সর্বশেষ:
ঢাকা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

cosmicculture.science: বিজ্ঞানকে জানতে ও জানাতে
রবিবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » করোনাভাইরাস » বিশেষ সাক্ষাৎকার ভাইরাস প্রাদুর্ভাব ও বৈশ্বিক মহামারি প্রসঙ্গে ডেভিড কোয়ামেন
প্রথম পাতা » করোনাভাইরাস » বিশেষ সাক্ষাৎকার ভাইরাস প্রাদুর্ভাব ও বৈশ্বিক মহামারি প্রসঙ্গে ডেভিড কোয়ামেন
৩৯৬২ বার পঠিত
রবিবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিশেষ সাক্ষাৎকার ভাইরাস প্রাদুর্ভাব ও বৈশ্বিক মহামারি প্রসঙ্গে ডেভিড কোয়ামেন

বিজ্ঞান ও প্রকৃতি বিষয়ক মার্কিন লেখক ডেভিড কোয়ামেন
বিজ্ঞান ও প্রকৃতি বিষয়ক মার্কিন লেখক ডেভিড কোয়ামেন, যিনি মানুষের দ্বারা পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের ফলে সৃষ্ট প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তারের কারণে সম্ভাব্য মহামারীর ইঙ্গিত করেছিলেন ‘স্পিলওভার: অ্যানিমেল ইনফেকশন অ্যান্ড দ্য নেক্সট প্যানডেমিক’ বইটিতে। সম্প্রতি তিনি অনলাইন পাক্ষিক ‘এমার্জেন্স ম্যাগাজিন’-এ দেওয়া সাক্ষাত্কারে বর্তমান মহামারির অন্তর্নিহিত মূল কারণগুলি সম্পর্কে কথা বলেছেন এবং বাস্তুসংস্থান ও বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের একই ধারায় কীভাবে আমাদের মতো ভাইরাসগুলিও সংযুক্ত হয়েছে তা অনুসন্ধান করেছেন। যেহেতু আমরা বাস্তুসংস্থান ধ্বংস করে ভাইরাসগুলোকে তাদের প্রাকৃতিক হোস্ট থেকে বেরিয়ে পড়তে দিয়েছি, তাই কোভিড-১৯ প্রাকৃতিক বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ককে নতুন করে ভাববার সুযোগ করে দিয়েছে।

এই সঙ্কটটিকে ধ্বংসসাধনের সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। আমাদের হাতে এখনও সময় ও সুযোগ রয়েছে, যখন আমরা আমাদের নিজেদের কাছ থেকে এবং আমাদের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে এই গ্রহে জীবনযাপন পদ্ধতির সার্বিক, বাস্তব ও চূড়ান্ত পরিবর্তনের দাবি করতে পারি।

ডেভিড কোয়ামেন এপর্যন্ত দুইবার বাংলাদেশে এসেছেন, নিপাহ নিপাহ ভাইরাসের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য গবেষকদের সাথে বেশ কিছু সময় কাটিয়েছেন। লেখক ডেভিড কোয়ামেন এবং এমার্জেন্স ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক ইম্মানুয়েল ভন-লী এর সহায়তায় সাক্ষাৎকারটি কসমিক কালচার.সায়েন্স এর জন্য বাংলায় প্রকাশ করা হলো।

 

করোনভাইরাস জুনোটিক ভাইরাস হিসাবে পরিচিত। জুনোটিক ভাইরাস কী এবং কীভাবে এটি চীনের উহানের একটি বাজারে মানুষকে সংক্রামিত করেছিল এই বিষয়গুলো ব্যাখ্যার মাধ্যমে আপনি শুরু করবেন?

হ্যাঁ, জুনোসিস হল প্রাণী সংক্রমণ, যা মানুষে সংক্রমণযোগ্য। এটি ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়া বা অন্য যে কোনও ধরণের সংক্রামক জীবাণু হতে পারে, তবে জুনোটিক ভাইরাস জন্তু-প্রাণী থেকে আসে এবং কোনওভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। যদি এটি শরীরে টিকে থাকে এবং প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে তাহলে রোগ সৃষ্টি ও সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম হয়, তখন আমরা এটিকে একটি জুনোটিক রোগ বলি। আমাদের সংক্রামক রোগের ষাট থেকে সত্তর ভাগই এই ধরনের, এর মধ্যে কিছু রয়েছে পুরাতন মহামারি এবং এখনকার মতো কিছু নতুন মহামারি।
এটি কীভাবে ঘটে? তাহলে শুনুন, বন্য প্রাণী সহ সমস্ত প্রাণী নিজেরাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনন্য বৈশিষ্ট্যের ভাইরাস, ভাইরাসগুলির একটি বিচিত্র বৈচিত্র্য বহন করে। বাস্তবিক আমাদের এখানে কত ধরনের ভাইরাস রয়েছে সে সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। প্রাণী, উদ্ভিদ, ছত্রাক, এই সমস্ত কোষীয় প্রাণী ভাইরাস বহন করে। ভাইরাসগুলো কোষীয় নয়। এগুলির মধ্যে জেনেটিক তথ্য সম্বলিত কেবলমাত্র ছোট্ট ধারক রয়েছে যা অন্য প্রাণীর কোষে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে।
যখন কোনও ভাইরাস জন্তু-প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয় তখন আমরা সেই মুহূর্তটিকে “স্পিলওভার” বলি। একারণে এটি আমার বইয়ের শিরোনাম।
যে প্রাণী থেকে ভাইরাসটি আসে, যার মধ্যে ভাইরাস সুপ্ত অবস্থায় বেঁচে থাকে, আমরা তাকে রিজার্ভার হোস্ট বা প্রাকৃতিক হোস্ট বলে থাকি। আমি সাধারণত একে রিজার্ভার হোস্ট বলি। সুতরাং আপনি চীনে একটি রিজার্ভার হোস্ট পেয়েছেন, সম্ভবত একটি ঘোড়ার নাল বাঁদুড়। এটি এমন একটি করোনভাইরাস বহন করে যা আগে কখনও মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি।
সম্ভবত এই বাঁদুড় জীবিত অবস্থায় ধরে খাঁচায় রাখা হয় এবং চীনের উহান শহরের একটি ওয়েট মার্কেটে অর্থাৎ যেখানে খোলাভাবে জীবিত বা মৃত পশু বিক্রি করা হয় সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি মনে করি আমরা এখন জানি হুয়ানান সামুদ্রিক-খাদ্যের পাইকারি বাজারে এই বাঁদুড়গুলো ছিল, তবে এটি সামুদ্রিক খাদ্যের চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হয়েছিল। আমি এই বাজারগুলোর কয়েকটিতে গিয়েছে এবং দেখেছি সেখানে বন্য প্রাণী বিক্রি করা হয়। সেখানে গৃহপালিত পশু বিক্রি হয়, সামুদ্রিক-খাদ্য বিক্রি হয়। সেখানে খাঁচাগুলোতে জীবন্ত প্রাণী রাখা হয়েছে, কোথাও একটার ওপর আরেকটি ঠাসাঠাসি করে রাখা, প্রায় সব ধরণের বন্য পাখি রয়েছে, পাশাপাশি পোষা হাঁস-মুরগিও। সরীসৃপ, কচ্ছপ, কখনও কখনও সাপ, বাঁদুড়, বনরুই, গন্ধগোকূল, শূকর সবকিছুর যেন একটি মিশ্রিত আধার।
উহান-এ যা ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয় - আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না - তবে যা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে ঘোড়ার নাল বাঁদুড় থেকে একটি ভাইরাস সম্ভবত অন্য কোনও প্রাণীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই প্রাণীর মধ্যে ভাইরাসটি বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তারপরে প্রাণীটি বিক্রি করা হয়েছিল, জবাই করা হয়েছিল, এরকমভাবে এটি কয়েক ডজন লোককে সংক্রামিত করেছে এবং এই মানুষগুলোর ক্ষেত্রেই প্রাথমিক সংস্পর্শের ঘটনা ঘটেছিল। এরপরে তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষে এবং উহানে সামাজিক সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম হয়।
এই সবকিছুই গত বছরের ডিসেম্বরে ঘটছিল এবং নববর্ষের প্রাক্কালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র এবং অন্য কোথাও আমার জানা বৈজ্ঞানিক বিশ্বে এমন কিছু বন্ধুদের কাছে সতর্ক ঘণ্টা বেজে উঠেছিল এবং সতর্কবাণীতে বলা হয়েছিল সেখানে একটি নতুন রোগ রয়েছে, চীনের উহান শহরে ছড়িয়ে পড়া একটি সংক্রামক রোগ, যা ভাইরাস বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল। ভাইরাসটি সম্পর্কে তখনও জানা ছিল না। এর উৎপত্তি কোথায় তাও জানা ছিল না, তবে এটি অনেক বিস্তৃত হতে পারে। এটি ছিল নববর্ষের প্রাক্কালে এবং আমরা সেখান থেকে এটি উন্মোচিত হতে দেখেছি।

