বুধবার ● ২৫ জুন ২০১৪
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান নিবন্ধ: জ্যোতির্বিজ্ঞান » বর্ণিল নক্ষত্রগুচ্ছ NGC- 602 - হুমায়রা হারুন
বর্ণিল নক্ষত্রগুচ্ছ NGC- 602 - হুমায়রা হারুন
সেই অনন্ত মহাকাশের মাঝ থেকে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে যে সকল চমকপ্রদ ছবি তুলে পাঠাচ্ছে তার মধ্যে একটি হলো নক্ষত্রগুচ্ছ NGC-602 বা স্টার ক্লাস্টার NGC-602. আমরা জানি অসংখ্য নক্ষত্র যখন গুচ্ছবদ্ধ হয়ে অবস্থান করে তখনই সৃষ্টি হয় নক্ষত্র গুচ্ছ। এই চিত্রটিতে দেখা যাচ্ছে কিভাবে নবজন্ম লাভকারী নীল বর্ণের নক্ষত্রসমূহ অসম্ভব শক্তি সঞ্চয় করে চারদিকে ছিটকে পড়ে কেন্দ্রে তৈরী করেছে একটি বিশাল গহ্বর। এই খালি জায়গাটির চারপাশ ঘিরে তাদের অবস্থান। ছবিটি হাবল টেলিস্কোপ আমাদের কাছে এনে দিয়েছে Small Magellanic Cloud (SMC) নামক ছায়াপথ থেকে। এই ছায়াপথের অভ্যন্তরে নক্ষত্র তৈরির এ স্থানটিকে আখ্যায়িত করা হয়েছে NGC-602 অঞ্চল হিসেবে। আমাদের পৃথিবী থেকে এই গ্যালাক্সীটি মাত্র দুই লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বলে একে আমরা প্রতিবেশী গ্যালাক্সী হিসেবেই মনে করি। SMC কে বামুন (dwarf) গালাক্সীও বলা হয়। কারণ বামুন গ্যলাক্সীগুলো অন্যান্য গ্যলাক্সী থেকে আকারে ছোট হয় এবং স্বল্প পরিসরে কয়েক বিলিয়ন নক্ষত্র ধারণ করতে সক্ষম হয়। SMC যে শুধুমাত্র আকারে বামুন সদৃশ তা নয় এটি বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়েও অসম (irregular) আকৃতির অর্থাৎ ছায়াপথটি গতানুগতিক সর্পিল (spiral) বা উপবৃত্তাকার (elliptical) ছায়াপথ নয়। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন বামুন গ্যলাক্সীগুলো হয়তো বা বিশালাকার গ্যালাক্সী তৈরীর আদি হোতা। আর তাই বামুন গ্যলাক্সীতে উৎপন্ন হতে থাকা নীল নক্ষত্রগুলো নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করা মানে এমন সকল নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা করা যেখানে নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে কয়েক প্রজন্ম ধরে উৎপাদিত ভারী ধাতুসমূহের উপস্থিতি অনেকাংশে কম। এ যেন নক্ষত্র গবেষণার আরো একটি দিকের উন্মোচন। এই চিত্র বিশ্লেষণে তাদের ধারণা, স্টার ক্লাস্টার NGC-602 উচ্চমাত্রার বিকিরণ জনিত শক্তি নির্গত করে চলেছে সর্বক্ষণ।উজ্জ্বল বর্ণিল শিখায় ছায়াপথের এ স্থানটি যেন সবসময় আলোকজ্জ্বল ও শোভিত মন্ডিত।ছবিটির উপরের বাঁ দিকে এবং নীচের ডানদিকে স্তরবিশিষ্ট ধূলিকণা ও গ্যাসীয় আবরণ লক্ষ্য করা যায়।চিত্রটি থেকে তাই বিজ্ঞানীরা ধারণা করতে পারছেন কিভাবে দুই লক্ষ আলোক বর্ষ দূরে সৃষ্ট হয়ে চলেছে নীল দীপশিখার আবরণে মোড়া এসব নক্ষত্রসমূহ,যারা কিনা নব জন্ম লাভের পর প্রচন্ড শক্তি ও গতি নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আকাশ মন্ডলে।ছবিটি আমাদের কাছে হাবল টেলিস্কোপ মাত্র এক দশক আগে এনে দিয়েছে,অথচ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এ ছবিটি না দেখেই যেন এর দেখা পেয়েছিলেন।তাই হয়তো তিনি তাঁর বিখ্যাত সংগীত (আনন্দ মঙ্গলালোকে)-এর একটি চরণে বলেছিলেন -
‘গ্রহতারক চন্দ্রতপন ব্যাকুল দ্রুত বেগে
করিছে পান,করিছে স্নান,অক্ষয় কিরণে
আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’
তথ্যসূত্র
http://hubblesite.org/newscenter/archive/releases/2007/04/image/a/
উইকিপিডিয়া
চিত্র STSci