বুধবার ● ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: জীববিদ্যা ও বিবর্তন » গার্ডিনার ব্যাঙ মুখের সাহায্যে শোনে
গার্ডিনার ব্যাঙ মুখের সাহায্যে শোনে
বিজ্ঞানীর আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছেন কিভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট আকারের গার্ডিনার ব্যাঙ মুখ দিয়ে শোনার কাজটি করে থাকে। এর আগে অনুমান করা হতো কানহীন গার্ডিনার ব্যাঙগুলো বধির। তবে গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্সের দাপ্তরিক জার্নালে (PNAS) প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা গার্ডিনার ব্যাঙের শোনার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন। এই প্রজাতির ব্যাঙ মুখগহ্বর দিয়ে শব্দতরঙ্গ ধারণ করে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। এই গবেষণার মধ্য দিয়ে কানহীন ব্যাঙ কেন জোরালো এবং তীক্ষ্ম শব্দ তৈরি করে সেই রহস্যের সমাধান মিলেছে।
অতি ক্ষুদ্রাকৃতির ব্যাঙ, যাদের বাস সেশেলসে দ্বীপের জঙ্গলে, তাদের কোন মধ্যকর্ণ নেই, অর্থাৎ এরা শ্রবণেন্দ্রিয়হীন। গবেষকরা ধারণা করতেন এই প্রাণীদের পরিবেশ থেকে শব্দ তরঙ্গ অন্তকর্ণে পরিবহন করার বা বিবর্ধিত করার কোন উপায় নেই। কিন্তু এই গবেষণা পূর্ব ধারণাকে ভুল প্রমানিত করেছে।
বিজ্ঞানীরা এই ব্যাঙের ডাক ধারণ করে তা অপর বন্য ব্যাঙের সামনে বাজিয়ে শোনান এবং এর মাধ্যমে তাদের আচরণ প্রত্যক্ষ করেন। নেচার প্রটেকশন ট্রাস্ট অব সেশেলস এর বিজ্ঞানী এবং এই গবেষণা দলের একজন সদস্য জাস্টিন গারল্যাক বিবিসি কে দেয়া এক তথ্যে জানান, এই ব্যাঙের ডাক জঙ্গলের একটি বৈশিষ্ট্যসূচক শব্দ। এটি অত্যন্ত উচ্চ নিনাদের শব্দ। ধারনকৃত শব্দ অন্য ব্যাঙদের শোনালে তারাও সাড়া দেয়। হয় অন্য ব্যাঙগুলো অবস্থান পরিবর্তন করে শব্দের উৎসের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় নতুবা পাল্টা আওয়াজ করে সাড়া দেয়। ফ্র্যাঞ্চ ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টেফিক রিসার্সের সদস্য রিনাউড বোয়েস্টেল বলেন, সত্যিকার অর্থে এটি বেশ মজার, ব্যাঙগুলো লাউড স্পিকারের উপর হামলা চালায়।
গবেষকদের পরবর্তী ধাপ ছিল ব্যাঙ কিভাবে শব্দ শুনতে পায় তা বের করা। গবেষকদল এক্ষেত্রে উচ্চ সংবেদনশীল এক্স-রে ইমেজিং কৌশল ব্যবহার করেন। গবেষকরা ব্যাঙের ব্যবচ্ছেদের পর শরীরের কোন অঙ্গটি মধ্যকর্ণের ভূমিকা পালন করে শব্দতরঙ্গকে স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রেরণ করে তা খুঁজে বের করেন। ব্যাঙের উচ্চ নিনাদের ডাকের একই তরঙ্গে ব্যাঙের মস্তিস্ক কিভাবে সাড়া দেয় তা গবেষকদল অনুকরণ করেন। এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ব্যাঙ মুখগহ্বরকে শব্দ তরঙ্গ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে গিটারের মতো ব্যবহার করে।
গার্ডিনার ব্যাঙের মুখ গহ্বর এবং অন্তকর্ণের মধ্যে অধিক পাতলা এবং অল্পকিছু কলা স্তর রয়েছে। এগুলো শব্দ তরঙ্গকে অধিকতর কার্যকরভাবে মস্তিস্কে সঞ্চারিত করে। বোয়েস্টেল বলেন, মুখ গহ্বর ও হাড়ের পরিবহনতা মধ্যকর্ণের ব্যবহার ছাড়াও কার্যকরভাবে শব্দ উপলব্ধি করতে পারে। তিনি মনে করেন এই শ্রবণ কৌশল কিছুটা হলেও মানুষের বধিরতায় সাহায্য করার ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে।
সূত্র: বিবিসি
০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