যতদূর আমি বুঝতে পারি, ভাইরাসটি ২০১৭ সালে উহান থেকে প্রায় এক হাজার মাইল দূরে ইউন্নানের একটি গুহায় সনাক্ত করা হয়েছিল এবং আপনি এটি সম্পর্কে লিখেছেন। যদি এটি ২০১৭ সালেই সনাক্ত হয়, তাহলে কেন এর সম্পর্কে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?

কারণ অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে অসংখ্য ভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু বিপজ্জনক বলে মনে হয়েছে, আবার বেশ কিছু ছিল নির্দোষ গোছের। সেখানে বিজ্ঞানীরা রয়েছেন যারা এটি করেছেন। তবে সেখানে বিজ্ঞানীরা সংখ্যাঢ অনেক নয়, যথেষ্ট নয়। কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে তাদের জন্য সেখানে পর্যাপ্ত তহবিলের ব্যবস্থা নেই। সম্প্রতি আমি একজন বিজ্ঞানীর সাথে কথা বলেছি যিনি এই সম্পর্কে চেষ্টা করতে ও আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য গ্লোবাল ভাইরোম প্রজেক্ট নামে একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন কোনও নতুন ভাইরাস চিহ্নিত করেন এবং এটি বিপজ্জনক হতে পারে এমন সন্দেহ করার কারণ দেখতে পান, তখন তারা তথ্যটি প্রকাশ করেন এবং মানুষকে এই সম্পর্কে সতর্ক করে দেন। এবং এটি করা হয়েছিল। আমি ধারণা করি ভাইরাসটি সম্ভবত ২০১৫ সালে সনাক্ত করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা নতুন করোনভাইরাসের উল্লেখ করেন। আমরা ইউন্নানের একটি গুহায় ঘোড়ার নাল বাঁদুড়ে ভাইরাসটি খুঁজে পেয়েছি। এটা বিপজ্জনক হতে পারে। এটি ২০০৩ সালে পাওয়া মূল সার্স করোনাভাইরাসের মতো হুবহু নয়। এটি পৃথক হলেও জীনগত ও ঘটনা বিচারে এর বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে এটি করোনাভাইরাস বলে মনে করা হয় - এটি বিপজ্জনক হতে পারে।
কাজেই বিজ্ঞানীরা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছেন। এরপরে কী হয়েছে? মোদ্দকথা, এরপরে কিছুই হয়নি। কী হওয়া উচিত? এই অশানী সঙ্কেত সম্পর্কে পদক্ষেপ গ্রহণে মানুষের জন্য একটি ব্যবস্থা থাকা উচিত। চীনে বন্য পশুর বাজার বন্ধ হওয়া উচিত। বিশ্বজুড়ে প্রস্তুতি থাকা উচিত। এই ভাইরাসটির জিনোম সংগ্রহ করার জন্য এবং দ্রুত টেস্ট কিট তৈরি করার জন্য সার্বজনীনভাবে উৎপাদন এবং তা বিশ্বজুড়ে সহজলভ্য করার তৎপরতা থাকা উচিত। কিন্তু পুরো ব্যয়বহুল প্রক্রিয়াটি এমন একটি বিষয়ের জন্য যা ঘটতেও পারে আবার নাও ঘটতে পারে এবং যেহেতু এটি ব্যয়বহুল তাই নীতি নির্ধারক, নেতৃবৃন্দ, আইনপ্রণেতাগণ এর পেছনে অর্থ খরচ করতে নারাজ।

ঠিক বলেছেন এবং যতদূর আমি বুঝতে পারি একটি ভাইরাস একবার তার রিজার্ভার হোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার পর দ্রুততার সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। আপনি এই সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন?

বিষয়টি সঠিক। বিশেষত করোনভাইরাস এবং ভাইরাসগুলির অন্যান্য কয়েকটি গ্রুপের ক্ষেত্রে এটি সত্য। কিছু ভাইরাস অন্যদের চেয়ে অনেক দ্রুত বিবর্তিত হয়। কিছু লোক এমনকি জানেও না: একটি ভাইরাস জীবিত না মৃত? যাহোক, এটি একটি দার্শনিক এবং শব্দার্থিক আলোচনা, কিন্তু এটির কি বিবর্তন ঘটে? হ্যাঁ, এটি নিজেই প্রতিলিপি তৈরি করে। এটি ডিএনএ নতুবা আরএনএ বহন করে এবং একই জীনগত কোড ব্যবহার করে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে যা বিশ্বের বাকিরাও ব্যবহার করে। কাজেই এই অর্থে, এটি জীবিত না হলেও জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। ভাইরাসগুলি বিবর্তিত হয়, কিছু ভাইরাস অন্যদের চেয়ে অনেক দ্রুত বিবর্তিত হয় এবং তাদের জিনোমের পার্থক্যের কারণে এমনটি ঘটে থাকে।
সকলেই জানেন কিছু ভাইরাস ডিএনএ ডাবল হেলিক্স অণুর গঠনের জিনোম বহন করে যা নির্ভুল ও স্থায়ীভাবে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে। এটি নিজের প্রতিলিপি করার সময় যখন জিনগত কোডের অক্ষরগুলিতে ভুল করে, সেখানে একটি যাচাই পদ্ধতি থাকে যাতে এটি নিজেকে সংশোধন করতে পারে। তাই ডাবল স্ট্র্যান্ড ডিএনএ, ডাবল হেলিক্স ভাইরাস খুব দ্রুত বিকশিত হয় না।
আরও বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস রয়েছে, যার মধ্যে একটি হল সিঙ্গেল স্ট্র্যান্ড আরএনএ ভাইরাস। আরএনএ হল আরেকটি জিনগত অণু, যা ডিএনএ’র সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হলেও কিছুটা আলাদা। এবং একটি সিঙ্গেল স্ট্র্যান্ড নিজের প্রতিরূপ তৈরি করার সময় অসংখ্য ভুল করার প্রবণতা রয়েছে এবং সেই ভুলগুলি সংশোধন করা হয় না। সুতরাং প্রতিলিপি হিসাবে একটি ভাইরাস তার নিজের অপূর্ণ কপি তৈরি করছে। এটি একে অপরের থেকে পৃথক ধরনের পরিবর্তনশীল বংশধর তৈরি করছে। কাজেই আপনি একটি হোস্টের ভিতরে পরিবর্তনশীল পৃথক পৃথক ভাইরাস কণার গোষ্ঠী পেয়েছেন যারা আরও প্রতিলিপি তৈরির সংস্থানগুলির জন্য একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করছে।
যখন আপনার পরিবর্তনশীল ব্যক্তিদের একটি জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা প্রজননের বৈশিষ্ট্যমূলক পরিণতি নিয়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তখন আপনার কী করেন? এটাকে বলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন। ডারউইন ১০১। এবং এটাই করোনভাইরাসগুলির দ্রুত অভিযোজনের দিকে পরিচালিত করে, কারণ তারা সিঙ্গেল স্ট্র্যান্ড আরএনএ ভাইরাস।

