সর্বশেষ:
ঢাকা, মে ১৪, ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

cosmicculture.science: বিজ্ঞানকে জানতে ও জানাতে
শনিবার ● ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান নিবন্ধ: জ্যোতির্বিজ্ঞান » সীমার মাঝে অসীম - ড. প্রণতি কৃষ্ণ বোস
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান নিবন্ধ: জ্যোতির্বিজ্ঞান » সীমার মাঝে অসীম - ড. প্রণতি কৃষ্ণ বোস
৫৯৬ বার পঠিত
শনিবার ● ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সীমার মাঝে অসীম - ড. প্রণতি কৃষ্ণ বোস

সীমার মাঝে অসীমThe infinite! No other question has ever moved so profoundly the sprit of man.
- David Hilbert

আলোচনার বিষয় আসলে হচ্ছে প্রকৃতির তত্ত্বে অসীমের কিছু লজিক্যাল র্যাpমাপিকেশন নিয়ে। তার আগে প্রোলগ হিসেবে কিছু কথা। আমি ত’ পদার্থবিদ নই তাই পক্ষপাতিত্বের কোন ভয়ডর ছাড়াই বলতে পারি যে, যাবতীয় বিজ্ঞানের মধ্যে পদার্থবিদ্যাই সবচেয়ে মৌলিক আর পদার্থবিদ্যার ভিতর সবচেয়ে মৌলিক শাখা হ’ল তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা। ভৌত জগতকে শুধু বর্ণনা নয়, ব্যাখ্যাই হচ্ছে এর চূড়ান্ত কাম্য। বস্তুতঃ এই শতাব্দীতে তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন উদ্ভাবন মানুষকে আধুনিকতম রূপকথা শুনিয়েছে, উদ্বুদ্ধ করেছে তার সীমানা অতিক্রম করার জন্য। পরমানুর কেন্দ্রের ক্ষুদ্রতম কণিকার গঠন থেকে মহাবিশ্বের সীমানা পর্যন্ত অকল্পনীয় দূরত্ব সবখানেই এর বিচরণ।
বিশ্বে যাবতীয় মিথস্ক্রিয়ার জন্য চারটি বল কার্যকর বলে স্বীকৃত। তীব্রতার ক্রমহ্রাসমানতা অনুসারে এগুলি হল তীব্র বল যা পরমানুর কেন্দ্রকে বেঁধে রাখে, তড়িৎ চুম্বকীয় বল যা বৈদ্যুতিক ও চুম্বকীয় মিথস্ক্রিয়ার জন্য দায়ী, দূর্বল বল যা নিউট্রনের ক্ষয়, বেটা ক্ষয় ও অন্যান্য কিছু নিউক্লীয় ক্ষয় ঘটায় - আর সবচেয়ে দূর পাল্লার এবং সবচেয়ে কম শক্তিশালী বল মহাকর্ষের পার্থিব রূপ মাধ্যাকর্ষণ সকলেরই জানা আছে। ধারণা করা হয় যে সৃষ্টির শুরুতে মহাবিস্ফোরণের সময় যখন শক্তি ছিল প্ল্যাংক শক্তির (1028ev) সমান তখন এই চারটি বল একীভূত ছিল। তারপর মহাবিশ্বের তাপমাত্রা কমে গেলে এদের প্রতিসাম্য ভেঙ্গে পড়ে এবং বলগুলি বিযুক্ত হয়ে বর্তমানের আলাদা আলাদা রূপে দেখা দেয়। বিংশ শতাব্দীতে মানুষের চিন্তার একটা বড় অংশ ব্যয় হয়েছে তাত্ত্বিকভাবে বলগুলি আবার একীভূত করতে। বিশ্বাসটা হ’ল এই যে, সব মিথস্ক্রিয়াই উচ্চ পর্যায়ে এক সুতোয় গাঁথা। এই সুত্রটি আবিষ্কারের প্রয়াস মানুষের যে চিরন্তন ক্ষুধা রয়েছে মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার জন্য তারই উচ্চতম অভিব্যক্তি।
