সর্বশেষ:
ঢাকা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

cosmicculture.science: বিজ্ঞানকে জানতে ও জানাতে
সোমবার ● ৬ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান নিবন্ধ: বিশ্ব ভাবনা » আমরা কি শুনছি? নাকি এখনো শুনছি না? - লিও ই. অসবোর্ন
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান নিবন্ধ: বিশ্ব ভাবনা » আমরা কি শুনছি? নাকি এখনো শুনছি না? - লিও ই. অসবোর্ন
৮১৮ বার পঠিত
সোমবার ● ৬ এপ্রিল ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

আমরা কি শুনছি? নাকি এখনো শুনছি না? - লিও ই. অসবোর্ন

ভাস্কর্য মহাপ্রস্থান

এখানে আমরা … আমাদের ৮০০ কোটি মানুষ সবাই….. একসাথে রয়েছি। বিশ্বমাতা তার প্রতিটি সন্তানকে নিজ ঘরে নিভৃতে বসে একথাই ভাবতে বলেছে - আমরা তাকে আঘাত করার জন্য কী কী করেছি!

১৯৬০ এর মাঝামাঝি আমি বোস্টনের নিউ ইংল্যান্ড স্কুল অফ আর্ট থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করি এবং উডস্টক চলে যাবার পরপরই আমি পড়াশুনা থেকে ছিটকে পড়ি এবং অনেকটা হিপ্পির জীবন শুরু করি। তারপরে আমি মেইনে চলে গেলাম, খুব গভীর জঙ্গলে যেখানে আমি পৃথিবীকে খুব আপন করে অনুভব করতে পারছিলাম, পাইন গাছগুলোর মধ্যেই ছিল আমার আরাধনা স্থান। আমি একজন চিত্রশিল্পী ছিলাম।

৭০ এর দশকের মাঝামাঝি আমি কাঠের খোদাইয়ের প্রতি আকর্ষন খুঁজে পেয়েছিলাম এবং কাঠের পাখি খোদাই করতে শুরু করি। আমি কয়েকটি তিমিও করেছি, যাদের ওপরে বিশ্বের প্রতিপালক হিসাবে মানুষের মুখাবয়ব ছিল। এভাবেই প্রকৃতি ও স্বর্গীয় বাসভূমির সাথে আমাদের যে নাজুক ভারসাম্য রয়েছে এবং কীভাবে আমরা পৃথিবী ও তার জীবিত সমস্ত কিছুর সাথে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং উদারতায় আচরণ করি না তা প্রকাশ করার জন্য চিত্রশিল্প ব্যবহারে আমার আগ্রহ জন্মেছিল।

১৯৮৬ সালে ভয়াবহ ভালদেজ অয়েল স্পিল বা সাগরে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে এবং এথেকে আমি সৃষ্টি করেছিলাম “এখনো শুনছি না” চিত্রকর্মটি। এটি একজন জাপানি মাস্টার কারভার-এর দৃষ্টিগোচর হয়, তিনি এটি দুই বছরের জন্য জাদুঘর প্রদর্শনীতে জাপানে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন এবং তারপরে এটি বোস্টনে বিজ্ঞানের জাদুঘরে জনসাধারণের প্রদর্শনীতে এসেছিল। কয়েকটি প্রদর্শনীর পরে এটি বেশ কয়েক বছর ধরে আমার স্টুডিওতে রাখা ছিল। তারপরে মেক্সিকো উপসাগরে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে এবং আমি আমার দীর্ঘকালীন বন্ধু, কিউরেটর ডেভিড জে ওয়াগনারকে ফোন করি। আমি তাকে বলেছিলাম যে আমি মনে করি আমরা যারা এখনো এখনও শুনছি না তাদের এই ভাস্কর্যটি আরও একবার বিশ্বের সামনে প্রদর্শন করার সময় হয়েছিল! ডেভিড তাই বব ব্যাটম্যান এবং কেন্ট উলবার্গকে ডেকেছিল, যারা দুজনেই চিত্রশিল্প নিয়ে কাজ করেছে যা ভালদেজ তেল ছড়িয়ে পড়া এবং পৃথিবীর অন্যান্য বিপর্যয়ের পরিবেশগত সমস্যাগুলি চিত্রিত করেছিল। এই বিষয়গুলি মানুষের লোভ থেকে জেড়ে ওঠে এবং আমরা যে সকলেই অনিশ্চিত অবস্থানে ছিলাম তা বুঝতে পারছি না। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ডেভিড “পরিবেশগত প্রভাব” চিত্রকর্মটি তৈরি করে, যা অনেকগুলি জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে বেরিয়েছিল।

