বুধবার ● ১৮ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » অলৌকিক নয় লৌকিক » কোভিড-১৯ থানকুনি পাতা খেয়ে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি’র গুজব
কোভিড-১৯ থানকুনি পাতা খেয়ে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি’র গুজব
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ বা আভিধানিকভাবে ‘প্যানডামিক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও জনসাধারণ উৎকন্ঠিত। তবে এই উৎকন্ঠার মাঝেও বিভিন্নরকম বিভ্রান্তকর তথ্য বা গুজবের ডালপালা মেলতে শোনা যায়। এরকমই একটি রটনা: থানকুনি পাতা খেলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের কোথাও কোথাও গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, তিনটি থানকুনিপাতা খেলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে ফজরের নামাজের আগেই এ পাতা খেতে হবে। এ গুজব খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গতকাল দিবাগত রাত দুইটা থেকে ফজর নামাজের আগপর্যন্ত পাতা খাওয়ার হিড়িক চলে। কোথাও কোথাও থানকুনিপাতা খেতে মাইকযোগে আহ্বান জানানো হয়। খবর: প্রথম আলো, ১৮ মার্চ ২০২০
খবরে আরও প্রকাশ: “নাম প্রকাশ না করার শর্তে আগৈলঝাড়া উপজেলার ছয়গ্রাম গ্রামের এক হাজি দম্পতি জানান, ফোন পেয়ে রাত তিনটায় পাতা তুলে খেয়েছেন। কে এই আদেশ দিয়েছে, জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, এক পীর স্বপ্নে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির এই তরিকা পেয়েছেন বলে শুনেছেন। ওই পীর সবাইকে পাতা খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পীরের নাম জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, তা তো জিজ্ঞাসা করেননি।”
থানকুনি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Centella Asiatica। এটি আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার অনেক প্রাচীন। কারণ থানকুনি পাতার রস বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য অতুলনীয়। খাদ্য উপায়ে তাই এটি সরাসরি গ্রহণ করা হয়। মূলত পেটের পীড়ায় যেমন: আমাশয় বা হজম ক্ষমতার উন্নতির জন্য এটি বিশেষ উপকারী। পাশাপাশি আলসার এবং বিভিন্ন চর্মরোগেও এটি ভালো কাজ করে। তবে এই পাতার রস খেলে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিরাময় হতে পারে এটি নিতান্তই একটি গুজব এবং এদেশের তথাকথিত পীর-ঝাড়ফুঁক-তাবিজ-কবজ গোষ্ঠীর একটি ভণ্ড অপপ্রচার। যা রোগ নিরাময়ের কোন ভূমিকা রাখে না। তবে ক্ষেত্রবিশেষ সাধারণ মানুষ ঠকিয়ে পীর-ঝাড়ফুঁক-তাবিজ-কবজ গোষ্ঠী লাভবান হয়।
উপরন্তু যত্রতত্র জন্মানো থানকুনি পাতা যথাযথভাবে পরিষ্কার করে বা ধুয়ে খাওয়া না হলে (যেহেতু এটি স্যাঁতস্যাতে পরিবেশে, কম আলোকাচ্ছন্ন জায়গায় ভালো জন্মে) এটি রোগ নিরাময়ের বদলে রোগের কারণ হতে পারে।
অধিকন্তু ভারতের কোথাও কোথাও গো-মূত্র পানেরও হিরিক পড়েছে, তাদের দাবি গো-মূত্র পান করলে করোনা ভাইরাস দূরীভূত হবে। কোন রোগের প্রতিষেধক তৈরি করতে প্রয়োজন দীর্ঘ গবেষণা, যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা; স্বপ্নে পাওয়া প্রতিষেধক কিংবা ভণ্ড ধর্মীয় নেতাদের মনগড়া ব্যাখ্যা নিতান্তই বুজরুকি ও ভণ্ডামি। তাই গুজবে কান না দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব। সচেতন হোন, সুস্থ্য থাকুন!
কসমিক কালচার
১৮ মার্চ ২০২০