মঙ্গলবার ● ১৯ মে ২০১৫
প্রথম পাতা » অলৌকিক নয় লৌকিক » জ্বিন তাড়াতে পাঁঠা বলি
জ্বিন তাড়াতে পাঁঠা বলি
দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদদাতা সোহেল হাফিজ (বরগুনা অঞ্চল) এর রিপোর্টে বরগুনার তালতলী উপজেলার পিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতাধিক ছাত্রীর গত এক মাসে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা মনে করছেন ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের সীমানায় ঢুকলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কেউ হাসে। কেউ কাঁদে। কেউ কেউ আবার নিজের চুল টেনে ছেঁড়ে। কেউ মূর্ছা যায়। আবার কেউ অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে। এ সময় আক্রান্ত কাউকে ধরতে গেলে সে খামচি কিংবা কামড় দেয়। তখন তার গায়ে এত শক্তি থাকে যে চার-পাঁচজন মিলেও আটকে রাখা যায় না।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে জিনের আছড় বলে মনে করছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ভীতি কাজ করায় স্থানীয় কবিরাজের পরামর্শে গত ১৭ মে, ২০১৫ তারিখ রবিবার রাতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পাঁঠা বলি দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে এও উল্লেখ করা হয় পাঁঠা বলিসহ নানা ফিকির-তদবিরের পরও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এই ধরনের ঘটনা যে প্রথমবারের মতো ঘটেছে তা নয়, বরং বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলেরই মানুষদের মধ্যে (গ্রামাঞ্চল বা শহরাঞ্চল বলে আলাদা করা যাবে না) জ্বিন-ভূত-প্রেত এই জাতীয় বিশ্বাস ও ধারণা বদ্ধমূল রয়েছে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবার-সমাজ থেকেই এই বিশ্বাস আমাদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই দানা বাঁধতে শুরু করে। তাই পরবর্তীতে অনেক ব্যাখ্যাতীত বিষয়কে আমরা যুক্তি তর্কের মধ্যে না নিয়ে জ্বিন-ভূতের প্রভাব বলেই কাটাতে চেষ্টা করি। বাস্তবে জ্বিন-ভূত-প্রেত শুধুমাত্র পৌরণিক কাহিনী আর আমাদের কল্পনাপ্রসূত ধারণা ছাড়া কিছুই নয়। বরগুনার তালতলী উপজেলার পিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ঘটনাটিতেও প্রাথমিকভাবে কোন একজন বা কয়েকজনের মধ্যে কোন ব্যতিক্রমী ঘটনা থেকে ভয়ের জন্ম হতে পারে যা পরবর্তীতে অন্যদেরকেও প্রভাবিত করেছে এবং গণভীতি কাজ করেছে। ভয় পা্ওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়গুলো দ্রুত অন্যদের মাঝে সঞ্চারিত হয়। আর মেয়েদের মানসিক দৃঢ়তা ছেলেদের থেকে তুলনামূলক কম থাকায় তাদের মধ্যে ভয় দ্রুত সঞ্চারিত হয়। যৌক্তিকভাবে কোন ঘটনা বিশ্লেষনের সক্ষমতা না থাকায় আমরা মন থেকে ভূত-প্রেত সম্পর্কে খুব অল্পতেই বিশ্বাস করে ফেলি, আর তখন স্বাভাবিক ঘটনাকেও আমরা ব্যতিক্রমী বলে চিন্তা করি এবং মাত্রাতিরিক্ত ভয় ও অবাস্তব কল্পনার কারণে নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।
তথ্যসূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ, ১৯ মে ২০১৫