একাজ করতে গেলে প্রধান যে দুটি তত্ত্বের দরকার তাদের জন্ম এই শতাব্দীতেই। এ দুটি হচ্ছে সার্বিক আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। আমরা খুব সামান্যভাবে দেখার চেষ্টা করবো এ দুটি তত্ত্বকে সংযুক্ত করতে বাঁধা কোথায়, কোথায় অসীম এসে হাজির হয়, কিভাবে তা সরানো যায় ইত্যাদি। একটি উত্তম তত্ত্ব স্থান-কালের সর্বত্রই কাজ করা উচিত। যদি কোন বিন্দুতে কোন রাশির মান অসীম হয়ে যায় তবে এ বিন্দুটিকে সিঙ্গুলারিটি বলা হয়। এখানে তত্ত্ব ভেঙ্গে পড়ে কি ঘটবে তার কিছুই বলতে পারে না। এ কারণে ঐ অসীমকে বিলোপ করা প্রয়োজন। এখানে একটা জিনিস মনে রাখা দরকার; কোন কোন ক্ষেত্রে অসীম প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। যেমন যাঁরা ডিরাক ডেলটা ফাংশন {∂(x-x0)} স্থানিক মাত্রায় একটি তীক্ষ্ণ তাড়নার একক প্রতিক্রিয়া ফাংশন। এর সাথে পরিচিত আছেন তাঁরা জানেন এর x-x0 বিন্দুতে সিঙ্গুলারিটি আছে। আর সেই কারণে একটি ফাংশন f(x) এর x0 বিন্দুতে মান , f(x0) ডেলটা ফাংশনের সাহায্যে বের করা যায়। বিচ্ছিন্ন ফাংশনের ডেরিভেটিভ বের করার জন্যও এর ব্যবহার আছে।
উপরোক্ত চারটি বলের প্রথম তিনটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সাথে জড়িত এবং মহাকর্ষের জন্য সার্বিক আপেক্ষিকতার প্রয়োজন। মহাকর্ষ বল একটি বৃহৎ পরিসর প্রতিভাস। এর জ্যামিতিক তত্ত্ব হচ্ছে সার্বিক আপেক্ষিকতা। মানুষের প্রতিভার গগণস্পর্শী রূপ এই তত্ত্বকে একলা হাতে আইনস্টাইন চূড়ান্ত রূপ দেন ২৫ শে নভেম্বর ১৯১৫ তারিখে। এই তত্ত্ব অনুসারে পদার্থকে স্থান-কালের বক্রতা হিসেবে দেখা হয়। বক্রতাকে রীমানীয় জ্যামিতির সাহায্যে বিচার করে এক ধরনের রাশি বিন্যাস, টেন্সর দ্বারা প্রকাশ করা হয়। পদার্থ জনিত বক্রতাকে রীমার টেন্সরের উপাংশ গুলির কতগুলি সংযোজন হিসেবে ধরা হয় অর্থাৎ বস্তুকে সংকুচিত র‌ীমান টেন্সর দ্বারা প্রকাশ করা হয় যাতে স্থানাংক পরিবর্তনের স্বাধীনতা থাকে।১ তাছাড়া আর একটি শর্ত আছে যা হ’ল স্থান-কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে উপাংশগুলির পরিবর্তনকে কিছু টেন্সর সুত্র অর্থাৎ চারটি ডিফারেনশিয়াল আইডেনটিটি মানতে হবে। গাণিতিকভাবে সার্বিক আপেক্ষিকতার সুত্রটি হ’ল এরকম২ Rv-½ gvR = -kTv যেখানে Rv=Rv হ’ল সংকুচিত রীমান টেন্সর (রিচি টেন্সর); R=Rvgv পূর্ণ সঙ্কুচিত রীমান টেন্সর (বক্রতা স্কেলার); gv প্রতিসম মেট্রিক টেন্সর, k একটি ধ্রুবক = 8G/c4যেখানে G = মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, c শূণ্যে আলোর বেগ এবং Tv শক্তি-ভরবেগ টেন্সর যা পদার্থকে প্রতিনিধিত্ব করে অর্থাৎ এটাই উৎস হিসেবে কাজ করে। যেহেতু Rv প্রতিসম অর্থাৎ Rv=Rvএখানে সমীকরণের সংখ্যা দশটি। তবে চারটি ডিফেরেনশিয়াল আইডেনটিটি বাদ দিলে ছয়টি স্বাধীন ডিফেরেনশিয়াল সমীকরণ থাকে এই মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র সমীকরণে। এছাড়া গতির চারটি সমীকরণ ধরে আইনস্টাইনের তত্ত্বে সমীকরণ দাড়ায় দশে। মজার ব্যাপার হ’ল যে এই সুত্রটি আবিষ্কার করার সময় আইনস্টাইন পূর্বোক্ত চারটি আইডেনটিটিকে যে বিয়াঞ্চি আইডেনটিটি দিয়ে প্রকাশ করা যায়, যাতে কোভ্যারিয়্যান্ট ডিফারেনসিয়েশন করা হয়, (Rv-½ gvR)v=0 এর কথা জানতেন না।