এই মুহুর্তে আমি ম্যাপেল গাছের গাঁটে একটি কিলডিয়ার পাখি খোদাই করেছিলাম যেখানে পাখিটি একটি ভাঙা ডানা নিয়ে ঝাপাটাচ্ছিল, এবং যেখানে দেখা যাবে একজন অনুপ্রবেশকারী তাদের ডিম ভর্তি বাসা ফেলে চলে যাচ্ছে। তখন নানাবিধ পাখি এবং অন্যান্য জীবন্ত প্রাণীদের জীবনচক্রে মানুষ কীভাবে হস্তক্ষেপ করছে তা বোঝানোর জন্য আমি মাটিতে একটি কালো কার্বন ফুটপ্রিন্ট রাখার ধারণাটি পেয়েছিলাম। এই খোদাই কাজটি “পরিবেশগত প্রভাব” এর জন্য আমার কাজের সাথে অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং সেই সময় প্রথম প্রদর্শনীটি শুরুর আগে আমি মৌমাছি সম্পর্কে আরেকটি চিত্রকর্ম তৈরি করেছিলাম যা ছিল আমার অন্তরের খুব কাছের ও প্রিয়। আমি অনন্তের একটি মবিয়াস বৃত্ত তৈরি করেছি এবং এর পৃষ্ঠের সাথে একটি মৌচাকের নকশাকে একটি মৌমাছিসহ সংযুক্ত করে রেখেছি। এটির নাম মো-বিই-আস (MO-BEE-US)।

আমার বেশিরভাগ চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্য এই প্রাকৃতিক বিশ্বের সৌন্দর্য এবং সেই বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে। যাহোক, মাঝে মাঝে এই প্রাণশক্তির প্রতি আমার উদ্বেগ আমাকে এমন শিল্পকর্ম তৈরি করতে উত্সাহ জোগায় যার পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে, যেমন: আমার কচ্ছপের ভাস্কর্যটি, যার নাম মহাপ্রস্থান বা দ্য গ্রেট এস্কেপ। এই খোদাই কাজটি একটি সামুদ্রিক কচ্ছপকে দেখায়, যার খোলসে মাছ ধরা বা চিংড়ি জালের ছায়া রয়েছে। এই কচ্ছপটি “জাল থেকে পালাচ্ছে”, অতঃপর মহাপ্রস্থান।

এটি এখন স্বীকৃত যে আমরা একটি বিশ্বব্যাপি জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছি! গ্রহের এই উষ্ণায়নের ফলে অনেক বিপর্যয় ঘটছে। যা ঘটছে তার বিশদে যাওয়ার কোনো দরকার নেই, কারণ আমরা যখন হিমবাহগুলো গলাতে, দ্বীপপুঞ্জগুলো পানিতে তলিয়ে যেতে এবং বহু বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে দেখি তখন এটি সবচেয়ে সুস্পষ্ট!

আমাদের সবাইকে অবশ্যই এই পৃথিবীর উত্তম সেবক হতে হবে। আমি একজন শিল্পী হিসাবে অনুভব করি, আমাদের শিল্পের মাধ্যমে, আমরা কী করছি এবং কীভাবে আমরা এই উন্মাদ আত্মঘাতী পদযাত্রাকে অসচেতনতা থেকে থামাতে পারি তার একটি দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বকে দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পী হিসাবে আমার বিচিত্র কাজের ক্ষেত্রে আমাকে প্রায়শই “স্বপ্নদ্রষ্টা বন্যজীবনের শিল্পী” হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে ভেবে আমি গর্ব বোধ করি।

এখন, এই সময়ে এবং বিশ্বব্যাপী সংক্রামক করোনাভাইরাস সহ পরিবেশগত প্রভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ঘুরে ফিরছে। সম্ভবত সময় এসেছে জন লেননের গানের কথাগুলো বিবেচনা করার, “কল্পনা কর সমস্ত মানুষকে, শান্তিতে আছে।” আসুন এই গানটিকে আমাদের গ্রহের সংগীত করে তুলি!

আমার সমস্ত শিল্পের সাথে, প্রতিটি কাজের জন্য আমি একটি কবিতা রচনা করি এবং এই লেখায় উল্লিখিত প্রতিটি কাজের সাথে কবিতাগুলো অন্তর্ভুক্ত করে শেষ করব।

মহাপ্রস্থানমহাপ্রস্থান
নিঃশব্দ, প্যাচানো, বিভৎস জালে
বন্ধন মুছে গেছে,
এটা বোনা হয়েছিল আমার আত্মাকে কেড়ে নিতে
আর উদ্যত ছিল লোভের তাড়নায়।
বাণিজ্যিক খপ্পরে
আঁকড়ে ধরেছে শক্ত হাতে।
তাদের নির্মম প্রহসনগুলোয়
আমি দেখতে শিখেছি।
আর পরিশুদ্ধ করেছে আমার অন্তর,
আসন্ন মৃত্যুর ছায়ায় আমি পালিয়ে গেলাম।


ভাস্কর্য: এখনও শুনছে নাএখনও শুনছে না
প্রযুক্তির অনধিকার প্রবেশে
লুন্ঠিত আজ
সহচরীর নৃত্য
আর বসন্তের সাজ।

মৃতের নাচন মিলিয়ে গেলেও
বছর কুড়ি তার অনুরণন
তবুও এখনো যায়নি শোনা
আমাদের রোদন।

কর্নপাত কর
তোমার গায়ক পাখি
কয়লা খনিতে।

কর্নপাত কর
এখনি সময়
তোমার আলোটি জ্বালতে।
________________________________________________________

লিও ই. অসবোর্নলিও ই. অসবোর্ন: ভাস্কর, চিত্রশিল্পী ও কবি। তিনি বর্তমানে ওয়াশিংটনে থাকেন, যেখানে তিনি ভাস্কর্য, চিত্রকলা এবং কবিতার মাধ্যমে তাকে ঘিরে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সন্ধান করে চলেছেন। অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত এবং আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় ভাস্করদের মধ্যে লিও উপাদান এবং গঠন নিয়ে পরীক্ষা করে নিয়মিতভাবে তার কাজগুলোকে নতুনভাবে নিরূপণ করছেন।

লেখাটি কসমিককালচার.সায়েন্স-এর জন্য লিও ই. অসবোর্নের সম্মতিক্রমে Millennium Alliance for Humanity and the Biosphere থেকে বাংলায় অনুবাদিত।





বিজ্ঞান নিবন্ধ: বিশ্ব ভাবনা এর আরও খবর

সহস্রাব্দের অর্জন : আন্তঃপ্রজাতি সংস্কৃতির বিকাশ   - আসিফ সহস্রাব্দের অর্জন : আন্তঃপ্রজাতি সংস্কৃতির বিকাশ - আসিফ

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার খোঁজেজেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম রঙীন ছবি প্রকাশ
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথম চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স এর জীবনাবসান
মঙ্গলে ইনজেনুইটি’র নতুন সাফল্য
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আফ্রিকায় ৫০ বছর পরে নতুনভাবে হস্তিছুঁচোর দেখা মিলল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা