শনিবার ● ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » অলৌকিক নয় লৌকিক » সাগরের মিষ্টি পানি
সাগরের মিষ্টি পানি
ভারতের মুম্বাই শহরতলীর মাহিম সমুদ্র সৈকতের পানি তার স্বাভাবিক লবনাক্ততা হারিয়ে মিষ্টি হয়ে যাচ্ছে। খবর সংবাদ সংস্থা বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি সহ আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের (১৯-২০ আগস্ট, ২০০৬)।
যুক্তি আর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাকে পিছু হটিয়ে প্রচলিত-অলৌকিকতার প্রতি বিশ্বাস আর কুসংস্কার ধারণ করে তাই সমুদ্র সৈকতে ঢল নেমেছিল হাজারো মানুষের। দাবি উঠেছে এই বিস্ময়কর ঘটনাটি ১৪শ’ শতাব্দীর সূফি সাধক মাখদুম আলী মাহিমীর রহমত বলে। আর তাই অন্ধবিশ্বাসের দোহাই দিয়ে রব উঠেছে - এই পানি পান করলে সেরে যাবে যেকোন অসুখ। সৈকতে হাজির হয়েছিল অতিশয় বৃদ্ধ আর পঙ্গুরাও। সৈকতে বসে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার এই পানি পান করার পাশাপাশি শিশি-বোতল-পাত্র ভরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাড়িতে অবস্থানরত আত্মীয়স্বজনদের জন্য।
অলৌকিকতার রহস্যাবৃত এই ঘটনাটির পেছনে যুক্তি আর প্রমানের নিরিখে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি রয়েছে চলুন দেখা যাক। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ফলে সাগরের পানি অপেক্ষাকৃত কম লবনাক্ত থাকে। কিন্তু চলতি বছরে মুম্বাইতে ভার বর্ষন হয়েছে। পাশাপাশি মাহিমের সাগরে সমতল হতে প্রবাহিত বিস্তর নালা এসে মিশে যাওয়া এবং এই ভূমিবাহিত পানি বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে এসে দূষিত হয়ে সাগরে মিশে যাওয়ার ফলে এর লবনাক্ততা আরও হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া এই পানি সাগরের পানি থেকে হালকা এবং তা সাগরের উপরিভাগে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। যা সমতলের মিষ্টি পানির প্রায় অনুরূপ। আর এটাই অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন মানুষের কাছে পরিণত হয়েছে সূফি শাহ’র রহমত বলে।
অসুখ সাড়ানোর নামে এই পানি যথেচ্ছভাবে পান করা হলেও এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সমুদ্র সৈকতটিতে দীর্ঘদিন ধরে বস্তিবাসীরা উন্মুক্ত মলত্যাগের স্থান হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। পাশাপাশি এখানকার পানিতে প্রতিদিন মিশছে হাজার হাজার টন বর্জ্য। স্বাভাবিক পানিতে ফ্লুরাইডের পরিমাণ থাকে ১০ থেকে ১৫ হাজার পিপিএম কিন্তু এই সৈকতের পানিতে যার পরিমাণ মাত্র ১৫০০ পিপিএম, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এছাড়া খাবার পানিতে স্বাভাবিক ক্লোরেট এর মাত্রা ১২ ভাগ থাকা উচিত কিন্তু সাগরের এই পারিতে তা দেড় হাজারের মত। রয়েছে নাইট্রেট সহ অন্যান্য খনিজের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি। কাজেই স্বাস্থ্যের অযোগ্য এই পানি কি করে রোগ সারাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
গ্রন্থনা-অনুসন্ধান: আগস্ট, ২০০৬