সোমবার ● ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: মহাকাশ » শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আজ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল শুক্র গ্রহের মেঘের মধ্যে একটি বিরল অণু - ফসফিন - আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। পৃথিবীতে এই গ্যাসটি কেবলমাত্র শিল্পজাত অথবা অক্সিজেন রয়েছে এমন পরিবেশে থাকা ব্যাকটেরিয়া এই গ্যাস নিঃসরণ করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরেই অনুমান করেছিলেন যে শুক্রের উচ্চ মেঘে অণুজীবের আবাসস্থল হতে পারে - তবে সেই অণুজীবের উচ্চ ঘনত্বের অম্লীয় পরিবেশে টিকে থাকার সক্ষমতা থাকা দরকার। ফসফিনের সন্ধান লাভের মধ্যে দিয়ে শুক্র গ্রহে বহির্জাগতিক বায়বীয় প্রাণের অস্তিত্ব প্রমাণিত হতে পারে।
একটি ফসফরাস পরমাণু ও তিনটি হাইড্রোজেনের পরমানুর মিলে ফসফিন গ্যাসের একটি অণু তৈরি হয়। পৃথিবীতে ফসফিন জীবনের সাথে সম্পৃক্ত - অণুজীবদের পেঙ্গুইনের মতো প্রাণীর অন্ত্রে ও অক্সিজেন স্বল্প পরিবেশ যেমন জলাভূমিতে পাওয়া যায়, যারা ফসফিন উৎপন্ন করে থাকে। কিন্তু শুক্র গ্রহে ফসফিন উৎপন্ন হওয়ার কারণ সুনির্দিষ্টভাবে জানা গেলে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাব্য ধারণা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আন্তর্জাতিক গবেষক দলে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের গবেষকরা রয়েছেন। তারা অনুমান করেন যে শুক্রের মেঘে সামান্য ঘনত্বের মধ্যে ফসফিন উপস্থিত রয়েছে, প্রতি একশ কোটিতে প্রায় বিশটি অণু রয়েছে। তাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই পরিমাণগুলি গ্রহের স্বাভাবিক অ-জৈবিক প্রক্রিয়া থেকে আসতে পারে কিনা তা দেখার জন্য তারা হিসেব কষেছেন। উৎস সম্পর্কে তাদের কয়েকটি ধারণার মধ্যে রয়েছে সূর্যের আলো, খনিজগুলির পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে উঠে আসা, আগ্নেয়গিরি বা বজ্রপাত। তবে এগুলির কোনোটিই কাছাকাছি কোথাও পর্যাপ্তভাবে তৈরি হয়নি। এই অ-জৈবিক উৎসগুলি সর্বোচ্চ দশ হাজার ভাগের একভাগ পরিমাণ ফসফিন তৈরি করতে পেরেছে।
“যখন আমরা শুক্রের বর্ণালীতে ফসফিনের প্রথম ইঙ্গিত পেয়েছি, তখন এটি ছিল আমাদের জন্য একটি ধাক্কা!” এমনটাই বলছিলেন যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন গ্রাভস, যিনিই প্রথম জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণে ফসফিনের চিহ্ন খুঁজে পান। গবেষকরা জানান, শুক্রে যে পরিমাণ ফসফিনের অস্তিত্ব সনাক্ত করা গিয়েছে সেই পরিমাণ ফসফিন উৎপন্ন করতে বহির্জাগতিক অণুজীবদের তাদের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা শতকরা দশ ভাগ কাজে লাগাতে হবে। পৃথিবীর ফসফিন উৎপাদনে সক্ষম ব্যাকটেরিয়াগুলো খনিজ বা জৈব বস্তু থেকে ফসফেট গ্রহণ করে, এর সাথে হাইড্রোজেন যুক্ত করে এবং অবশেষ হিসেবে ফসফিনকে নিঃসরণ করে। শুক্রের যেকোনও অনূজীবই হয়তো পৃথিবীর অনূজীব থেকে অনেকটাই আলাদা হবে, তবে তারাও বায়ুমণ্ডলে ফসফিনের উৎস হতে পারে।
গবেষক দলটি বিশ্বাস করে যে তাদের আবিষ্কারটি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ তারা ফসফিন তৈরির জন্য অনেক বিকল্প উপায়ের কথা বলতে পারে, তবে প্রাণের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আরও অনেক বেশি কাজ করা প্রয়োজন। যদিও শুক্রের উচ্চ মেঘের তাপমাত্রা খুবই সহনীয় - ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তবে অত্যন্ত অম্লীয় - প্রায় নব্বই ভাগ সালফিউরিক অ্যাসিড, যা সেখানে প্রাণের টিকে থাকার জন্য বড় সমস্যা।
সূত্র: ইউরোপিয়ান সাউদার্ণ অবজারভেটরি