শনিবার ● ১৭ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা » নতুন আবিষ্কৃত অঙ্গ আপনার ত্বকের নিচে লুকিয়ে থাকতে পারে
নতুন আবিষ্কৃত অঙ্গ আপনার ত্বকের নিচে লুকিয়ে থাকতে পারে
বেশিরভাগ লোকই যারা সূচের খোঁচা খেয়েছেন তারা জানেন কীভাবে এটি শরীরে ফুটে যায়। প্রথমে ছিদ্র হয়, তারপরে তীক্ষ্ণ, বেদনাদায়ক ব্যথা এবং টান লাগা অথবা নিদেনপক্ষে ছটফট করা। যদিও এই সার্বজনীন প্রতিক্রিয়ার পেছনের সঠিক কারণ পুরোপুরি বোঝা যায় নি, তবুও বিজ্ঞানীরা এই ধাঁধার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ খুঁজে পেয়েছেন: ত্বকের অভ্যন্তরে একটি অজানা সংবেদনশীল অঙ্গ।
নোসিসেপটিভ গ্লিও-নিউরাল কমপ্লেক্স নামের এই কাঠামোটি হৃৎপিণ্ড কিংবা প্লীহের মতো জটিল অঙ্গগুলির চিরায়ত চিত্রের মতো নয়। পরিবর্তে, এটি গ্লিয়াল কোষ নামে পরিচিত কোষের একটি নেটওয়ার্কের তৈরি একটি সাধারণ অঙ্গ, যা শরীরের স্নায়ু কোষকে পরিবেষ্ঠিত এবং সহায়তা করার জন্য পরিচিত। স্নায়ুতন্ত্রের গঠনে নিউরনের পাশাপাশি গ্লিয়াল কোষ অবস্থান করে। এগুলো নিউরনের পাশাপাশি অবস্থান করে ইনসুলেটর (বিদ্যুত অপরিবাহি অন্তরক) হিসেবে কাজ করে। নিউরনগুলোকে একসাথে আঠার মত লাগিয়ে রাখে। বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া,ভাইরাস এবং বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ থেকে রক্ষা করে। গ্লিয়াল কোষ স্নায়ুতন্তু তৈরি করেও সাহায্য করে। (এছাড়াও সম্প্রতি মানুষের ত্বকের নিচে থাকা ইন্টারস্টিটিয়াম নামের অঙ্গ আবিষ্কৃত হয়েছে)
গবেষক দল ১৬ আগস্ট বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করেন, এই অঙ্গটি ব্যথার উপলব্দি - চাপ দ্বারা সৃষ্ট অস্বস্তি, কিছু বিঁধে যাওয়ার ব্যাথা ও চামড়ার ওপর অন্যান্য প্রভাবের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে বলে ধারণা করা হয়। এখন পর্যন্ত নোসিসেপটিভ তন্তু নামে পরিচিত পৃথক কোষগুলি এই ধরণের ব্যথার মূল সূচনাস্থান হিসাবে বিবেচিত হত।
গবেষণার সহ-রচয়িতা সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের আণবিক স্নায়ু-জীববিদ প্যাট্রিক এর্নফর্স বলেন, “আমরা সম্ভবত একশত বছর ধরে ভাবছিলাম যে ত্বকের স্নায়ু থেকে ব্যথা শুরু হয়েছিল, তবে আমরা এখন দেখাতে পারি যে এই গ্লিয়াল কোষগুলিতেও ব্যথা শুরু করা যায়।”
গবেষক দলটি এই নতুন অঙ্গটিকে প্রথম ইঁদুরের দেহে সনাক্ত করেছিল এবং তারা বিভিন্ন ধরণের ব্যথার জন্য ইঁদুরদের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে। জিন সম্পাদনার মাধ্যমে যখন অঙ্গে কোষগুলি বন্ধ করে দেওয়া হত, তখন প্রাণীগুলো তাপীয় ব্যথা অথবা উষ্ণ বা শীতজনিত অস্বস্তিতে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জানায়। কিন্তু গ্লিয়াল কমপ্লেক্সটি নিষ্ক্রিয় করা থাকলে সমস্ত ইঁদুরগুলি ব্যথায় কম প্রতিক্রিয়া দেখায়।
অনুসন্ধান থেকে বিজ্ঞানীরা অন্তত ইঁদুরগুলির ক্ষেত্রে কীভাবে ব্যথা শুরু হয় এবং অগ্রসর হয় সে সম্পর্কে তাদের ধারণা বদলাতে পেরেছেন। বিজ্ঞানীরা এখনও এই অঙ্গটি মানুষের মধ্যে বিদ্যমান কিনা তা যাচাই করতে পারেননি, তবে এর্নফোর্স বলেন যে সম্ভাবনাই বেশি।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক