সর্বশেষ:
ঢাকা, নভেম্বর ২১, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

cosmicculture.science: বিজ্ঞানকে জানতে ও জানাতে
বৃহস্পতিবার ● ২৬ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » করোনাভাইরাস » করোনাভাইরাস: আমাদের জন্য প্রকৃতির বার্তা
প্রথম পাতা » করোনাভাইরাস » করোনাভাইরাস: আমাদের জন্য প্রকৃতির বার্তা
৬২৯ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২৬ মার্চ ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

করোনাভাইরাস: আমাদের জন্য প্রকৃতির বার্তা

জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসনের মতে করোনভাইরাস মহামারি এবং চলমান জলবায়ু সংকটের মাধ্যমে প্রকৃতি আমাদের একটি বার্তা পাঠাচ্ছে। তিনি বলেন, মানব প্রজাতি প্রাকৃতিক বিশ্বের উপর ক্ষতিকর পরিণতির মাধ্যমে অনেক পীড়ন চাপিয়ে দিচ্ছে এবং একইসাথে তিনি হুঁশিয়ারি করেন, পৃথিবীর যত্ন নিতে ব্যর্থ হওয়া মানে নিজের প্রতিই উদাসীনতা।
শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা আরও বলেছেন, কোভিড -১৯ এর প্রাদুর্ভাব ছিল একটি “স্পষ্ট সতর্কতার চিত্র”, যা বন্যপ্রাণীতে আরও মারাত্মক রোগের অস্তিত্ব ছিল সেকথাই আমাদের জানায় এবং আজকের সভ্যতাকে ‘আগুন নিয়ে খেলা’র মাশুল দিতে হচ্ছে। এটি প্রায়শই মানুষের আচরণ যা মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে দেয়ার কারণ।

পশ্চিম বোর্নিওর কেতাপাং জেলায় বনভূমির গাছ গুড়িয়ে দেওয়ার সময় একটি ওরাংওটাং বুলডোজারের সামনে আকুতি জানাচ্ছে। ছবি: International Animal Rescue
বিশেষজ্ঞদের মতে আরও প্রাদুর্ভাব রোধ করতে বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং কৃষিকাজ, খনন ও আবাসনের জন্য প্রাকৃতিক বিশ্বের ধ্বংস উভয়ই শেষ করতে হবে, কারণ উভয়ই বন্যপ্রাণীকে মানুষের সংস্পর্শে নিয়ে আসে। তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জীবিত পশুর বাজারকে বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল - যা তারা রোগ এবং অবৈধ বৈশ্বিক প্রাণী বাণিজ্যের জন্য একটি “আদর্শ মিশ্রণ পাত্র” বলে অভিহিত করেছেন।
অ্যান্ডারসন বলেন, বর্তমানে অবিলম্বে অগ্রাধিকার হ’ল মানুষকে করোনভাইরাস থেকে রক্ষা করা এবং এর বিস্তার রোধ করা। তবে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া হিসেবে অবশ্যই আবাসন এবং জীব বৈচিত্র্য হ্রাস মোকাবেলা করতে হবে। এর আগে কখনও বন্য ও গৃহপালিত প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে রোগজীবাণু সংক্রমিত হওয়ার এত বেশি সুযোগ ছিল না। উদ্ভুত সমস্ত সংক্রামক রোগের ৭৫% বন্যপ্রাণী থেকেই আসে। বন্য আবাসনের ক্রমাগত ক্ষয় আমাদের দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রাণী এবং উদ্ভিদের কাছে এনে দিয়েছে, ফলে এমন আশ্রিত রোগগুলি মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সুযোগ পায়। তিনি অন্যান্য পরিবেশগত প্রভাব যেমন: অস্ট্রেলিয়ার বনে দাবানল. উষ্ণতা বৃদ্ধির রেকর্ড, ৭০ বছরের মধ্যে কেনিয়ায় ভয়াবহ পঙ্গপাল আক্রমণ উল্লেখ করেন । অ্যান্ডারসনের মতে, দিন শেষে এই সমস্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকৃতি আমাদের একটি বার্তা প্রেরণ করছে। তিনি আরও যোগ করেন, আমাদের প্রাকৃতিক সিস্টেমগুলিতে একই সাথে প্রচুর চাপ রয়েছে এবং আমাদের এর মূল্য দিতে হবে। আমরা পছন্দ করি বা নাই করি, আমরা প্রকৃতির সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত। যখন এই গ্রহের জনসংখ্যা ১০ হাজার কোটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন আমাদের শক্তিশালী মিত্র হিসাবে প্রকৃতিকে সাথে নিয়েই ভবিষ্যতের দিকে যেতে হবে।
মানব সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়ে চলেছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইবোলা, বার্ড ফ্লু, মার্স, সার্স এবং জিকা ভাইরাস এই সমস্ত সংক্রমন প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এসেছে। কোভিড -১৯ এর উত্থান এবং বিস্তার কেবল অনুমানযোগ্য ছিল না, এটি ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল [এই অর্থে যে] বন্যপ্রাণী থেকে আরও একটি ভাইরালের উত্থান হবে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হবে, এমনটি জানাচ্ছিলেন লন্ডনের জুলজিকাল সোসাইটির অধ্যাপক অ্যান্ড্রু কানিংহাম। তবে কানিংহ্যাম ও অন্য বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত, এ সতর্কবাণীকে আমরা পাত্তা দেব না। কানিংহাম বলেছেন, ‘সার্স-এর পরই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ঐ বিপদটা কেটে যাওয়ার পর আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ফের প্রকৃতি ধ্বংসে মেতে উঠেছি। কোভিড-১৯-এর প্রকোপ কমার পরও সম্ভবত তাই করব।

ইন্দোনেশিয়ায় পুড়িয়ে ফেলার আগে হাজারো হিমায়িত প্যাঙ্গোলিন একটি গর্তে শুয়ে আছে। ছবি: Paul Hilton/WCS
২০০২-০৩ সালে সার্স প্রাদুর্ভাবের ওপর পরিচালিত ২০০৭ সালের একটি সমীক্ষা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে: সার্স-কোভ জাতীয় ভাইরাসের বিশাল আধার হলো ঘোড়ারনাল বা হর্সশু বাদুড়, একইসাথে দক্ষিণ চীনের উদ্ভট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের খাওয়ার সংস্কৃতি, যা এক ধরনের টাইম বোমার কাজ করে। কানিংহাম বলেন, বন্যপ্রাণীজনিত অন্যান্য রোগ মানুষের মধ্যে সংক্রমনের হার অনেক বেশি, যেমন দক্ষিণ এশিয়ার বাদুড় থেকে সংক্রামিত ইবোলার হার ৫০% এবং নিপা ভাইরাসের হার ৬০-৭৫%। যদিও আপনি এই মুহুর্তে এটি ভাবতে পারেন না যে আমরা সম্ভবত কোভিড -১৯ এর থেকে কিছুটা ভাগ্যবান। সুতরাং আমি মনে করি আমাদের এটি একটি পরিষ্কার সতর্কতা চিত্র হিসাবে নেওয়া উচিত। কানিংহাম আরও বলেন, এটি প্রায় সর্বদাই মানুষের আচরণের কারণে ঘটে এবং আমরা যদি পরিবর্তিত না হই তবে ভবিষ্যতে এরকম আরও হবে। তিনি বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে জীবন্ত বন্য প্রাণীকে বাজারে নিষ্ঠূরভাবে হত্যা করা হয় - এটি সবচেয়ে সুস্পষ্ট উদাহরণ। চিনের একটি বাজারকেই কোভিড -১৯ এর উত্স বলে মনে করা হয়। এই প্রাণীগুলিকে অনেক দূর থেকে একসাথে খাঁচায় বন্দী করে আনা হয়, এবং এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এদের মধ্যে রোগ সংক্রমণ সংঘটক থাকে। এই ধরনের বাজারে প্রচুর লোক সমাগম ঘটে, যারা প্রাণীদেহ থেকে নিঃসৃত লালা বা তরলের সংস্পর্শে আসে, যা রোগের উত্থানের একটি মিশ্রিত আধার। সংক্রমিত হওয়ার এর থেকে ভালো উপায় আপনি পাবেন না।
চীন এ জাতীয় বাজার নিষিদ্ধ করেছে এবং কানিংহাম বলেন এটি অবশ্যই স্থায়ী হতে হবে। তবে এটি বিশ্বব্যাপী করা দরকার। আফ্রিকার উপ-সাহারা অঞ্চল এবং অন্যান্য এশীয় দেশগুলিতেও প্রচুর বাজার রয়েছে। আধুনিক বিশ্বে ভ্রমণ সহজতর হওয়া এই বিপদ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আজকাল আপনি একদিনের মধ্য আফ্রিকান রেইন ফরেস্টে এবং পরের দিন মধ্য লন্ডনে থাকতে পারেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথের অ্যারন বার্নস্টেইন বলেছেন, প্রাকৃতিক আবাসনগুলি ধ্বংস হওয়ায় বন্যপ্রাণীরা মানুষের কাছাকাছি চলে এসেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনও প্রাণীদের আবাসন পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছিল। ফলে রোগ সংক্রমণ সংঘটকদের (প্যাথোজেন) নতুন বাহকে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। আমাদের কাছে সার্স, মার্স, কোভিড -১৯, এইচআইভি রয়েছে। প্রকৃতি আমাদের এখানে কী বলার চেষ্টা করছে তা আমাদের দেখতে হবে। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে যে আমরা আগুন নিয়ে খেলছি। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নীতি পৃথকীকরণ একটি বিপজ্জনক বিভ্রান্তি। আমাদের স্বাস্থ্য পুরোপুরি জলবায়ু এবং অন্যান্য জীবের উপর নির্ভর করে যা আমরা পৃথিবীতে ভাগ করে নেই।
বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের সঙ্কটাপন্ন জাতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক কনভেনশনের প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল জন স্ক্যানলন বলেন, বিলিয়ন ডলারের অবৈধ বন্যপ্রাণী বাণিজ্য সমস্যার আরেকটি অংশ। আমদানিকারক দেশগুলিকে ফৌজদারী নিষেধাজ্ঞার সমর্থনে একটি নতুন আইনী বাধ্যবাধকতা তৈরি করা উচিত, যাতে বন্যপ্রাণী আমদানিকারকরা প্রমাণ দিতে পারে বণ্যপ্রাণী উত্স দেশটির জাতীয় আইন মেনে প্রাণীদের আনা হয়েছে। আমরা যদি বহুজাতিক বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি তবে আমরা জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র এবং সামাজিক উন্নতি দেখতে পাব। কোভিড -১৯ সংকট হয়তো আমাদেরকে পরিবর্তনের সেই সুযোগ দিতে পারে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান





আর্কাইভ

মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার খোঁজেজেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম রঙীন ছবি প্রকাশ
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথম চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স এর জীবনাবসান
মঙ্গলে ইনজেনুইটি’র নতুন সাফল্য
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আফ্রিকায় ৫০ বছর পরে নতুনভাবে হস্তিছুঁচোর দেখা মিলল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা