মঙ্গলবার ● ৩ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » অলৌকিক নয় লৌকিক » ২০১৬ সালের ১০ জুন থেকে ১৭ জুন পুরো পৃথিবী অন্ধকারে ঢেকে যাওয়ার গুজব
২০১৬ সালের ১০ জুন থেকে ১৭ জুন পুরো পৃথিবী অন্ধকারে ঢেকে যাওয়ার গুজব
আগামী ১০ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত টানা আট দিনের জন্য পৃথিবী সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢেকে থাকবে। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্প যেভাবে মানুষকে তাড়া করে ফিরছে সেই মুহুর্তে এই খবরটি পিলে চমকানোর জন্য যথেষ্টই। গত কয়েকদিন ধরেই ফেসবুক সহ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং গুটিকয়েক অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে এরকম একটি বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র বরাত দিয়ে সংবাদটিতে প্রকাশ করা হয় সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড সাইন্টিস্ট প্রেস কনফারেন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে নাসা থেকে এই ঘোষণাটি দেয়া হয়েছে। ১০ লক্ষ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার এমন বিরল ঘটনা ঘটবে বলে জানিয়েছে নাসা। ২০১৬ সালের ১০ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত টানা ৮দিনের জন্য গোটা দুনিয়া থাকবে সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন। সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয় নাসা’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রথম দুই তিন রাতের পর অন্ধকার মানুষের কাছে বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়াবে। তারপর শুরু হবে নানারকম ব্যাধির প্রকোপ। সারাবিশ্বে একনাগাড়ে বিদ্যুতের সঙ্কট দেখা দিবে। বিভিন্ন ধরনের লাইট বিক্রি বেড়ে যাবে। চতুর্থ দিন থেকে পঞ্চম দিনের মধ্যে বাড়বে আত্মহত্যার ঘটনা। একটানা রাত দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে মানুষ একসময় আত্মহত্যা করা শুরু করবে।
সাধারণ মানুষের পক্ষে এই ধরনের সংবাদের সত্যতা যাচাই করার থেকে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানোই তুলনামূলক সহজ। তাই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়াটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। মূলত বিজ্ঞানীদের কোন পূর্বাভাস বা যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই পৃথিবী সম্পূর্ণরূপে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ার মতো কোন দুর্যোগ ঘটা নিছকই বিভ্রান্তি।
পৃথিবীতে একমাত্র পূর্ণ সূর্যগ্রহণের কারণে ক্ষণকালের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলে সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্থ হতে পারে। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে চাঁদ যখন উপবৃত্তাকার কক্ষপথের এমন স্থানে অবস্থান করে (অমবস্যার সময়) যখন চাঁদ ও পৃথিবীর ব্যবধান অপেক্ষাকৃত কম থাকে, তখন চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আড়াল করে রাখে। এছাড়া নরওয়ে সহ কয়েকটি স্থানে (মেরুবৃত্তে) কুমেরু অঞ্চলে শীতকালে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত পুরো কুমেরু অঞ্চল সূর্য উদয় হয়না বলে অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে। পৃথিবীর অক্ষরেখা তার সমতলের সাথে ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকার কারণে কখনো সুমেরু সূর্যের দিকে হেলে থাকে আবার কখনো কুমেরু সূর্যের দিকে হেলে থাকে। একারণে ঐ স্থানগুলোতে একটি সাময়িক সময়ে সূর্যের উপস্থিতি দেখা যায় না। এই দু’টো কারণ ছাড়া কোন মহাজাগতিক বিপর্যয়ে বা অন্য কোন কারণে পৃথিবীতে অন্ধকারাচ্ছন্নতা বিরাজ করার কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি এই মুহুর্তে নেই। যদি অদূর ভবিষ্যতে এই ধরনের কোন বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা থেকেও থাকে তবে তা বিজ্ঞানী মহলসহ সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলবে। তাই সাম্প্রতিক ফেসবুক সহ কিছু সাধারণ মিডিয়ায় পৃথিবী অন্ধকারে ঢেকে যাওয়া নিয়ে প্রকাশিত সকল সংবাদ বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন এবং শুধুমাত্র গুজব।
এই জাতীয় সংবাদগুলো ব্যক্তিপর্যায়ে পরিচালিত কিছু ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে মানুষকে আকৃষ্ট করা ও জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্যই প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বিভ্রান্তির বীজ কতোটা দ্রুত সাধারণের মধ্যে গেঁথে যেতে পারে সেই ধারণা নিউজ এডিটরদের মোটেই নেই। আমরা জানি সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সময় বিভিন্ন কুসংস্কারে বিশ্বাস করে মানুষ নানারকম বিধি-নিষেধ-নিয়ম পালন করে, সেখানে টানা আট দিন সূর্য আলো দিবে না এই ধরনের গুজব মানুষকে চরমভাবেই বিভ্রান্ত করবে। এই ব্যাপারে কসমিক কালচার এর পক্ষ থেকে freshnewsbd.com নামের একটি পোর্টাল এডিটরের সাথে ফোনে কথা হয়, যিনি তার পোর্টালে বেশ ফলাও করে এই গুজবের সংবাদটি ছেপেছেন। তিনি এই সংবাদের সূত্র নিয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। আমতা আমতা করে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন মাত্র। মূলত দোষ পোর্টাল এডিটরের নয়। মানুষের শিক্ষা-জ্ঞান বিমুখতা আমাদের অন্ধের মতো বিভিন্ন গুজব আর কুসংস্কারে বিশ্বাস করাতে বাধ্য করে। তাই নিজেদের সহজাত যুক্তিবোধ আর বিচার-বিশ্লেষণের অক্ষমতা ধীরে ধীরে আমাদের কুসংস্কারে আচ্ছন্ন করছে।