২ ফলে দ্বিতীয় পদটির সহগ ½ তাকে ঘোরা পথে বের করতে হয়েছিল। তাঁর সূত্র থেকে যে শক্তি-ভরবেগ সংরক্ষণ সুত্র Tv;v=0 আপনা আপনি বেরিয়ে আসে তা’ তিনি প্রথমে খেয়াল করেন নি।২ যা হোক, সার্বিক আপেক্ষিকতার বৈশিষ্ট্য এই যে এটি অবিচ্ছিন্নতার (continuum) ধারণার উপর দাঁড়িয়ে আছে। এটি deterministic তত্ত্ব যেখানে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার নিগূঢ় অর্থবহ অনিশ্চয়তা সূত্রের ঠাঁই নেই।
মধ্য ১৯২০ এ ইউরোপের বিভিন্ন পদার্থবিদদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে আর একটি অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব কোয়ান্টাম বলবিদ্যা যার মূল উপজীব্য হচ্ছে ক্ষুদ্র পরিসরে বাস্তবতা। শক্তি স্তরের বিচ্ছিন্নতা, পরমানু বা অনু দ্বারা শক্তি বিচ্ছিন্নভাবে শোষণ বা নির্গত করা, পদার্থের কণিকা-তরঙ্গ দ্বৈত চরিত্র, তরঙ্গ ফাংশন ও সম্ভাব্যতার ধারণা ইত্যাদি এই তত্ত্ব থেকে পাওয়া যায়। পদার্থের দ্বৈত চরিত্রের ফলশ্রুতি হিসেবে বেরিয়ে আসে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সম্ভবতঃ সবচেয়ে সুগভীর অংশ হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা সূত্র। ভার্ণার হাইজেনবার্গ কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অন্যতম প্রধান স্থপতি। এ বিষয়ে প্রথম প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধটি তাঁরই যা ১৯২৫ সালে যাইতশ্রিফত ফার ফিজিকে প্রকাশিত হয়। অনিশ্চয়তা সূত্র অনুসারে পর্যবেক্ষণযোগ্য রাশিগুলোর একটির মান সঠিকভাবে জানলে অন্যটি অসীমরূপে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সুতরাং পুরোপুরি নিশ্চিত মানের বদলে আমরা সম্ভাবনা ব্যবহার করতে বাধ্য হই। এর মানে এই নয় যে আমাদের পরিমাণ যন্ত্র যথেষ্ট সূক্ষ্ম নয়, চূড়ান্ত সংবেদী কোন কাল্পনিক যন্ত্র ব্যবহার করলেও একই অবস্তা হতো - এর অর্থ আরও গভীর - মহাবিশ্ব নিজেই এই মানগুলিকে চূড়ান্ত সূক্ষ্মভাবে জানে না। ফলে পরিমাপ সম্পর্কে আমাদের ক্ল্যাসিক্যাল ধারণার একটা চূড়ান্ত সীমা বেঁধে দেয়া হল। এতে চিন্তিত হবার কিছু নেই। আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের থেকে বহু বহু ক্ষুদ্র স্তরে এই প্রভাবগুলি প্রবল হয়ে ওঠে। তবে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে ইলেকট্রনিক্সযুক্ত যাবতীয় সামগ্রী যা আমরা ব্যবহার করি তা সবই কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রয়োগ থেকে এসেছে। আর একটা মজার ব্যাপার হ’ল যে হাইজেনবার্গের ১৯২৫ সালের প্রবন্ধে কোথাও ম্যাট্রিক্সের কতা উচ্চারিত হয়নি কারণ তিনি বুঝে ওঠেন নি যে তাঁর গাণিতিক অপারেশনগুলির ম্যাট্রিক্স তাৎপর্য আছে। ৩,৪ ঐ বছরেই অল্প কিছুদিন পরে ম্যাক্সবর্ণ ও প্যাস্কুয়াল জর্ডান অন্য একটি নিবন্ধে এই বিষয়টি তুলে ধরেন।
আসল কথায় ফিরে আসি। মানুষের মত নক্ষত্রেরও জন্ম, শৈশব, যৌবন ও মৃত্যু আছে। নক্ষত্রের জীবন বিবর্তনে আপেক্ষিকতা প্রয়োগ করলে দেখা যায় যে সৌর ভরের চাইতে তিনগুন বা তার বেশি ভরবিশিষ্ট কোন নক্ষত্রের জীবনচক্রের শেষ পর্যায়ে মহাকর্ষীয় চুপসে যাওয়া অনিবার্য। ৫,৬,৭ শীতল নক্ষত্রের (নক্ষত্রের বার্ধক্য কালে) ভরের সাথে মহাকর্ষীয় চুপসে যাওয়া সম্পর্ক আবিষ্কার করেছিলেন এস. চন্দ্রশেখর যাকে চন্দ্রশেখর লিমিট বলা হয়। কিন্তু তাঁর প্রফেসর এডিংটন সহ বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক এমনকি স্বয়ং আইনস্টাইনের বিরোধিতার মুখে তিনি জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার অন্য শাখায় মনোনিবেশ করেন। যদিও পরবর্তীকালে প্রমানিত হয় যে, চন্দ্রশেখরের আবিষ্কারই ঠিক ছিল। এই চুপসানোর ফলে স্থান-কালে বক্রতা ক্রমেই বাড়তে থাকবে এবং এক পর্যায়ে তা এত বেশি হবে যে কোন কিছুই, এমনকি আলোও তার থেকে বের হতে পারবে না। জন হুইলার ১৯৬৯ সালে এর নাম দিয়েছিলেন ব্ল্যাক হোল। এ’ত হলো ভারী নক্ষত্রের স্বতঃস্ফূর্তভাবে মহাকর্ষীয় চুপসানোর ফলে ব্ল্যাক হোলের সৃষ্টি। আসলে যেকোন পরিমাণ পদার্থকে যথেষ্ট পরিমাণ চাপ দিয়ে সঙ্কুচিত করলে ব্ল্যাক হোল তৈরি হবে। যেমন চাপ দিয়ে সূর্যের ব্যাসার্ধ তিন কিলোমিটার বা পৃথিবীর ব্যাসার্ধ এক সেন্টিমিটারে নামিয়ে আনতে পারলে (যার জন্য প্রয়োজন প্রচন্ড পরিমাণ শক্তি) ব্ল্যাক হোল তৈরি করা যাবে। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর হল এরকম প্রত্যেকটি ব্ল্যাক হোল সৃষ্টির সাথে একটি করে মহাবিশ্ব সুষ্টি হবে অর্থাৎ ব্ল্যাক হোল ও বিগ ব্যাং একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। সৃষ্টির পরে এই নতুন মহাবিশ্বের, যে মহাবিশ্ব থেকে সৃষ্টি হল, তার সাথে কোন যোগাযোগ বা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া থাকা সম্ভব নয়।৫,৬,৭ এড ফাহারী ও অ্যালান গুথ দেখিয়েছেন যে অল্প একটু পদার্থকে 1024K তাপে চাপ দিয়ে এরকম মহাবিশ্ব সৃষ্টি করা যায়। এ কাজ করার মত পুরো প্রযুক্তি আমাদের হাতে না থাকলেও কিছুটা আছে। আমাদের চেয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত কোন প্রাণীর পক্ষে এ কাজ অসম্ভব নয়। তবে কি আমাদের মহাবিশ্ব, অন্যকোন মহাবিশ্বের ল্যাবরেটরিতে এভাবে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়েছিল? ব্ল্যাক হোলের ভিতরে থাকবে অসীম ঘনত্ব তথা স্থান-কালের অসীম বক্রতা বিশিষ্ট একটি বিন্দু অর্থাৎ একটি সিঙ্গুলারিটি। এই বিষয়টি কারও পছন্দ নয়, আইনস্টাইন নিজেও তাঁর তত্ত্বে সিঙ্গুলারিটির উপস্থিতি নিয়ে খুশি ছিলেন না, কারণ এখানে তত্ত্ব অকার্যকর হয়ে পড়ে। তাহলে ত’ এটিকে তাড়াতে হয়। সেই জটিল কাজটিই করলেন স্টিফেন হকিং৫,৬,৭,৮ আপেক্ষিকতা, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ও তাপগতিবিদ্যা প্রয়োগ করে। এর ফলে হকিং দেখালেন ব্ল্যাক হোল থেকে বিকীরণ হবে যার নাম দেয়া হয়েছে হকিং বিকীরণ। বড় ব্ল্যাক হোলের ব্যাপারে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও অতি ক্ষুদ্র ব্ল্যাক হোল থেকে