিরভাগ জমাট সোডিয়াম কার্বনেট, যা সোডিয়াম, কার্বন এবং অক্সিজেনের মিশ্র যৌগ। তারা সম্ভবত তরল অবস্থা থেকে পাতিত হয়ে পৃষ্টে জমা হয়েছে এবং বাষ্পীভবন ঘটার ফলে অত্যন্ত প্রতিফলিত লবণের আস্তরণ অবশিষ্ট রেখেছে। তবে তরলটি কোথা থেকে এসেছে তা এখনও বিজ্ঞানীরা নির্ধারণ করতে পারেনি।
মিশনটি সমাপ্ত হওয়ার প্রাক্কালে সংগৃহীত ডেটা বিশ্লেষণ করে ডনের বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে তরলটি লবণ সমৃদ্ধ জলের গভীর আধার থেকে এসেছে। সেরেসের মাধ্যাকর্ষণ পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা বামন গ্রহের অভ্যন্তরীণ কাঠামো সম্পর্কে আরও জানতে পেরেছেন এবং তারা নির্ধারণ করতে সক্ষম হন যে এই লবণাক্ত জলাধারটি প্রায় ২৫ মাইল (৪০ কিলোমিটার) গভীর এবং কয়েকশ মাইল প্রশস্ত।
বাইরের সৌরজগতের বরফসমৃদ্ধ উপগ্রহের কিছু ক্ষেত্রে যেমন বৃহৎ গ্রহের সাথে মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়া দ্বারা উৎপন্ন অভ্যন্তরীণ উত্তাপ কাজে লাগে, সেরেসের বেলায় তেমটি ঘটে না। তবে প্রায় ৫৭ মাইল প্রশস্ত (৯২ কিলোমিটার) সেরেসের সর্বাধিক বিস্তৃত উজ্জ্বল অঞ্চল অ্যাকিটর ক্র্যাটারকে কেন্দ্র করে নতুন গবেষণা নিশ্চিত করে যে অন্যান্য বরফসমৃদ্ধ মহাজাগতিক বস্তুর মতো সেরেসও একটি জল সমৃদ্ধ স্থান।
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির মিশন পরিচালক মার্ক রেম্যান বলেন, “ডন মহাকাশযান আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি সাফল্য অর্জন করেছিল। এর দীর্ঘ ও কার্যকরী মিশনের শেষ সময়কার এই চমকপ্রদ নতুন আবিষ্কারগুলি আন্তঃগ্রহ অভিযানে দুর্দান্তভাবে সমর্থন যোগাতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
উজ্জ্বল রহস্যের সমাধান
ডন মহাকাশযানটি ২০১৫ সালে সেরেসে পৌঁছার অনেক আগে বিজ্ঞানীরা টেলিস্কোপে উজ্জ্বল অঞ্চলগুলি লক্ষ্য করেছিলেন, তবে তাদের প্রকৃতি তখনো অজানা ছিল। কাছাকাছি কক্ষপথে থেকে ডন অ্যাকিটর ক্র্যাটারের মধ্যে দুটি স্বতন্ত্র, অত্যন্ত প্রতিফলিত অঞ্চলের চিত্রধারণ করেছিল, পরবর্তীকালে অঞ্চল দুটিকে সেরিয়ালিয়া ফ্যাকুলি এবং ভিনালিয়া ফ্যাকুলি নামকরণ করা হয়েছিল। (”ফ্যাকুলি” এর অর্থ উজ্জ্বল অঞ্চল)
বিজ্ঞানীরা জানতেন যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উল্কা প্রায়শই সেরেসের উপরিভাগে আছড়ে পড়ে এবং এর উপরিভাগকে অমসৃণ করে তোলে ও ধ্বংসাবশেষ রেখে যায়। সময়ের সাথে সাথে, এই ধরণের ক্রিয়ার ফলে সেরেসের উজ্জ্বল অঞ্চলগুলি কালো হয়ে যায়, সুতরাং তাদের নতুন আবিষ্কৃত এই উজ্জ্বলতা ইঙ্গিত দেয় যে তারা অপেক্ষকৃত নতুন। ২০১৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ডনের শেষ বর্ধিত মিশনের দৃষ্টি ছিল এই উজ্জ্বল অঞ্চলগুলির উৎস বোঝার এবং কীভাবে উপাদানটি এত নতুন হতে পারে তা পর্যবেক্ষণ করা।
এই গবেষণাটি থেকে জানা যায় উজ্জ্বল অঞ্চলগুলো শুধু বয়সে নতুনই নয়, বরং এদের কোন কোনটি ২০ লক্ষ বছর পুরানো। এছাড়াও ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপের দ্বারা পৃষ্ঠে সোডিয়াম কার্বনেট এর জমা হওয়ার প্রকিয়াটি হয়তো এখনো চলমান। এই উপসংহারটি বিজ্ঞানীদের একটি মূল আবিষ্কার করার উপর নির্ভর করে: সেরিয়ালিয়া ফ্যাকুলিতে ঘনীভূত লবণের যৌগগুলি (সোডিয়াম ক্লোরাইড রাসায়নিকভাবে জল এবং অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের সাথে আবদ্ধ)।
সেরেসের পৃষ্ঠে, কয়েক শত বছরের মধ্যে বহনকৃত লবণ জল দ্রুত আর্দ্রতাশূন্য হয়ে যায়। তবে ডনের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায় সেখানে এখনও জল আছে, তাই তরলগুলি খুব সম্প্রতি পৃষ্ঠে পৌঁছেছে। এটি অ্যাকিটর ক্র্যাটার অঞ্চলের নিচে তরলের উপস্থিতি এবং গভীর অভ্যন্তরভাগ থেকে পদার্থের চলমান স্থানান্তর উভয়েরই প্রমাণ।
তরলদের পৃষ্ঠে পৌঁছানোর দুটি প্রধান পথ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা । ডনের প্রধান তদন্তকারী ক্যারল রেমন্ড জানান, সেরিয়ালিয়া ফ্যাকুলিতে বড় পরিসরে জমা হওয়ার জন্য গলিত পৃষ্ঠের নীচের অংশ থেকে বেশিরভাগ লবণ এসেছে, যা প্রায় ২ কোটি বছর পূর্বে ক্র্যাটার সৃষ্টি হওয়ার সময় প্রভাবের উত্তাপে গলে গিয়েছিল। কয়েক লক্ষ বছর পরে এই প্রভাবের তাপ হ্রাস পেয়েছে, তবে এই প্রভাবে বৃহত্তর ফাটল তৈরি করেছিল যা গভীরে দীর্ঘকালীন আধারে পৌঁছাতে পারে ,ফলে লবণাক্ত তরল পৃষ্ঠের উপর দিয়ে উঠে এসেছে।
সূত্র: সায়েন্স ডেইলি