শনিবার ● ১৯ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: জীববিদ্যা ও বিবর্তন » শান্তিপূর্ণ গরিলাদলের মধ্যে দেখা দিচেছ সহিংসতা
শান্তিপূর্ণ গরিলাদলের মধ্যে দেখা দিচেছ সহিংসতা
দলবেঁধে গরিলারা অপর কোন নিঃসঙ্গ গরিলাকে আক্রমণ করছে এমন প্রমাণ পেয়েছে গবেষকরা। যদিও শিম্পাঞ্জী এবং বনোবোরা আমাদের সবচেয়ে কাছের আত্বিয়, আর গরিলারা একটু দূরের, সহিংসতায় সবগুলো প্রজাতির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। বনোবোরা শান্তিপূর্ণ সমাজের জন্য পরিচিত, তবে মানুষ আর শিম্পাঞ্জির বেলায় ভিন্ন কথা। মানুষ আর শিম্পাঞ্জিরা নিজের প্রজাতির অন্য কাউকে খুঁজে বের করে আক্রমণ করে।
তাহলে আমাদের দূরের আত্বিয় গরিলাদের সমাজ কেমন? এতদিন ধারণা ছিল যে ক্ষমতায় থাকা পুরুষ গরিলাকে সরিয়ে কর্তৃত্ব নেয়ার জন্য আক্রমণ ছাড়া গরিলারা বেশ শান্তিপূর্ণ। কিন্তু আফ্রিকার ভিরুঙ্গা পাহাড়ের পাহাড়ি গরিলা সমাজের বেশ কয়েকটি ঘটনার রেশ এই ধারণা বদলে দিতে পারে। ঘটনাগুলো প্রকাশিত হয়েছে সাইন্টিফিক রিপোর্টস নামের জার্নালে।
২০০৪, ২০১০ আর ২০১৩র তিনটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় পর্যবেক্ষিত হয়েছে নারী পুরুষ মিলে দল বেঁধে অন্য গরিলাদের আক্রমণ করছে গরিলারা। প্রথম ঘটনায় ইংশুটি নামের এক নিঃসঙ্গ পুরুষ গরিলা ২৬ টি গরিলার একটি দলের কাছে যায়। কাছে যাওয়ামাত্র দলটি ওকে মাটিতে ফেলে আঘাত করা শুরু করে। কামড়, লাথি আর চুল ধরে টান চলতে থাকে পুরো ৪ মিনিট, এরপর আহত ইংশুটি সুযোগ পেয়ে পালিয়ে যায়| ইলিনয় ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর স্টেসি রোসেনবাম ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করে তাজ্জব বনে যান।
২০১০ এর ঘটনাটি অন্য একটি দলের, ৪৬ টি গরিলা মিলে একটা অচেনা পুরুষ গরিলাকে আঘাত করা শুরু করে| এবারো কামড়, লাথি আর চুল ধরে টানার পুনরাবৃত্তি- তবে এবার টানা ১৮ মিনিট চলে আক্রমণ, শেষে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় আক্রমণের শিকার গরিলাটি। প্রায় দুই সপ্তাহ পরে এক পুরুষ গরিলার মৃতদেহ পাওয়া যায়, শরীরে একই ধরণের আঘাতের চিহ্ন।
শেষ ঘটনাটি ২০১৩-এর, নয়জনের একটি দল আবার ইংশুটি কে পেয়ে আক্রমণ করে, দলের মধ্যে কয়েকটি ছিল আগেরবার ২০০৪ সালের ইংশুটির আক্রমণকারী| এই ঘটনায় প্রশ্ন দাঁড়ায় আসলে কি গরিলারা অকারণে আক্রমণ করে নাকি ইংশুটির কোনো একটি আচরণে তারা ওর উপর রেগে আক্রমণ করে। তিনটি ঘটনায় একটা তথ্য পাওয়া যায়, দলের পুরুষের সাথে সাথে নারী র শিশু গরিলারাও আক্রমণ চালায়| প্রশ্ন হলো কেন এমন করে গরিলারা?
এ নিয়ে বেশ কিছু ধারণা আছে, একটি হলো নিঃসঙ্গ গরিলারা কোনো দলে ঢুকে শিশু আর প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ গরিলাদের মেরে ফেলে আলফা পুরুষ দাবি করতে পারে নিজেকে। আস্তে আস্তে গরিলার সংখ্যা বাড়ছে, দলের পুরুষ সংখ্যা বেশি হওয়ায় জিতে যাবার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়ার কারণেও দল বেঁধে এই আক্রমণ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ অস্ট্রেলিয়ার সিরিল গ্রেয়াতের মতে দলের নারী সাথীদের আকৃষ্ট করার জন্য এমনিতেই দলের পুরুষদের মধ্যে রেষারেষি, এর মধ্যে বাইরের পুরুষ ঢুকে পড়লে প্রতিযোগিতার ভয়ে আক্রমণ করার প্রবণতা আসতে পারে। তবে শিম্পাঞ্জি আর মানুষের আক্রমণের ধরণ আর গরিলার আক্রমণের ধরণের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে, যেমন মানুষের আর শিম্পাঞ্জির সমাজে সাধারণত পুরুষরা দল বেঁধে আক্রমণ চালায়, নারী আর শিশুরা যোগ দেয়না, গরিলার ঘটনায় নারী, শিশুরাও পুরুষের পাশাপাশি আক্রমণ চালিয়েছে| আর একটি পার্থক্য হলো গরিলাদের আক্রমণের কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছিলোনা, কিন্তু মানুষ আর শিম্পাঞ্জি কাউকে খুঁজে বের করে আক্রমণ করে এমন অনেক উদাহরণ আছে।
ইউকের ইউনিভার্সিটি অফ চেস্টারের সোনিয়া হিল বলেন, “যদিও আমরা ৫০ বছর ধরে পাহাড়ি গরিলা নিয়ে গবেষণা করছি, এখনো তাদের অনেক কিছুই অজানা মানুষের।”
সূত্র- বিবিসি আর্থ