শনিবার ● ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » অলৌকিক নয় লৌকিক » জ্যান্ত কবর: ৪৮ ঘন্টার চ্যালেঞ্জ
জ্যান্ত কবর: ৪৮ ঘন্টার চ্যালেঞ্জ
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে রামনাবাদ নদী পেরিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে কাঞ্চনবাড়িয়া গ্রাম। পীর গাজী কালুর নির্দেশে চল্লিশোর্ধ সালেহা বেগম ৪৮ ঘন্টা কবরে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে গত ৩ মে, ২০০৯ রবিবার সকাল দশটায় নিজ ঘরের সামনে নিজ হাতে কবর খুড়ে তাতে অবস্থান নেন। ফের কবর থেকে উঠে আসবেন ৫ মে, মঙ্গলবার সকাল দশটায়। দাফনের সাদা কাপড় পরে একটি তসবি, মোমবাতি আর আগরবাতি নিয়ে কবরে প্রবেশ করেন তিনি। কবরের এক পাশে উঁচু বাঁশের মাথায় উড়ছে লাল নিশান। বর্ষার পানি যাতে কবরে না ঢোকে তার জন্য দেয়া হয়েছে ছাউনি।
কবর ঘিরে জমে উঠেছে উৎসুক মানুষের ভীড়। আরও দলে দলে মানুষ ছুটে আসছে এই অতিপ্রাকৃত ঘটনা দেখার আশায়। পীরের আশীর্বাদপুষ্ট সালেহা বেগম কবর থেকে উত্থিত হয়ে মানুষের জন্য বয়ে আনবে কল্যাণ, সারাবেন দুরারোগ্য ব্যাধি, সমাধান দেবেন জটিলতর সমস্যার - এই বিশ্বাস ধারণ করেই গ্রামের সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধার নিবেদন স্বরূপ জমে উঠছিল দানকৃত অর্থের পাহাড়, যা দিয়ে মঙ্গলবার গাজী কালু পীরের উরস হবে।
পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, কবরের ভেতরে কোন বাতাস নেই। এই দুদিন গাজী কালু পীরই তাকে বাঁচিয়ে রাখবেন, আর কবরের মধ্যেই মিলবে তাঁর দেখা। এর মধ্যে কোন বুজরুকি নেই।
কিন্তু সাধারণ মানুষের অন্ধবিশ্বাস আর পরিবারের সদস্যদের জোরালো দাবিও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেনি যুক্তি আর সত্যের কাছে। রক্ষা করতে পারেনি স্বয়ং পীর সাহেবও। সত্যের কাছে হার মেনেছে প্রচলিত কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাস, প্রমান মিলেছে এই জালিয়াতির। স্থানীয় প্রসাশনের উদ্যোগে ফাঁস হয়ে যায় সমস্ত বুজরুকির। প্রসাশন জানায়, রবিবার সকালে সালেহা বেগম যে কবরের মাটির নিচে আশ্রয় নিয়েছে, বাইরে থেকে সেটি দেখতে কবরের মতো দেখালেও তা মূলত বিশাল একটি গর্ত। ৫ হাত লম্বা, ৪ হাত উঁচু ও সাড়ে ৩ হাত প্রসে’র এ গর্তে অনায়াসে ৪/৫ জন মানুষ শুয়ে বসে থাকতে পারে। চৌকা গর্তের ওপর বাঁশের চাটাই বিছিয়ে তার ওপর মাটি দিয়ে এটিকে কথিত কবর বানানো হয়েছে। পূর্ব দিকে বেশ বড় ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। এই ফাঁকা জায়গা দিয়ে সালেহা বেগম বাইরে আসতেন এবং খাওয়া-দাওয়া সেরে একই পথে মাটির নিচে ঢুকতেন। গর্ত থেকে ওপরে ওঠার জন্য তৈরি করা হয়েছিল একটি সিড়িও। আর সমস- জায়গাটিকে কলাপাতাসহ ডালপালা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল।
গ্রেফতারকৃত সালেহা বেগমের স্বামী আবদুস সাত্তার জানিয়েছেন, তারা স্বামী-স্ত্রী অনেকদিন ধরেই পিরালি ব্যবসা করে আসছে। তারা গাজী কালু পীরের মুরিদ। ব্যবসার সুবিধার জন্যই কথিত কবরের নাটক সাজানো হয়েছিল, যাতে তাদের উপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস আরও বাড়ে।
এই জাতীয় ঘটনা কোন নতুন ব্যাপার নয়, সাধারণ মানুষের বিশ্বাস আর তাদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করেই যা চলে আসছে দিনের পর দিন। ঘটনাক্রমে কোন কোন বুজরুকি ফাঁস হয়ে যায়। কিন’ অলক্ষ্যে থেকে যায় অনেক কিছুই। যুক্তি আর প্রমান অবসান ঘটাক এসমস- ভন্ডামির - এটাই আমাদের কামনা।
ছবি ও সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ, ৫ ও ৬ মে, ২০০৯