ক্রমশ বেশি হারে শক্তি বিকীরণ হবে এবং শেষ পর্যন্ত ব্ল্যাক হোলটি বিস্ফোরিত হয়ে উবে যাবে। তখন সিঙ্গুলারিটির কি হবে? উত্তর হচ্ছে যেহেতু অনিশ্চয়তা সূত্র বলে দৈর্ঘ্যের পরিমাপের চুড়ান্ত সীমা হ’ল প্ল্যাংক দৈর্ঘ্য (10-33cm) অর্থাৎ এর চেয়ে ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের কোন অর্থ নেই তাই ব্ল্যাক হোলটি কমতে কমতে প্ল্যাংক দৈর্ঘ্যের সমান ব্যাস বিশিষ্ট হবে। এর পরে যদি আরও শক্তি বিকীরণ করে তবে ব্ল্যাক হোলটি একেবারে মিলিয়ে যাবে সিঙ্গুলারিটি বলতে কিছু থাকবে না। অর্থাৎ কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বলে যে ব্ল্যাক হোলের ভিতরে ঘনত্ব অকল্পনীয় ভাবে বেশি হতে পারে তবে তা’ অসীম হবে না।
আপেক্ষিকতা অনুসারে আজ থেকে দেড় হাজার কোটি বছর আগে অসীম ঘনত্বের এক অবস্থা থেকে মহাবিস্ফোরণের (বিগ ব্যাং) ফলে বর্তমান মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়। যেহেতু সেই মুহুর্তে সিঙ্গুলারিটি ছিল তাই সৃষ্টিরে ক্ষণটিতে পদার্থবিদ্যার নিয়ম ভেঙ্গে পড়ার কথা। কিন্তু কোয়ান্টাম বলবিদ্যা অনুসারে সময়ের ক্ষুদ্রতম সীমা সেকেন্ড 10-43 সেকেন্ড (প্ল্যাংক সময়) এর চেয়ে ক্ষুদ্র সময় অর্থহীন এবং এভাবে দেখলে সৃষ্টির মুহুর্ত সংক্রান্ত সিঙ্গুলারিটিকে পরিহার করা যায়।
এই কাজটিই একটি বিকল্প উপায়ে করেন স্টিফেন হকিং। সৃষ্টির শুরুতে বিগ ব্যাং এবং বহু বহু দূর ভবিষ্যতে সম্ভাব্য মহাসঙ্কোচনে চিরায়ত ধারণা অনুসারে যে দুটি সিঙ্গুলারিটি ছিল এবং তাকবে তা দূর করার জন্য হকিং ১৯৮১ সালে সীমানাহীন তত্ত্বের প্রস্তাবনা করেন।৫,৬,৭,৮ এই দুই অবস্থার মহাবিশ্বের আয়তন খুব ছোট হয়ে যায় যার ফলে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা, অতি ক্ষুদ্র জগতে যার রাজত্ব, তার প্রভাব অনিবার্য হয়ে পড়ে। উল্লেখযোগ্য কথা হ’ল বর্তমানে যে বিশাল আকারের মহাবিশ্ব তার উপর সার্বিকভাবে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রয়োগ সম্ভব নয়। হকিং এর তত্ত্বে সার্বিক আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম বলবিদ্যার যুগ্ম প্রয়োগ করা হয়েছে। সীমানাহীন তত্ত্বে সার্বিক আপেক্ষিকতা এসেচে স্থান-কালের বক্রতারূপে এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এসেছে ফাইনম্যানের ইতিহাসের যোগফল বা পথ ইন্টিগ্রাল হিসেবে।
(চলবে .. ..)

লেখক: প্রয়াত বিজ্ঞান শিক্ষক ও গবেষক।

 





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার খোঁজেজেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম রঙীন ছবি প্রকাশ
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথম চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স এর জীবনাবসান
মঙ্গলে ইনজেনুইটি’র নতুন সাফল্য
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আফ্রিকায় ৫০ বছর পরে নতুনভাবে হস্তিছুঁচোর দেখা মিলল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা