মঙ্গলবার ● ৩ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: মহাকাশ » ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণগহ্বরের আড়াল থেকে আলোকরশ্মির সন্ধান পেয়েছেন,যা আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের একটি ভবিষ্যদ্বাণী পূরণ করেছে। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে প্রমাণিত হয়েছে যে আলোর গতিকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রভাবিত করতে পারে।
সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড্যান উইলকিনস এবং তার সহকর্মীরা এক্স-রে পর্যবেক্ষণ করেছেন যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে আই জুইকি-১ ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি অতিভরের কৃষ্ণগহ্বর থেকে বেরিয়ে আসছে। এই কৃষ্ণগহ্বরটি আয়তনে সূর্যের থেকেও প্রায় ১০ কোটি গুণ বড়ো। কৃষ্ণগহ্বরে মহাকর্ষীয় বলের মান এত বেশি হয়, ফলে তা মহাবিশ্বের অন্য সব বলকে অতিক্রম করে। তাই কোনো কিছুই কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেতে পারে না। এমনকি আলো বা বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণও নয়। যদিও একটি কৃষ্ণগহ্বর থেকে আলো বের হতে পারে না, তবে এর চারপাশের বিশাল মাধ্যাকর্ষণ উপাদানগুলিকে কয়েক লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম করতে পারে। এটি রেডিও তরঙ্গ এবং এক্স-রে বিচ্ছুরিত করতে পারে। কৃষ্ণগহ্বরের বিশাল মাধ্যাকর্ষণ গ্যাসের কণাগুলি থেকে ইলেকট্রন পৃথক করে প্লাজমা তৈরি করে। এই পৃথকীকৃত ইলেকট্রনগুলিই চুম্বকীয় ক্ষেত্রের সংস্পর্শে এক্স-রে’র জন্ম দেয়।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কৃষ্ণগহ্বরের চারিদিকে আয়নিত গ্যাস এবং ধূলিকণার একটি ঘূর্ণায়মান ডিস্ক তৈরি হয়। কৃষ্ণগহ্বর থেকে নির্গত এক্স-রে পথ পরিবর্তন করে প্রতিফলিত হয় এই ডিস্কে, সেই প্রতিফলিত আলোর বিচ্ছুরণই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। সম্প্রতি বিজ্ঞান জার্নাল ন্যাচারে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীর আশা প্রকাশ করছেন, এই এক্স-রে বিচ্ছুরণের মাধ্যমে ব্ল্যাকহোলের আভ্যন্তরীণ গঠনের বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হবে।
আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা মতে, ঘটনা দিগন্তের (কোন একটি ঘটনার স্থান-কাল এর সীমানা) বাইরে অবস্থিত কোন পর্যবেক্ষকের উপর এর কোন প্রভাব পড়ে না। এখানে মাধ্যাকর্ষণ টান এতই শক্তিশালী হয় যে, ঘটনা দিগন্তের ভেতর থেকে নিক্ষিপ্ত আলো এর বাইরের পর্যবেক্ষকের কাছে পৌঁছুতে পারে না। একইভাবে এর বাইরে থেকে আসা কণার গতিও ধীর হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয় এবং তা দিগন্তকে পুরোপুরি অতিক্রম করে না, বরং সময়ের সাথে-সাথে এটির লোহিত সরণ বাড়তে থাকে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং গবেষণা প্রবন্ধটির সহ-রচয়িতা রজার ব্ল্যান্ডফোর্ড বলেন, “পঞ্চাশ বছর আগে, যখন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কোন চুম্বকীয় ক্ষেত্র একটি কৃষ্ণগহ্বরের কাছাকাছি কিভাবে আচরণ করতে পারে তা নিয়ে অনুমান করা শুরু করেছিলেন, তখন তাদের ধারণা ছিল না যে একদিন আমাদের এটিকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করার কৌশল থাকতে পারে এবং আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব কাজে লাগাতে পারে।”
সূত্র: সিএনএন
২ আগস্ট ২০২১ খ্রি.
বিষয়: #কৃষ্ণগহ্বর #সাধারণ আপেক্ষিকতা