শনিবার ● ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান নিবন্ধ: জ্যোতির্বিজ্ঞান » অ্যান্টেনা গ্যালাক্সি - হুমায়রা হারুন
অ্যান্টেনা গ্যালাক্সি - হুমায়রা হারুন
দুটি সর্পিলাকার ছায়াপথ বা স্পাইরাল গ্যালাক্সির একত্রীকরণে সৃষ্ট হয়েছে এই ছায়াপথ। এটি তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু হয় আজ হয়ে কয়েকশত মিলিয়ন বছর আগে। ছায়াপথ দুটির সংঘর্ষের শুরুর দিকে তৈরী হচ্ছিল অগণিত নক্ষত্র। তারই ফলশ্রুতিতে হাবল্ স্পেস টেলিস্কোপ সবচেয়ে নিকটবর্তী যে ছবিটি আমাদের উপহার দিয়েছে তাই অ্যান্টেনা গ্যালাক্সির প্রাপ্ত এই বর্ণিল ছবি। নিউ জেনারেল ক্যাটালগ (NGC) অনুসারে এই ছায়াপথটির নাম NGC 4038-4039. অ্যান্টেনার মতন দীর্ঘ লম্বাটে আকার বলেই এই ছায়াপথের এইরূপ নামকরণ।
গ্যালাক্সি দুটির মিলে যাওয়ার সময় গুচ্ছ গুচ্ছ নক্ষত্ররাজি তৈরী করেছিল নক্ষত্রগুচ্ছ বা স্টার ক্লাস্টার। এই প্রাপ্ত ছবিটির ডান এবং বাঁ দিকে দুটি কমলা রঙের গোলাকার পিন্ড নির্দেশ করে মূল ছায়াপথ দুটির কেন্দ্র বা core. ছবিতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে মেটে রঙের কসমিক ডাস্ট এবং ফিলামেন্ট দ্বারা মূল ছায়াপথ দুটির অপেক্ষাকৃত বর্ষীয়ান তারকাগুলো ছেয়ে আছে। তাই মেটে আর কমলা রঙ কাছাকাছি হয়ে মিশে আছে। ছবিটিতে হাল্কা নীলাভ অংশে রয়েছে সদ্য তৈরী হওয়া নবীন তারকারাজি। হাইড্রোজেন গ্যাসপিন্ড দিয়ে মুড়ানো এই অঞ্চলটি যেন উত্তাপ বিকিরণে গোলাপী রঙের আভায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। এই ছবিটি থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সহজেই নক্ষত্র ও নক্ষত্রগুচ্ছ কে আলাদা করতে পারবেন। Age dating পদ্ধতির মাধ্যমে তারা দেখেছেন সদ্য তৈরি হওয়া নক্ষত্রগুচ্ছের দশ শতাংশ শুধুমাত্র টিকে থাকবে প্রথম দশ মিলিয়ন বছরের কিছু অধিক সময় আর বাকীরা গুচ্ছবদ্ধ না থেকে বিচরণ করবে এই বিশাল ছায়াপথের মঝে। বিশালাকায় নক্ষত্রগুলো সুসংবদ্ধ হয়ে গঠন করবে গ্লোবিউলার ক্লাস্টার। গ্লোবিউলার ক্লাস্টার নক্ষত্ররাজির এমন একটি ক্লাস্টার যা কিনা দশ হাজার থেকে এক মিলিয়ন নক্ষত্রের সমন্বয়ে ১০-২০০ আলোকবর্ষ ব্যাস সমৃদ্ধ স্থান জুড়ে ছায়াপথে অবস্থান করে।
আমাদের নিজস্ব ছায়াপথ মিল্কিওয়েতে এরকম গ্লোবিউলার ক্লাস্টারের অস্তিত্ব রয়েছে। অ্যান্টেনা গ্যালাক্সির এই ছবিতে মূল ছায়াপথ দুটির স্ব স্ব কেন্দ্রস্থল অর্থাত নিউক্লিয়াস থেকে অ্যান্টেনা সদৃশ লম্বা দীর্ঘায়িত অংশটুকু অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। গ্রাউন্ড বেইসড টেলিস্কোপ দিয়েও ৪৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই ছায়াপথের অ্যান্টেনা সদৃশ অংশবিশেষ ভাল মতন পর্যবেক্ষণ করা যায়। ২০০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন বছর আগে যখন এ দুটো গ্যালাক্সি পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল তখন সমুদ্রের জোয়ারের মতন মহাকাশেও জোয়ারের সৃষ্টি হয়েছিল যাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় বলে টাইডাল ওয়েভ। সমুদ্রের বিন্দু বিন্দু জলের সমাহার যেমন জোয়ার সৃষ্টি করে অতটা তেমন নয় বরং দুটি গ্যালাক্সির অসংখ্য বিন্দু বন্দু নক্ষত্র তাদের একত্রীকরনের সময় সৃষ্টি করেছিল টাইডাল ওয়েভ, যা পরবর্তীতে অ্যান্টেনা গ্যালাক্সির টাইডাল টেইল (tidal tail) তৈরিতে সাহায্য করেছে।
আমাদের ছায়াপথ অর্থাত আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি যখন আমাদের প্রতিবেশী গ্যালাক্সি অ্যান্ড্রমিডার সাথে কয়েক বিলিয়ন বর্ষ পর মিশে এক হয়ে যাবে তখন কিভাবে এ’দুটি ছায়াপথের নক্ষত্রে নক্ষত্রে মিথষ্ক্রিয়া সংঘটিত হয়ে টাইডাল টেইল তৈরি হবে তারই ধারণা বিজ্ঞানীরা এ ছবি থেকে পাবেন।
তথ্য সূত্রঃ হাবল্ স্পেস টেলিস্কোপ, STScI