জুনোটিক ভাইরাসগুলি প্রায়শই কোনও ক্ষতি না করেই তাদের প্রাণী হোস্টের মধ্যে থাকতে পারে, তবে তারা যখন একটি পরিবর্ধিত হোস্ট, একটি প্রাণী পরিবর্ধিত হোস্ট এবং/বা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তখন তারা রোগ হিসাবে প্রকট হয়ে ওঠে। কেন এরকম ঘটে?

কারণ ভাইরাসটি একটি নতুন পরিবেশে নতুনভাবে সুযোগ পায় এবং যদি এটি ভাগ্যগুনে অভিযোজিত হওয়ার সুযোগ পায় তবে এটি নতুন পরিবেশে সেই নতুন হোস্টে অসংখ্য প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে এবং এটি যদি আরও বিকশিত হয় তবে এটি নতুন হোস্টের একটি থেকে অন্যটিতে সংক্রমণও ঘটাতে পারে।
সম্ভবত পুরানো হোস্টের একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে যা সময়ের সাথে সাথে সেই ভাইরাসের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং সেই ভাইরাসটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে খাপ খাইয়েছে, যাতে পুরানো হোস্টে, রিজার্ভার হোস্টে, এটি প্রতিলিপি তৈরির নিম্ন স্তরে নিয়মিতভাবে থাকতে পারে, তবে দীর্ঘসময় ধরে। এটি এক ধরণের জিনগত কৌশল, সচেতন কৌশল নয়, তবে এটি একটি কৌশল এবং এটি কার্যকর। দীর্ঘসময় ধরে ভাইরাসটি রিজার্ভার হোস্ট গোষ্ঠীতে নিজেকে বজায় রাখে।
তারপরে হঠাৎ করেই এটি একটি নতুন ধরণের সুযোগ পায়, একটি নতুন ধরণের হোস্ট খুঁজে পায় এবং এটি আবিষ্কার করে যে এই নতুন হোস্টে অসংখ্য প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে এবং দেখুন কয়েকটি অভিযোজন, কয়েকটি রূপান্তর, আর অল্প কিছু প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এটি নতুন রিজার্ভার হোস্ট থেকে পৃথক সংখ্যায় একটি, দুটি, তিনটি, চারটি এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে পারে। যদি এরকম হয় তাহলে এটি সুযোগ হাতছাড়া করে না। এর কোন উদ্দেশ্য নেই। এর কেবল সুযোগটি হাতিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। নতুন হোস্ট যদি হোমো সেপিয়েন্স হয়, অর্থাৎ মানুষ হয়ে থাকে, তবে সেই ভাইরাসটি বিবর্তনমূলক সাফল্যের বিশাল সুযোগ লুফে নিয়েছে, কারণ এটি দ্রুত প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে, একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে যেতে পারে, উড়োজাহাজে উড়তে পারে, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে পুরো গ্রহটি ঘুরে আসতে পারে, আরও বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে সফল ও সংখ্যাধিক্য ভাইরাস হয়ে উঠতে পারে। এবং মহামারির ক্ষেত্রে এটিই ঘটে থাকে।
ফ্লু মহামারিতে এমন ঘটে থাকে। এখনও এটি ঘটছে বলে মনে হচ্ছে এবং এইচআইভি-১ গ্রুপ এম নামক একটি প্রাথমিক ভাইরাসের সাথেও এটি ঘটেছিল যা এইডস মহামারী সংঘটিত করে, এর ফলস্বরূপ ১৯০৮ সালে ক্যামেরুনের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে শিম্পাঞ্জি থেকে একজন মানুষের মধ্যে দেওয়া বা নেওয়ায় গ্রহণযোগ্য তিল পরিমাণ ভুলে একক স্পিলওভারটি ঘটে, এসমস্ত বিষয় মূল্যবান আণবিক ক্রিয়া থেকে জানা যায় এবং আমি এখানে ছুটে বেরাচ্ছি, তবে এভাবে অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
সেই ভাইরাসটি একটি শিম্পাঞ্জি থেকে একজন মানুষকে সংক্রামিত করে এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তিন কোটি ত্রিশ লক্ষ লোক মারা গিয়েছে, সংখ্যাটি এখন তিন কোটি চল্লিশ লক্ষ হতে চলেছে, এবং আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। ভাইরাসটি তার কাজে সফল হয়েছে।

তুলনামূলকভাবে নবীন প্রজাতি হিসাবে মানুষ কীভাবে অধিকতর ঝুঁকিতে রয়েছে সেই বিষয়ে আপনি আলাপ করেছেন। আপনি এই সম্পর্কে আরও কিছু কথা বলতে পারেন?

আমরা অধিকতর ঝুঁকিতে রয়েছি কারণ এই ভাইরাসগুলি আমাদের কাছে নতুন। বইটিতে যেমন উল্লেখ করেছি, সবকিছুই কোন একটি স্থান থেকে আসে। আমাদের সংক্রামক রোগগুলির জন্য দায়ী ভাইরাসগুলি সাধারণত অপেক্ষাকৃত ক্ষণজন্মা প্রাণী থেকে আসে, কারণ আমরা তুলনামূলকভাবে নবীন প্রজাতি। অল্প কিছু ভাইরাস রয়েছে যা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মধ্যে রয়েছে, যারা তাদের উত্স থেকে বিবর্তিত হয়েছে এবং ভাইরাসগুলো প্রারম্ভে যে প্রাণী থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এখন তার থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।
উদাহরণ হিসেবে বলতে পারেন গুটিবসন্ত এবং আরেকটি উদাহরণ হতে পারে পোলিও। এটি কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয় যে কেবলমাত্র এই দুটি গুরুতর সংক্রামক রোগ যা আমরা মানুষ থেকে নির্মূল করতে বা প্রায় নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা মানুষের থেকে গুটিবসন্ত নির্মূল করেছি। পৃথিবীতে এখন গুটিবসন্তের কোন ঘটনা নেই। এর বিস্তার ঘটছে না। কেবলমাত্র গুটিকয়েক গবেষণাগারে হিমায়িত অবস্থায় গুটিবসন্তের ভাইরাসের অস্তিত্ব রয়েছে।
আমি সর্বশেষ শুনেছি আমরা মানবগোষ্ঠী থেকে পোলিও প্রায় নির্মূল করেছি, তবে খুব অল্প কিছু জায়গায় যেমন: আফগানিস্তান, আমি মনে করি সম্ভবত নাইজেরিয়া, যেখানে রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি অনেক কঠিন, সেখানে এখনও পোলিওর সামান্য প্রাদুর্ভাব রয়েছে এবং যা পুরোপুরি নির্মূল করা হয়নি, তবে প্রায় হয়েছে বলা যায়। আমরা কেন এটা করতে পারি? তাহলে শুনুন, পোলিও বা গুটিবসন্তের জন্য কোনও প্রাণী হোস্ট নেই। এগুলি এখন সম্পূর্ণরূপে মানুষের ভাইরাস।

ডেভিড কোয়ামেন এর ‘স্পিলওভার: অ্যানিমেল ইনফেকশন অ্যান্ড দ্য নেক্সট প্যানডেমিক’ বই
স্পিলওভার বইয়ে আপনি লিখেছেন কীভাবে জুনোটিক রোগগুলো শুধুমাত্র তাদের হোস্টের বাইরেও বিস্তৃত বাস্তুতন্ত্রের অংশ এবং এর মধ্যে বিদ্যমান। এটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝিয়ে বলবেন?

আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন মানুষের দ্বারা কোন উপায়ে বাস্তুতন্ত্রের বিচ্যুতি ঘটানোর কারণে ভাইরাসগুলো আমাদের সংস্পর্শে এসেছে?

ঠিক ধরেছেন, এটা মনে হচ্ছে আপনি মূল কারণগুলির একটি সম্পর্কে কথা বলছিলেন যা আমরা মোকাবেলা করে চলেছি।

একারণে সর্বোতভাবে এই রোগগুলি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং মহামারিতে রূপ নেয়। এটি মূলত বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত এবং বিবর্তনমূলক একটি প্রক্রিয়া। আমার স্পিলওভার বইটি লেখার পেছনে মূলত এই একটি কারণ ছিল। এই বাস্তুসংস্থান এবং বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান আমার স্বাভাবিক চিন্তা।
আমি সংক্রামক রোগগুলোর প্রতি আগ্রহবোধ করেছিলাম, বিশেষভাবে ইবোলার মতো উত্থান ঘটা ভাইরাসগুলিতে এবং পরে আমি খুঁজে পেলাম এতো দেখছি পুরোটাই বাস্তুসংস্থান এবং বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত। বাস্তুসংস্থানের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, উদ্ভিদ, ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক এবং অন্যান্য জীব আমাদের বিচিত্র বাস্তুতন্ত্রে বাস করে। এদের প্রত্যেকেই ভাইরাস বহন করে। প্রত্যেকেই হয়তো তাদের নিজস্ব অনন্য বৈশিষ্ট্যের ভাইরাস বহন করে। এখানে কত ধরনের ভাইরাস রয়েছে তা বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
যখন আমরা মানুষেরা সেইসব প্রাণী, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য জীবের সংস্পর্শে আসি, তখন আমরা সেই ভাইরাসগুলির কাছে নিজেদেরকে অনাবৃত করে দেই, বিশেষত যখন আমরা খোলাখুলিভাবে তাদের সংস্পর্শে আসি, যখন আমরা বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করি, সেই গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন এবং সেইসব তৃণভূমি যেখানে বিপুল বৈচিত্র্যের সমাহার এবং আমরা মাংসের জন্য প্রাণী হত্যা শুরু করি। আমরা কাঠের জন্য গাছ কাটা শুরু করি। আমরা কাঠের ছাউনি তৈরি করি। আমরা খনি ছাউনি তৈরি করি। কাঠের ছাউনি এবং খনি ছাউনিতে থাকা শ্রমিকদের খাওয়ানোর জন্য আমরা আরও বন্যপ্রাণী এবং ফসল সংগ্রহ করি। অথবা অন্য কোথাও থাকা লোকদের জন্য খাবার হিসেবে আমরা বন্যপ্রাণীদের ধরি এবং জীবিত বা মৃত অবস্থায় তাদেরকে অন্যত্র নিয়ে যাই।
এসব কিছু করে আমরা সেই বন্য বাস্তুসংস্থানগুলি ব্যাহত করি। রূপকার্থে আমরা মূলত ভাইরাসগুলিকে ঝাঁকুনি দিয়ে তাদের প্রাকৃতিক হোস্ট থেকে আলগা করে দিচ্ছি এবং তাদেরকে নতুন কোন হোস্ট পাকড়াও করার সুযোগ করে দিচ্ছি। এবং সেখানে আমরা মানুষরাই রয়েছি। কিছু ক্ষেত্রে, এই ভাইরাসগুলি একটি নতুন বাস্তুসংস্থান অবস্থা, একটি নতুন পরিবেশ, যেমন: মানবদেহকে পাকড়াও করে এবং এরপরেই বিবর্তনের ঘটনা ঘটে। যদি তাদের বিবর্তনের জন্য উচ্চ অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা থাকে তবে সেগুলি আমাদের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং আমাদের রোগ এবং কখনও কখনও আমাদের মহামারি এবং বৈশ্বির মহামারি সৃষ্টি করে।

আমার মনে পড়ে আপনি বলেছিলেন যে একটি ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবে অন্যান্য জীবের সাথে পরষ্পর-সংযুক্ত। বিষয়টি সত্যিই আমাকে ভাবাচ্ছে, কারণ এটি আমাদের চিন্তা করতে বাধ্য করায় যে একটি ভাইরাস কেবল একটি প্রাণীর মধ্যে থাকে না, ধরুন বাঁদুড়, এখানে করোনভাইরাসের ক্ষেত্রে তাকেই দোষী বলে মনে হলেও তা প্রাণের অনেক বিস্তৃত চক্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

ঠিক ধরেছেন, হ্যাঁ আমি বলতে চাইছি তারা অবস্থান এবং বিবর্তনের সক্ষমতা নিয়ে পরিবেশগত জীব। সাধারণত তাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে, তবে এই সমস্ত জীবগুলো মিথস্ক্রিয়ার জটিল জালে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে। আমরা মানুষেরাও সেই বাস্তুতন্ত্রের অংশ। আমি বোঝাতে চাইছি অতীতে আমরা ছিলাম। আমি বলছি না যে মানুষের অনুপস্থিতির কারণে আমাদের ভেবে নিতে হবে এই বন্য বাস্তুসংস্থানগুলি এখন বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।
এই সমস্ত জায়গাগুলিতে বা প্রায় সব জায়গাতেই মানুষ সংখ্যাধিক্য ছিল, তবে খুব কম জনসংখ্যার ঘনত্বে খুব কম প্রভাব নিয়ে তারা কিছুটা হলেও বাস্তুতন্ত্রের বাদবাকি সদস্যদের সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে বাস করত, তবে বাস্তুতন্ত্রকে খুব বেশি ব্যাহত না করে এর থেকে দূরে গিয়ে খাদ্য ও ওষুধের জন্য পশুপালন ও চাষাবাদ করত, এবং অন্য কোথাও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত নয় এমন ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বাস করত।
সুতরাং আধুনিক বিশ্বে যা পরিবর্তিত হয়েছে তা হল আমরা সংখ্যায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছি, আরও বেশি পরষ্পর-সংযুক্ত, আরও বেশি বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ হয়েছি। সবকিছুই বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আমরা গ্রহের সর্বাধিক প্রভাবশালী প্রাণী, সমস্ত সংস্থানের একটি বড় অংশ, সমস্ত শক্তি, সমস্ত প্রোটিন নিজেদের বলে অহংকার করছি এবং নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী করে তুলছি। কিন্তু ওই সকল জীবদের প্রয়োজনীয় আবাসকে নিজেদের লক্ষ্যে পরিণত করছি, যাদের একটি পরিবেশ দরকার, যাদের বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশগত স্থান প্রয়োজন।

আপনি যেমনটি বলেছেন জুনোটিক ভাইরাসগুলি খুব দীর্ঘ সময় ধরে চারপাশে রয়েছে, তবে গত পঞ্চাশ বছরে আমরা সত্যিই খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেকের উত্থান দেখেছি। আপনি বলেছিলেন যে আমরা সবসময় ব্যবধানে বাস করছিলাম, তবে ব্যাঘাত ঘটানোর পর্যায়ে নয়, যা আমরা এখন ঘটাচ্ছি। ফলে অনেকগুলি ভাইরাসের এই উত্থান সরাসরি বিভিন্ন পরিবেশগত উন্নতি ও পরিমাপের বিঘ্ন বাড়ানোর সাথে যুক্ত।

ঠিক তাই এবং যেমনটি আমি আমার বইয়ে বলেছি, প্রাণীদের থেকে ভাইরাসগুলির এই নতুন উত্থানের একটি ছন্দ রয়েছে, যা মানুষকে সংক্রামিত করে। ১৯৬২ সালে বলিভিয়ার মাপুচোতে ইঁদুর থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস, ১৯৬৭ সালে বানরের মধ্যে মারবার্গ ভাইরাস যা উগান্ডা থেকে জার্মানীর মারবার্গ গবেষণাগারে ব্যবহারের জন্য পাঠানো হয়েছিলো। ১৯৭৬ সালে আমরা প্রথমবারের মতো ইবোলা ভাইরাসের উত্থান দেখতে পাই। এইডস, এইচআইভি প্রথমবারের মতো সনাক্ত হয় ১৯৮১ সালে।
এটি চলতে থাকে। ১৯৮০ এর শেষের দিকে কিছু একটা হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে, ১৯৯২ সালে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম, চারটি কৌণিক অঞ্চলে ইঁদুর থেকে ছড়িয়ে পরা হান্টাভাইরাস সম্পর্কে জানতে পেরেছি। ১৯৯৭ সালে হংকংয়ে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ায় বাঁদুড় থেকে নিপা ভাইরাস ছড়িয়ে শূকরে সংক্রমণ করেছিল এবং এরপরে তা মানুষের মধ্যে ছড়ায়, মানুষ মারা যেতে থাকে।
একটানা চলতে থাকে। বাঁদুড়ে ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস দেখা দেয়। ২০১২ সালে আরব উপদ্বীপে বাঁদুড় থেকে আসা আরেকটি করণাভাইরাস মার্স উটে সংক্রমণ ঘটায় এবং পরে উট থেকে মানুষে। ২০১৪ সালে আরেকটি নতুন জিকা ভাইরাসের উত্থান।
এভাবে চলতে চলতে এখন ২০২০ সালে আমরা কোভিড-১৯ এর সাথে রয়েছি।

আমি যখন স্পিলওভার বইটি পড়ছিলাম একটি বিষয় আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়, প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে আপনি যেভাবে উল্লেখ করেছেন যে এই ভাইরাসগুলি বস্তুত একটি বৃহত্তর রূপরেখার অংশ যা আমাদের কাজগুলির প্রতিফলন এবং শুধুমাত্র আমাদের সাথে ঘটছে না। দেখে মনে হচ্ছে, গত কয়েক সপ্তাহে করোনভাইরাস নিয়ে প্রচারিত সকল সংবাদ আমাদের প্রত্যেকের জীবন আর্দ্র করে তুলেছে। কিন্তু মূল কারণগুলো হিসেবে আপনি যা বর্ণনা করেছিলেন সেই বিষয়ে কোন আলোচনাই নজরে আসেনি, বরং আলোচনায় ইঙ্গিত করা হচ্ছে এই ঘটনায় আমাদের সক্রিয় কোন ভূমিকা নেই বরং আমরা ঘটনার শিকার।

আপনি ঠিকই বলেছেন, এ নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়নি। লোকজন শঙ্কিত। লোকজন ভীত। মানুষজন একে অপরের প্রতি ক্ষুব্ধ। কিছু লোক চাইনিজদের ওপর ক্ষুব্ধ। অন্যান্যরা জনস্বাস্থ্য পরিসেবাগুলিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। আর আমরা সবাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর ক্ষুব্ধ।
আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় নেই। বলতে পারেন মূল কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ঘরে পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইথ বা বাতাস নেই। ইম্মানুয়েল, আপনার মতো লোকেদের আন্তরিকতায় আমি এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি, যার কাছে যতটুকু পারছি। বাস্তবে এই বিষয়গুলি একটি রূপরেখার অংশ, আমি শুধু রূপরেখাটুকু বর্ণনা করেছি। আর হ্যাঁ, আমাদের এই বক্ররেখাটিকে সমতল করতে হবে। আমাদের এই মহামারি মোকাবেলা করা প্রয়োজন। আমাদের জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন যা এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনবে। এবং এখনো কিছু পথ খোলা রয়েছে।
আমাদের সম্পদ দরকার। আমাদের টাকা দরকার। প্রয়োজনীয় সবকিছু করার জন্য আমাদের ইচ্ছাশক্তি দরকার। এবং আমি আশা করি আমরা করব। আমি মনে করি অবশেষে আমরা এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনব এবং এই আগুনকে ছাইচাপা দিতে পারব। তবে আমি আগেই যেমন বলেছি, যখন আমরা এই বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণে আনব, যখন আমরা আগুন নিভিয়ে দিতে পারব, আমাদের পাঁচ মিনিট উদযাপন করা উচিত এবং তারপরে পরবর্তীটির বিষয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা এবং পরিকল্পনা করা উচিত, কারণ এরপরে আরেকটি থাকবে।

জানুয়ারিতে টাইমস পত্রিকায় আপনার উপসম্পাদকীয়তে স্বল্পমেয়াদী প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছিল - যখন এটি বড়জোর চীন এবং অন্যান্য কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, বা সবেমাত্র হানা দিয়েছিল এবং তারপরে এলো দীর্ঘমেয়াদী মারাত্মক চ্যালেঞ্জ। এই অংশে আপনি দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জগুলোর একটি তালিকা করেছিলেন যা আমরা এখন মোকাবেলা করছি। এই অর্থে যে, আমাদের সময়ে অনেক বড় পরিবেশগত সমস্যা ছিল, পাশাপাশি দারিদ্র্য এবং বৈষম্য সম্পর্কিত বিষয়গুলিও ছিল।

সুতরাং এই ভাইরাস আমাদের আন্তঃসম্পর্ক এবং ঝুঁকির বিষয়ে মানুষকে জাগিয়ে দিতে পারে, এমনটা মনে হতে পারে এটি একটি স্মরণীয় চ্যালেঞ্জ যার মধ্যে দিয়ে আমরা পরবর্তী একটি সম্ভাব্য বড় চ্যালঞ্জকে মোকাবেলা করতে যাচ্ছি। যা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আসতে পারে বা বছরের পর বছর ধরে আসতেই থাকবে।
এটি একটি স্মরণীয় চ্যালেঞ্জ এবং বৈজ্ঞানিক ও জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা আমি সেই উপসম্পাদকীয়তে তালিকাভুক্ত করেছি এবং যে কেউ তালিকায় যোগ করতে পারে: আরও ভাইরাল খুঁজে বের করা যাতে আমরা জানতে পারি সেখানে কী রয়েছে এবং আমাদের মধ্যে কী আসতে পারে, আরও ভালভাবে কারণ নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা যাতে আমরা খুব দ্রুত টেস্ট কিট, উন্নত জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা, আরও সংস্থান, আমাদের হাসপাতালগুলোর আরও বাড়তি ক্ষমতা, ইত্যাদি তৈরি করতে পারি। সঙ্গত কারণে, আপনি বিমান পরিবহন কতটুকু হ্রাস করতে চান এবং কোন মাত্রায় আপনি এক দেশ এবং অন্য দেশের মধ্যে বিশেষজ্ঞদের গমনাগমন করতে দিতে চান তা নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতামূলক পরিকল্পনাগুলি। এর সবগুলোই।
তবে এর বাইরেও - যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এই সমস্ত জিনিস এবং সত্যই এই ধরণের হুমকির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া দরকার - এগুলি সবই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সেখানে পূর্ব-প্রস্তুতিও নেওয়া দরকার। এবং এটি আরও বেশি জটিল কারণ এটি প্রাকৃতিক বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্কের পুনরায় কল্পনা করা, পুনর্বিবেচনা করা এবং পুনরায় অনুভব করার সাথে জড়িত।
আমাদের যেসব কাজের মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রের ব্যাঘাত ঘটে, এগুলোই ভাইরাসগুলিকে নাড়িয়ে মুক্ত করে দেয়, যা তাদেরকে আমাদের মধ্যে এবং বিশ্বজুড়ে আমরা যে সকল সংস্থানগুলোকে আশ্রয় হিসেবে রেখেছি সেগুলিতে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। এটি কেবল চাইনিজরাই নয় যারা বাদুড় বা বনরুই খেতে চায়। আমরা তাদের কারও ওপর জোর করে প্রভাব খাটাতে পারি না।
চারপাশে নজর দেওয়ার যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। একটি সেলফোন বা ল্যাপটপ রয়েছে এমন যে কেউ কোলটান (কলাম্বাইট-ট্যানটালাইট)-এর মতো খনিজগুলির খদ্দের, কারণ কম্পিউটার এবং সেলফোনে ট্যানটালাম ক্যাপাসিটার তৈরির জন্য কোলটান অত্যাবশ্যকীয়। কোলটান আসে কোথা থেকে? কোলটানের অন্যতম একটি উত্স গণ-প্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল, যেখানে খনি শিবিরগুলোতে পৃথিবীর বুক থেকে কোলটান আহরণ চলছে, খনি শ্রমিকেরা সেখানে কাজ করছে, যার খুব কাছেই সমৃদ্ধ গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি, যেখানে পূর্বাঞ্চলীয় নিম্নভূমির গরিলা এবং বাঁদুড়ের সকল প্রজাতি এবং অন্যান্য প্রাণী রয়েছে ।
খনি শিবিরের লোকেরা কী খাচ্ছে? ধরে নিলাম সম্ভবত তারা বুশমিট (বন্যপ্রাণীর মাংস, যা গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনাঞ্চলের মানুষ খাবারের জন্য শিকার করে) খাচ্ছে। সুতরাং, আমরা যদি সেলফোন কিনে থাকি তবে আমরা কোলটানও কিনে থাকি এবং এভাবেই আমরা ধ্বংসের জালকে আরও শক্ত করে বিছিয়ে দিচ্ছি। আমরা ভাইরাসগুলিকে নিজেদের দিকে টানছি, হয়তো সুস্পষ্টভাবে এবং প্রত্যক্ষভাবে চীনের বাঁদুড়ের খদ্দেরদের মতো নয়, কিন্তু তারপরেও আমরা এর অংশ। আমরা দায়বদ্ধতার সেই জটিল জালের অংশ এবং সেইজন্য আমাদের সমস্ত ভোক্তা পছন্দ নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন, আমরা যেসব পছন্দ করি: আমরা যা কিনে থাকি, যা খাই, কতটা ভ্রমণ করি, আমাদের কতজন সন্তান রয়েছে, সব বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন।
তাদের সম্পর্কে আমাদের আরও গভীরভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন, কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের উপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য নয়, সেখানে অন্যান্য প্রকট সমস্যা ওৎ পেতে রয়েছে, তবে জুনোটিক রোগগুলির এই সমস্যাটিও মোকাবেলা করতে হবে এবং আমাদের আধিপত্য ও বিলাসিতা এই সমস্ত কিছুকে আমাদের আরও কাছে নিয়ে আসে।

এরকমটিও মনে হয়, রোগটি একটি বাঁদুড় থেকে থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং সেই প্রাণীগুলিকে খাওয়ার কারণে বা নিজেরাই নিজেদের খাদ্য হওয়ায় অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে রোগটি স্থানান্তরিত হয়েছে। কিন্তু এটি যদি নাও ঘটে থাকে, রোগটি যদি বছর কয়েক আগে কোনও গুহায় আবিষ্কার হয় তবে এটি বিস্তারের অন্য উপায় খুঁজে পেত।

এটি সম্ভবত বেরিয়ে যাওয়ার আরও একটি উপায় খুঁজে পেয়েছে, হ্যাঁ। আমি সেই বিশেষ গুহায় যাইনি। আমার বন্ধু পিটার দাশাক, যিনি নিউইয়র্কের ইকোহেলথ অ্যালায়েন্সের সভাপতি, এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন, তিনি ২০১৭ সালের ওই গবেষণাপত্রের একজন সহ-রচয়িতা। তিনি হয়তো সেই গুহায় গিয়েছিলেন, বা উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি থেকে তার কয়েকজন সহকর্মী গবেষণার জন্য, বাঁদুড়ের নমুনা সংগ্রহ, আসলেই সেখানে কি রয়েছে তা খুঁজে দেখার জন্য সেই গুহায় গিয়েছিল।
মনুষ্যজাতি সার্বজনীনভাবে সেই গুহার কাছাকাছি যেতে বাধ্য। চীনের জনসংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে না তবুও তা অনেক এবং তারা সম্পদের ব্যবহার করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে না, তবে সেখানে সম্পদের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। এবং বিশ্ব জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এমনকি ইউন্নানের একটি গুহায় বাদুড়েরা রয়েছে - এটি কেবল সময়ের ব্যাপার আমরা তাদের দরজায় কড়া নাড়তে যাচ্ছি, তাদের যা আছে তাও আমরা চাচ্ছি।

নিউইয়র্কের ইকোহেলথ অ্যালায়েন্সের সভাপতি পিটার দাশাক ও গবেষকদের একটি দল চীনের ইউন্নানের গুহায় সার্স-করোনাভাইরাসের উৎস সন্থানে। ছবি কৃতজ্ঞতা: পিটার দাশাক

আপনি বইটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে অনেক কথা বলেছেন এবং যা পুরো বিষয়টিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম একটি প্রভাবক।

হ্যাঁ. আমি বলতে চাইছি রুমের মধ্যে ৮০০ পাউন্ড ওজনের গরিলা, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি বোঝায়। এটি কেবল জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয় নয়। এটি অবশ্যই মোজাম্বিক বা অ্যাঙ্গোলাতে যাদের আটটি শিশু রয়েছে এমন কিছু পিতামাতাদের প্রতি জোর খাটানোর বিষয় নয়। “ওহ, আপনি জেনে থাকবেন, আফ্রিকায় এখনও অনেক মানুষ রয়েছে যাদের আটজন করে সন্তান রয়েছে।” তবে এই আটটি শিশু যারা হয়তো মোজাম্বিকের কোন গ্রামে বাস করছে, তাদের মধ্যে হয়তো মাত্র পাঁচজন সাবালক হওয়া পর্যন্ত টিকে থাকে এবং এই পাঁচজন তাদের জীবনকালে পৃথিবীর সম্পদ খুব কমই ব্যবহার করবে, সম্ভবত খুব বেশি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কম সম্পদ ব্যবহার, কোনও আমেরিকান শিশু সাবালক পর্যন্ত বেড়ে উঠতে অনেক বেশি সম্পদ ব্যবহার করে।
কাজেই এটি কেবল নিছক জনসংখ্যা নয়। মানুষের প্রভাবকে হিসেব করা যায়: জনসংখ্যা গুণন ব্যবহারের পরিমাণ সমান প্রভাব এবং একারণে আমরা সকলেই সেই দায়বদ্ধতার একটি অংশের অংশীদার।

আপনার বইয়ের শেষের দিকে একটি লাইন ছিল যা আমাকে সত্যিই নাড়া দিয়েছে। আপনি বাস্তবতা সম্পর্কে বলছেন যে মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিজেই একটি প্রাদুর্ভাব এবং সমস্ত প্রাদুর্ভাবের পরিসমাপ্তি রয়েছে।

হ্যাঁ, আমি যখন নির্দিষ্ট বনজ কীটপতঙ্গের সংখ্যার উপমা দেই যা বিশাল প্রাচুর্যে বিভক্ত, জনসংখ্যার প্রাদুর্ভাব। এই অর্থে, প্রাদুর্ভাব শব্দটি কোনও রোগের পরিভাষা নয়, তবে এটি এমন একটি পরিভাষা যা বাস্তুবিদরা কোনও কীটপতঙ্গের এই হঠাৎ, বিশাল জনসংখ্যার বিস্ফোরণগুলো বর্ণনা করতে ব্যবহার করেন, সাধারণত লেপিডোপ্টেরা, মথ - উদাহরণস্বরূপ বলা যায় টেন্ট শুয়োপোকা। টেন্ট শুয়োপোকা হলো একটি বিশেষ ধরণের মথের লার্ভা রূপ, তারা জঙ্গলে থাকে, মন্টানার বোজেম্যানের আমি যেখানে আছি তার আশেপাশের বনাঞ্চল জুড়ে বাস করে এবং তারা বছরের পর বছর একদম অদৃশ্য থাকে। তারা খুব কম সংখ্যায় রয়েছে।
তারপরে হঠাৎ করেই কোন একটি ভাল বছর বা একটানা ভালো দুই বছর। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ঠিক ঠাক, শীতটাও খুব অসহনীয় নয় এবং তখন তারা সম্ভবত ২০০ টি করে ডিম দেয়। একেকটি স্ত্রী ২০০টি ডিম দেয়। হয়তো সে এক মৌসুমে দুইবার ডিম দেয়। সম্ভবত তাদের বেশিরভাগই বেঁচে থাকতে পারে, তাই হঠাৎ করেই টেন্ট শুয়োপোকার সংখ্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং আপনি সমস্ত গাছগুলোর অঙ্গ ও শাখাপ্রশাখায় এই রেশমী শুয়োপোকা দেখতে পাবেন, আর তারা গাছের সব পাতা খেয়ে সাবাড় করে ফেলছে। গাছগুলো দেখে মনে হবে যেন শীতের মধ্যভাগ চলছে। এদের বেশিরভাগই শক্ত কাঠওয়ালা গাছ এবং তাদের সব পাতা নিঃশেষ। আপনি তাদের চিবানোর কুড়কুড়, কুড়কুড়, কুড়কুড় শব্দ শুনতে পাবেন এবং শুঁয়োপোকারা মলত্যাগ করছে, বৃষ্টিতে তা ধুয়ে আপনার শহরে ভেসে আসছে এবং পাতাগুলো সব ঝরে যাচ্ছে। লোকেরা বলাবলি করে, “কিছু কীটনাশক পাওয়া যায় কিনা এবং এটাকে থামাই এবং তারা আমাদের সমস্ত গাছগুলোকে শেষ করার আগেই তাদেরকে বিষ প্রয়োগ করি।”
এগুলি নিয়ে কাজ করা আধুনিক মানুষেরা, কীটতত্ত্ববিদরা যারা জঙ্গলের এই ধরনের কীটপতঙ্গের প্রকোপ নিয়ে গবেষণা করে, তারা বলে, “শুনুন, এটা নিয়ে চিন্তিত হবেন না। নিশ্চিন্ত থাকুন, কারণ এই সংখ্যা বিলীন হয়ে যাবে, যদি এই বছরে না হয়, তাহলে আগামী বছর হবে, কারণ এমনটা সর্বদা ঘটে থাকে। এবং তারা ঠিক বলেছেন। এদের সংখ্যা বিলীন হয় এবং এরা প্রায় জাদুকরীভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। তবে বিলীন হয়ে যাওয়ার কারণ কী? আমরা এখন জানি যে এটি ভাইরাস মড়ক।
তারা নিম্ম স্থানীয় স্তরে তাদের নিজস্ব প্রকৃতির ভাইরাস বহন করে, কিন্তু যখন তাদের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হয় এবং তারা অধিক ঘনত্বের মধ্যে বাস করে, তখন তারা একজন থেকে অন্যজনকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দেয় এবং একপর্যায়ে ভাইরাস তাদেরকে শেষ করে ফেলে এবং এরপরে ভাইরাস তাদের মধ্যে থেকে ব্যাপকহারে বাইরে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য শুয়োপোকাদের সংক্রামিত করে এবং খুব শীঘ্রই তাদের সংখ্যা বিলীন হয়ে যায় এবং তারা অদৃশ্য হয়ে যায়।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রেগ ডয়ার নামের এক নামকরা বিজ্ঞানীর সাথে আমার দেখা হয়েছিল, যিনি এই বিষয়ে গবেষণা করছিলেন এবং আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, “সবার প্রথমে আমাকে বলুন আমরা মানুষেরা কি প্রাদুর্ভাবের পর্যায়ে রয়েছি?” এবং তিনি উত্তর করেছিলেন “হ্যাঁ, আমরা রয়েছি।” অন্যান্য বাস্তুবিদগণও তার কথায় সহমত পোষণ করেন।
আমরা টেন্ট শুঁয়োপোকার মতো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছি না, তবে একশো বছর আগে পৃথিবীতে প্রায় দুইশত কোটি মানুষ ছিল, এখন সংখ্যাটি প্রায় আটশত কোটি, কাজেই একশ বছরে আমরা আমাদের জনসংখ্যা চারগুণ করে ফেলেছি। এটি তো জনসংখ্যা বিস্ফোরণ! এটি একটি প্রাদুর্ভাব এবং আমরা এভাবে পৃথিবীর সম্পদের ব্যবহার করছি। আমাদের জনসংখ্যা এখনও বাড়ছে। একারণেই তিনি বলেছিলেন, “হ্যাঁ, আমরা একটি জনসংখ্যা প্রাদুর্ভাব।”
আমি বললাম, “ঠিক আছে, আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন। এর অর্থ কি দাড়ায় আমরা অনিবার্য ভাবে বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে? একটি ভাইরাস মড়ক পৃথিবী থেকে নব্বই বা নিরানব্বই ভাগ মানুষকে বিলীন করে দিতে পারে যেমনটি টেন্ট শুয়োপোকার বেলায় ঘটেছে?”
তিনি আমার প্রশ্নটি শুনে খুব মনোযোগ দিয়ে ভাবলেন এবং তিনি তার গাণিতিক মডেলগুলির দিকে নজর দিলেন। এবং তারপরে তিনি আমাকে উত্তর করলেন, “না, আমি মনে করি এটি অনিবার্য ঘটনা নয়।”
কেন অনিবার্য নয়? কারণ আমাদের আচরণের ভিন্নতা বলে কিছু বিষয় আছে এবং এটি তার মডেলগুলির মধ্যে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ধ্রুবক। যদি কীটপতঙ্গের গোষ্ঠীর আচরণের কোন ধরনের ভিন্নধর্মীতা থাকে, কিছুটা নমনীয়তা থাকে, তাহলে বিপদ এড়াতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, ফলে তার মডেল অনুসারে গোষ্ঠী বিলীন হয়ে যায় না। এটি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে যেমন অল্প সংখ্যক অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং প্রতিলিপি তৈরি হওয়ায় মারা যায়, তবে খুব দ্রুততার সাথে নয় এবং তাদের কিছু সংখ্যক মারা যাওয়ার পরে অপরিহার্যভাবেই জঙ্গলের সাথে সহাবস্থান রেখে তারা পুনরায় বাসযোগ্য অবস্থানে ফিরে আসে।
তিনি বলেছিলেন, “যেহেতু আমাদের মানুষের আচরণগত বৈচিত্র্য রয়েছে তাই আমি মনে করি না আমরা বিলীন হয়ে যাব। আমি মনে করি বৈশ্বিক মহামারির হুমকির প্রতি আমাদের ধীরে ধীরে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
মানুষের মধ্যে আচরণের ভিন্নতা অর্থ অবশ্যই আমরা ভাবতে পারি, আমরা আলাদাভাবে ব্যবস্থা নিতে পারি, বৈজ্ঞানিক সমাধান, ভ্যাকসিন এবং চিকিত্সা ব্যবস্থা করতে পারি। আমরা আমাদের আচরণ শোধরাতে পারি। আমরা ভোগ করা কমাতে পারি। আমরা আইন প্রনয়ণ করতে পারি। আমরা পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারি। আমরা এগুলো করতে পারি। মূলত তিনি আমাকে যা বলছিলেন, তার কাছ থেকে পাওয়া সুসংবাদটি ছিল মানুষ টেন্ট শুয়োপোকার চেয়ে দক্ষ, কাজেই আমরা ভাগ্যের পরিহাসের পাত্র নই, অবধারিতভাবে আমাদের বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বইটিতে আপনি বলেছেন যে জুনোটিক রোগগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যেমনটি সেন্ট ফ্রান্সিস করেছিলেন, আমরা মানুষরা প্রাকৃতিক বিশ্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বস্তুত ‘প্রাকৃতিক বিশ্ব’ বলে কিছু নেই, এটি একটি মন্দ এবং কৃত্রিম অংশ। শুধু বিশ্ব রয়ছে। মানবজাতি সেই বিশ্বের অংশ।” যেমনটি সমস্ত ভাইরাস এবং বাহকরাও সেই বিশ্বেরই অংশ।
দেখে মনে হচ্ছে এমন একটি অসাধারণ সুযোগ রয়েছে যে আমরা এই প্রাদুর্ভাবের মধ্য দিয়ে কীভাবে সংক্রমণ কাটিয়ে উঠে মানব জনসংখ্যা হিসাবে সহাবস্থান করতে পারি। এই সম্পর্কে আপনার অনুভূতি শুনতে আমি সত্যিই আগ্রহী, আপনি কোনটা বেছে নেবেন? আপনি কতটা আশাবাদী?

এখানে একটি সুযোগ রয়েছে। আমি স্বভাবজাত আশাবাদী নই, তবে যখন আশার সঞ্চার হয় আমি অনমনীয় হয়ে যাই। আমি মনে করি যে আশা কোন মানসিক অবস্থা নয়। আশা ইচ্ছের একটি কাজ। এবং তাই আমি মনে করি আমাদের আশাবাদী হওয়ার পেছনে একটি দায়িত্ব থাকতে পারে যে আমরা এমন কিছু করতে পারি যার কারণে চূড়ান্ত ফলাফল অন্তত খারাপ হয় না, অন্যথায় খারাপ হতে পারত।
এই কুৎসিত মহামারিটি নিয়ে আমরা বর্তমানে রয়েছি, এই ভীতিকর বিষয়টি অনেক অনেক মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে, কিন্তু এর মধ্যেই মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে সংস্কৃতি ও অর্থনীতি বিঘ্নিত হচ্ছে, এটি একটি ভয়াবহ বিষয়। শিকাগোর প্রাক্তন মেয়র রাহম ইমানুয়েল, যখন তিনি বিল ক্লিনটনের প্রধান কর্মী ছিলেন, যখন তিনি ক্লিনটনের হয়ে কাজ করছিলেন, তখন তিনি বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন “কোনও সঙ্কটকে আমাদের ধ্বংসসাধনের সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।”
এর মধ্যে বোঝার বিষয় রয়েছে এবং আমি মনে করি এটি এখানেও ঘটেছে। আমাদের এই সঙ্কটটিকে ধ্বংসসাধনের সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। আমাদের হাতে এখনও সময় ও সুযোগ রয়েছে, যখন আমরা আমাদের নিজেদের কাছ থেকে এবং আমাদের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে এই গ্রহে জীবনযাপন পদ্ধতির সার্বিক, বাস্তব ও চূড়ান্ত পরিবর্তনের দাবি করতে পারি।

অনুবাদ: যোয়েল কর্মকার





আর্কাইভ

মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার খোঁজেজেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম রঙীন ছবি প্রকাশ
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথম চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স এর জীবনাবসান
মঙ্গলে ইনজেনুইটি’র নতুন সাফল্য
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আফ্রিকায় ৫০ বছর পরে নতুনভাবে হস্তিছুঁচোর দেখা মিলল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা