সোমবার ● ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা » প্রথমবারের মত টিস্যু থেকে পূর্ণাঙ্গ ডিম্বাণু তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা
প্রথমবারের মত টিস্যু থেকে পূর্ণাঙ্গ ডিম্বাণু তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা
বিজ্ঞানীরা এই প্রথমবারের মত মানুষের শরীরের বাইরে পূর্ণাঙ্গ ডিম্বানু তৈরি করতে সক্ষম হলেন। যেসব মানুষের শারীরিক সমস্যা, রোগ অথবা চিকিৎসার জন্য ডিম্বাণু তৈরিতে সক্ষম ছিলেন না, তারা তাদের এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
এই গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা প্রথমে বিশ ও ত্রিশোর্ধ কয়েকজন মানুষের গর্ভ থেকে কিছু পরিমাণ টিস্যু সংগ্রহ করেন। এরপর সেগুলোকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কালচার মিডিয়ামে রেখে দেন। কালচার মিডিয়ামে সেগুলো ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে পূর্নাঙ্গ ডিম্বাণুতে পরিণত হয়। কালচার মিডিয়ামের মধ্যে গবেষকরা টিস্যু বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করেন, কোষগুলো বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তাতে থাকে নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টি উপাদান। মানবদেহের বাইরে এভাবে টিস্যু তৈরি করাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় টিস্যু কালচার।
এই গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা মোট ৪৮ টি টিস্যু কালচার করেছিলেন। এর মধ্যে ৯ টিকে তারা পূর্ণাঙ্গ দশায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইভলিন টেলফার ও তার দল জানিয়েছেন যে, মানবদেহে একটি ডিম্বাণু পরিণত হতে যে সময় লাগে তাদের প্রক্রিয়ায় সময় লেগেছে আরও কম।
অনেক ক্ষেত্রে শারীরবৃত্তীয় সমস্যার কারণে অনেকে ডিম্বাণু উৎপাদন করতে পারেন না। তাদের ক্ষেত্রে এই গবেষণা সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে ভরসার সৃষ্টি করেছে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্যও পরবর্তীতে আর গর্ভধারণ করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে কেউ মা হতে চাইলে ক্যান্সারের চিকিৎসার আগেই তার গর্ভাশয় থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করে রেখে দিতে হবে। অবশ্য অনেকে এই সম্ভাবনাকে বাতিল করে দিতে চেয়েছেন। তাদের মতে এভাবে টিস্যু সংগ্রহ করা হলে সন্তানের শরীরে ক্যান্সার ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু গবেষকরা অবশ্য আশার বানী শুনিয়েছেন। তাদের মতে এই ক্ষেত্রে দেহে টিস্যু পুনঃস্থাপন না করে বরং ভ্রুণ স্থাপন করা হবে। তাহলে আর ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা থাকবে না।
তবে এই গবেষণার ফলাফল আমারা এখনই ভোগ করতে পারছি না। কেননা বাস্তব ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য আরও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। বিভিন্ন ঝুকি নিয়ে নিশ্চিত হতে হলে গবেষকদের আরও কয়েক বছর সময় প্রয়োজন। এই প্রকল্পের গবেষকদের ধারনা কয়েক বছরের মধ্যেই এই পদ্ধতি সন্তান উৎপাদনে অক্ষম দম্পতিদের কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে সন্তান ধারন করার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। পাশাপাশি মানব ভ্রূণ কিভাবে ধাপে ধাপে বিকশিত হয় তাও এই গবেষণা থেকে বিস্তারিত জানা যাবে।