মঙ্গলবার ● ৫ মে ২০২০
প্রথম পাতা » করোনাভাইরাস » বিশেষ সাক্ষাৎকার ভাইরাস নিজে সবচেয়ে বড় বিপদ নয়: কোভিড-১৯ প্রসঙ্গে ইউভ্যাল নোয়া হারারি
বিশেষ সাক্ষাৎকার ভাইরাস নিজে সবচেয়ে বড় বিপদ নয়: কোভিড-১৯ প্রসঙ্গে ইউভ্যাল নোয়া হারারি
একটি সংকট কোন সমাজের জন্য ক্রান্তিলগ্ন হয়ে উঠতে পারে। আমরা এখন কোন পথে যাব? অধ্যাপক ইউভ্যাল নোয়া হারারি, যার প্রতিষ্ঠান বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থাকে ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে, সম্প্রতি ডয়েচে ভেল-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ব্যাখা করেছেন কোভিড-১৯ সম্পর্কে আমাদের বর্তমান সিদ্ধান্তগুলো কীভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করবে।
ইউভ্যাল নোয়া হারারি একজন খ্যাতিমান ইতিহাসবেত্তা, অধ্যাপক এবং লেখক। ২০১৪ সালে প্রকাশিত, বেস্টসেলার খ্যাত ‘স্যাপিয়েন্সঃ এ ব্রিফ হিস্টোরি অব হিউম্যানকাইন্ড’ হারারির একটি কালজয়ী রচনা। এখানে তিনি জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে মানব ইতিহাসের সূচনা থেকে আজকের বিশ্বে পদার্পণের ইতিহাস তুলে ধরেছেন । বইটি ৫০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়া হারারি’র অন্যান্য বইগুলো হলো, হোমো ডিউস: এ ব্রিফ হিস্টোরি অব টুমরো, টুয়েন্টি ওয়ান লেসনস ফর দ্য টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি, দ্য আল্টিমেট এক্সপেরিয়েন্স: ব্যাটেলফিল্ড রিভালেশন্স এন্ড দ্য মেকিং অব মডার্ন ওয়ার কালচার, স্পেশাল ওপারেশনস ইন দ্য এজ অব শিভারি, রেনেসাঁ মিলিটারি মেমোয়ার্স: ওয়ার, হিস্ট্রি অ্যান্ড আইডেন্টিটি ইত্যাদি।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমরা বিভিন্ন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদদের বিজ্ঞানের প্রতি আক্রমণাত্মক হতে দেখেছি, তারা বলেন যে বিজ্ঞানীরা হলো জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন, অভিজাত, নিভৃতচারী। তারা এটাও বলেন জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়গুলো স্রেফ ধাপ্পাবাজি, তাদেরকে বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু সারা বিশ্ব জুড়ে সঙ্কটের এই মুহুর্তে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে মানুষ অন্য যেকোন কিছুর চেয়ে বিজ্ঞানের ওপর বেশি আস্থা রাখছে।
ডয়েচে ভেলের পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আনা কার্থাউস, প্রকাশিত হয়েছে ২২ এপ্রিল ২০২০। ডয়েচে ভেল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় এবং নীতিমালা অনুসরণ করে কসমিক কালচার.সায়েন্স এর জন্য সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করা হলো।
● অধ্যাপক হারারি, আমরা একটি বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে রয়েছি। বিশ্ব কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে সে সম্পর্কে আপনি কী চিন্তা করছেন?
আমি মনে করি, ভাইরাস নিজে সবচেয়ে বড় বিপদ নয়। এই ভাইরাসকে মোকাবেলা করার মতো সমস্ত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত উপকরণ মানবজাতির কাছে রয়েছে। বাস্তবিক অর্থে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমাদের নিজেদের ভেতরকার খারাপ শক্তিগুলো, আমাদের ভেতরে পুষে রাখা নিজস্ব ঘৃণা, লোভ ও অজ্ঞতা। আমি শঙ্কিত যে এই সংকটে মানুষ বৈশ্বিক সংহতি প্রকাশ না করে, ঘৃণা প্রকাশ করছে, এবং অন্যান্য দেশ, জাতি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দোষারোপ করছে।
তবে আমি আশাবাদী যে বৈশ্বিক সংহতি প্রকাশে ঘৃণার পরিবর্তে আমাদের সহানুভূতির বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হব, যা বিপদগ্রস্থ মানুষদের সহায়তায় আমাদের উদারতার বিকাশ ঘটাবে। আর এভাবে আমরা সত্যকে উপলব্ধি করার এবং এই সমস্ত চক্রান্তকারী তত্ত্বগুলিকে বিশ্বাস না করার জন্য আমাদের দক্ষতা বাড়িয়ে তুলতে পারব। আমরা যদি এগুলো করতে পারি তাহলে আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা আমাদের জন্য খুব সহজ হবে।
● আপনি যেমনটি বলেছেন, সর্বগ্রাসী নজরদারি এবং নাগরিক ক্ষমতায়নের মধ্যে যেকোন একটিকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সমস্যায় পড়ে যাই। যদি আমরা সতর্ক না হই, এই বৈশ্বিক মহামারীটি নজরদারির ইতিহাসে চরমমুহুর্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে। কিন্তু যা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন কিছুর সম্পর্কে আমি কীভাবে সতর্ক হতে পারি?
এটি সম্পূর্ণভাবে আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়, অন্তত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। আপনি সুনির্দিষ্ট রাজনীতিবিদদের এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দেন, যারা নীতিমালাগুলি প্রণয়ন করে থাকে। কাজেই রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আপনার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এমনকি এখন যদি নির্বাচন নাও হয়ে থাকে, তারপরেও রাজনীতিবিদরা জনগণের চাপের মুখে সাড়া দিতে বাধ্য।
যদি জনগণ মহামারীর কারণে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং প্রত্যাশা করে কোনও একজন প্রভাবশালী নেতা দায়িত্ব গ্রহণ করবে, তবে কোনও স্বৈরশাসকের পক্ষে ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়টি খুব সহজ হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, কোনও রাজনীতিবিদ সীমা অতিক্রম করে ফেললে জনগণ চাপ প্রয়োগ করে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনাগুলি ঘটতে বাধা দিতে পারে।
● তাহলে কীভাবে আমি জানব কাদের বা কোন বিষয়গুলোর ওপর আস্থা রাখা যাবে?
প্রথমত, আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদি এমন ঘটে রাজনীতিবিদরা আপনার সাথে বছরের পর বছর ধরে মিথ্যাচার করে আসছে, তাহলে এই জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের ওপর আস্থা রাখার খুব একটা কারণ নেই। দ্বিতীয়ত, মানুষ আপনাকে যেসব তত্ত্বের সম্পর্কে বলছে আপনি সে সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারেন। যদি কেউ আপনাকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি এবং বিস্তার সম্পর্কে চক্রান্তকারী তত্ত্বের ব্যাপারে বলতে আসে, তাহলে ওই ব্যক্তিকে ভাইরাস কী এবং কীভাবে এটি রোগ সৃষ্টি করে সে সম্পর্কে আপনার কাছে ব্যাখ্যা করতে বলুন। যদি তার কোন ধারণা না থাকে, অর্থাৎ তাদের সাধারণ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানটুকুও না থাকে, তাহলে ওই লোকটি করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে আপনাকে যাই বলুক না কেন বিশ্বাস করবেন না। এজন্য আপনার জীববিজ্ঞানে পিএইচডি থাকতে হবে না। শুধুমাত্র এসকল বিষয় সম্পর্কে সাধারণ বিজ্ঞানের ধারণা থাকলেই চলবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমরা বিভিন্ন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদদের বিজ্ঞানের প্রতি আক্রমণাত্মক হতে দেখেছি, তারা বলেন যে বিজ্ঞানীরা হলো জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন, অভিজাত, নিভৃতচারী। তারা এটাও বলেন জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়গুলো স্রেফ ধাপ্পাবাজি, তাদেরকে বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু সারা বিশ্ব জুড়ে সঙ্কটের এই মুহুর্তে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে মানুষ অন্য যেকোন কিছুর চেয়ে বিজ্ঞানের ওপর বেশি আস্থা রাখছে।
আমি আশা করি আমরা কেবল এই সংকট চলাকালীনই নয়, বরং সংকট কেটে যাওয়ার পরেও এটি মনে রাখব। যাতে আমরা স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভাইরাস এবং তাদের বিবর্তন তত্ত্ব সম্পর্কে মানসম্মত বিজ্ঞান শিক্ষা দিতে পারি। এবং এছাড়াও বৈশ্বিক মহামারীর বাইরেও বিজ্ঞানীরা যখন অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করবেন, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত বিপর্যয়, আমরা যেন করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে তাদের কথা যেভাবে গুরুত্বের সাথে নিয়েছি ঠিক সেভাবেই তাদের সতর্কবার্তা গ্রহণ করি।
● অনেক দেশে ভাইরাসটি বিস্তার রোধ করার জন্য ডিজিটাল নজরদারি পদ্ধতি প্রয়োগ করছে। এই পদ্ধতিগুলি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
আপনি যখনই নাগরিকদের ওপর নজরদারি বাড়াবেন, তখনই সরকারের ওপরও নজরদারি বাড়ানো উচিত। এই সংকটে বিভিন্ন দেশের সরকার জলের মতো অর্থ ঢালছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২ লক্ষ কোটি ডলার, জার্মানিতে কয়েক হাজার কোটি ইউরো, এবং আরও অনেকেই। একজন নাগরিক হিসাবে আমি জানতে চাই কারা এই সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে এবং অর্থগুলো কোথায় যাচ্ছে? এই অর্থ কী বড় কর্পোরেশনগুলোতে প্রণোদনা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যারা তাদের পরিচালকদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে মহামারীর আগেই সমস্যায় পড়েছিল? অথবা এই অর্থ কী ক্ষুদ্র ব্যবসা, রেস্তোঁরা ও দোকান এবং এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে?
যদি কোনও সরকার আরও বেশি নজরদারি করতে মরিয়া হয়ে ওঠে, তাহলে উভয় দিকেই নজরদারি কার্যকর করতে হবে। এবং যদি সরকার বলে, এতো অনেক জটিল প্রক্রিয়া, আমরা শুধুমাত্র সমস্ত আর্থিক লেনদেন উন্মুক্ত করে দিতে পারি না। তখন আপনি বলবেন: “না এটি মোটেও জটিল নয়। আমি প্রতিদিন কোথায় যাই তা নজর রাখতে আপনি ঠিক যেভাবে বিশাল নজরদারি ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছেন, আমার করের টাকায় আপনি কী করছেন তা দেখার ব্যবস্থা করাও ঠিক সেভাবেই সহজ।
● এটি কী ক্ষমতা বন্টণ অথবা কোন একক ব্যক্তি বা কোন কর্ত„পক্ষের কাছে ক্ষমতা কুক্ষিগত না করার মাধ্যমে কাজ করে?
ঠিক তাই। কোনও করোনভাইরাস রোগীর সংস্পর্শে আসা মানুষদের সতর্ক করার ধারণা নিয়ে মানুষ পরীক্ষা করছে। এটি করার দুটি উপায় রয়েছে: একটি উপায় হল একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ থাকবে, যেখানে প্রত্যেকের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং তারপরে আপনার কাছাকাছি কোভিড-১৯ আক্রান্ত কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলে আপনাকে সতর্ক করে দেওয়া হবে। অন্য পদ্ধতিটি হল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি পারষ্পরিক যোগাযোগ করা, যেখানে প্রত্যেকের তথ্য সংগ্রহের জন্য কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ থাকবে না। যদি আমি কোভিড-১৯ আক্রান্ত কারও কাছাকাছি আসি তাহলে ঐ ব্যক্তি এবং আমার দুজনের কাছেই দুটি ফোন আসবে এবং উভয়ে কথা বলার ফলে আমি সতর্ক হয়ে যাব। কিন্তু কোনও কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ এই সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করছে না এবং সবাইকে ফলোআপ করতে পারছে না।
● চলমান সংকটের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য নজরদারি ব্যবস্থাগুলি আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে, আপনি যাকে নিবিড় নজরদারি বলতে পারেন। যা আমাদের শরীরের স্পর্শকাতর ত্বক ভেদ করেও দেখছে। কীভাবে আমরা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?
আমাদের এ ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আপনি বহিঃর্বিশ্বে কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কার সাথে সাক্ষাৎ করছেন, টেলিভিশনে কী দেখছেন অথবা অনলাইনে কোন কোন ওয়েবসাইটে ঢুকছেন তার সবকিছুই নিবিড় নজরদারিতে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এটি আপনার শরীরের ভেতরে প্রবেশ করছে না। কিন্তু আপনার শরীরের অভ্যন্তরে কী ঘটছে তা এই নিবিড় নজরদারির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছে। আপনার শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের মতো বিষয় দিয়ে শুরু হলেও এটি ধীরে ধীরে আপনার রক্তচাপ, হৃদপিণ্ডের স্পন্দন হার, মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করা শুরু করে। এবং একবার আপনি এটি শুরু করলে মানুষ সম্পর্কে অনেক বেশি জানতে পারবেন, যা আগে জানা সম্ভব ছিল না।
আপনি এমন সর্বগ্রাসী শাসনব্যবস্থা তৈরি করতে পারেন যা এর আগে কখনও ছিল না। আমি কী পড়ছি বা টেলিভিশনে কী দেখি তা যদি আপনি জানতে পারেন তবে এটি আমার শিল্পবোধ, আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, আমার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করবে। তবে এটি এখনও সীমিত পর্যায়ে। এখন ভাবুন যে আপনি আমার শরীরের তাপমাত্রা বা আমার রক্তচাপ এবং আমার হৃদপিণ্ডের স্পন্দন হার সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন ঠিক যেমনটি আমি একটি প্রবন্ধ পড়ি অথবা টেলিভিশনে বা অনলাইনে কোন অনুষ্ঠান দেখি। তাহলে আপনি জানতে পারবেন আমি প্রতি মুহুর্তে কী অনুভব করি। এই ধরনের প্রবণতা খুব সহজেই ভোগান্তিময় সর্বগ্রাসী শাসনব্যবস্থা তৈরি করতে পারে।
এটি অপরিহার্য নয়। আমরা এরকম ঘটনা প্রতিহত করতে পারি। তবে এটি যাতে না ঘটে তার জন্য প্রথমেই আমাদের বিপদ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে হবে, এবং দ্বিতীয়ত, এই সংকটময় অবস্থায় আমরা কী কী মেনে নিচ্ছি সে সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
● এই সঙ্কট কি একবিংশ শতাব্দীর মানবজাতির ভাবমূর্তি সম্পর্কে আপনার ধারণার পুনর্বিন্যাস ঘটাচ্ছে?
আমরা জানি না, কারণ এটি এখন আমাদের গৃহীত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে একটি কর্মহীন শ্রেণিগোষ্ঠী নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা এখন স্বয়ংক্রিয়করণের বিকাশ দেখতে পাই, বর্তমান সংকটে বহুবিধ কাজে মানুষের পরিবর্তে রোবট এবং কম্পিউটারর ব্যবহার বাড়ছে, কারণ মানুষ এখন নিজ নিজ বাড়িতে অন্ত্যরীণ এবং মানুষ আক্রান্ত হতে পারে কিন্তু রোবট কখনোই আক্রান্ত হবে না। আমরা হয়তো দেখতে পাব যে অনেক দেশ বাইরের কোথাও অন্য কারখানার উপর নির্ভরতার পরিবর্তে কিছু শিল্পকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ফলে এই স্বয়ংক্রিয়করণ এবং নেতিবাচক বিশ্বায়ন উভয়ের প্রভাবেই, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যারা সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরশীল, হঠাৎ করেই একটি বিশাল কর্মহীন শ্রেণিগোষ্ঠী তৈরি হবে যারা তাদের কাজ হারাবে, কারণ তাদের কাজগুলো স্বয়ংক্রিয় হয়ে পড়বে বা অন্য কোথাও সরে যাবে।
এবং ধনী দেশগুলিতেও এমনটি ঘটতে পারে। এই সংকট চাকরীর বাজারে ব্যাপক পরিবর্তনের কারণ হিসেবে কাজ করছে। মানুষ বাড়িতে বসে কাজ করছে। মানুষ অনলাইনে কাজ করছে। আমরা যদি সতর্ক না হই, তবে এর ফলে কয়েকটি শিল্পখাতের সংগঠিত শ্রমবাজারে ধ্বস নামবে, অন্তত কিছু শিল্পের ক্ষেত্রে এটি হবে। তবে এটি অনিবার্য নয়। এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা এই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে বা সারা বিশ্বের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার সিদ্ধান্ত নিতে পারি। সরকারগুলো শিল্প ও কর্পোরেশনগুলোকে প্রণোদনা দিচ্ছে। তারা এটিকে শর্তসাপেক্ষে করতে পারে যা তাদের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর হতে পারে। সার্বিকভাবে এই সমস্ত সিদ্ধান্তগুলি আমরা গ্রহণ করতে পারি।
● একজন ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদ এই মুহূর্ত সম্পর্কে কী বলবেন?
আমি মনে করি ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদগণ এটিকে একবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্ন হিসাবে দেখবেন। তবে আমরা কোন দিকে যাব তা আমাদের সিদ্ধান্তগুলির উপর নির্ভর করছে। এখানে কোন কিছুই অনিবার্য নয়।
অনুবাদ: যোয়েল কর্মকার
কৃতজ্ঞতা: আনা কার্থাউস, জার্নালিজম ট্রেইনি, ডয়েচে ভেল এবং জুডিথ হার্টল, বিজ্ঞান বিভাগ প্রধান, ডয়েচে ভেল
ডয়েচে ভেলে প্রকাশিত মূল সাক্ষাৎকারটি দেখুন: https://www.dw.com/en/virus-itself-is-not-the-biggest-danger-says-yuval-noah-harari/a-53195552