সর্বশেষ:
ঢাকা, মে ১৫, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

cosmicculture.science: বিজ্ঞানকে জানতে ও জানাতে
শুক্রবার ● ১৩ জুন ২০১৪
প্রথম পাতা » মঙ্গল গ্রহে অভিযান » মঙ্গলে কলোনী গড়ার অপেক্ষায় : অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশীরাও
প্রথম পাতা » মঙ্গল গ্রহে অভিযান » মঙ্গলে কলোনী গড়ার অপেক্ষায় : অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশীরাও
৫২৮ বার পঠিত
শুক্রবার ● ১৩ জুন ২০১৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মঙ্গলে কলোনী গড়ার অপেক্ষায় : অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশীরাও

মঙ্গলে কলোনী গড়ার অপেক্ষায়মহাকাশ জয়ের এক দূর্নিবার প্রচেষ্টা হিসেবে মার্স ওয়ান মিশন এখন সকলের কাছেই পরিচিত। ঘোর লাগা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই মঙ্গল গ্রহে মানব কলোনী স্থাপনের ঘোষণা দিয়ে গেল বছর এপ্রিলে নজর কাড়ে নেদারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্স ওয়ান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৩ সালে মঙ্গলে প্রথম মানব বসতি স্থাপনের কাজ শুরু হবে এবং মঙ্গলে মানব কলোনী স্থাপনে প্রথম চারজন অভিযাত্রী একমুখী যাত্রা করে স্থায়ীভাবে মঙ্গলে ঠাঁই নেবেনে। সবুজ শ্যামলিমা পৃথিবীকে চিরদিনের মতো বিদায় জানিয়ে মঙ্গলে বাস করতে আগ্রহী ১৮ বছরের উর্ধ্বে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ পৃথিবীবাসীদের কাছে উন্মুক্তভাবে আবেদন আহ্বান সাড়া ফেলেছিলো ১৪০ টি দেশের দুই লক্ষাধিক চ্যালেঞ্জপ্রেমীকে। আর এই অগ্যস্ত যাত্রায় পাড়ি জমাতে পিছিয়ে থাকেনি বাংলাদেশীরাও। এই অন্তিম যাত্রার জন্য আবেদন করেছিলেন ১৮ জন বাংলাদেশী ও বাঙালী বংশদ্ভূত নাগরিক। প্রথম রাউন্ডে ২০২,৫৮৬ জন আগ্রহী প্রার্থীর মধ্যে থেকে বাছাই করা হয় ১০৫৮ জনকে।
চিকিৎসকের কাছ থেকে নেয়া সুস্বাস্থ্যের প্রত্যয়নপত্র যাচাই বাছাই করে মার্স ওয়ান কর্তৃপক্ষ ১০৫৮ জনের মধ্যে থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য প্রাথমিকভাবে মাত্র ৭০৫ জনকে মনোনীত করেছে। মার্স ওয়ান নির্বাচন কমিটি এদের সাথে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য চূড়ান্তভাবে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করবে যারা তৃতীয় রাউন্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
মার্স ওয়ানের প্রধান মেডিক্যাল কর্মকর্তা নরবার্ট ক্রাফট বলেন, ‘দ্বিতীয় রাউন্ডের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করতে পেরে আমরা যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রার্থীদের সম্পর্কে আরও বিশদভাবে জানার সুযোগ পাব যারা এই বিপদসঙ্কুল যাত্রায় নিজেদের নাম লিখিয়েছেন। প্রার্থীদেরকে তাদের জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, খাপ খাইয়ে নেবার ক্ষমতা এবং ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করতে হবে।’ মার্স ওয়ান কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে সংবাদ মাধ্যমগুলোর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন যাতে করে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর অভিমত ও সাক্ষাৎকার বিশ্ববাসী জানতে পারে। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য মার্স ওয়ান কর্তৃপক্ষ অংশগ্রহণকারীদের মার্চ ২০১৪ এর মধ্যে দুটি কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়: চিকিৎসক কর্তৃক সুস্বাস্থ্যের প্রত্যয়নপত্র জমা দেয়া এবং ব্যক্তিগত প্রোফাইল জনসমক্ষে প্রকাশ করা।
যারা উভয় কাজ সুসম্পন্ন করতে পেরেছে এমন ৪১৮ জন পুরুষ ও ২৮৭ জন নারী দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রাথমিকভাবে মনোনীত হন। সর্বমোট ৭০৫ জন মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে আমেরিকা থেকে ৩১৩ জন, ইউরোপ থেকে ১৮৭ জন, এশিয়া থেকে ১৩৬ জন, আফ্রিকা থেকে ৪১ জন এবং ওশেনিয়া থেকে ২৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করতে হবে। মার্স ওয়ানের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যারা এই বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে ৪০-৫০ বছরের মধ্যে অংশগ্রহণকারীরা ব্যক্তিগত কারণে এবং ২০-৩৫ বছরের মধ্যে অংশগ্রহণকারীরা শারীরিক কারণে অনুপযুক্ত ছিলেন।

মঙ্গল কলোনীর পথে বাংলাদেশীরা
লাবণ্য নির্জনলুলু ফেরদৌসসালমা মেহের ঐশীদ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত ৭০৫ জনের মধ্যে রয়েছেন চারজন বাংলাদেশী। হেলথ চেকআপের ভিত্তিতে যারা নিজেদের যোগ্য প্রমানিত করেছেন এই মঙ্গল যাত্রায়। তারা হলেন: সালমা মেহের ঐশী (২৮), লুলু ফেরদৌস (৩৫), মাহফুজুর রহমান (৩২) এবং লাবণ্য নির্জন (২৯)।
আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক সম্পন্ন করা সালমা মেহের ঐশী বর্তমানে একটি বেসরকারি মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ছোটবেলায় পড়া বিজ্ঞান কল্পকাহিনী, মহাকাশ বিষয়ক বিভিন্ন নিবন্ধ, আর মহাকাশচারীদের জীবন তাকে প্রেরণা যুগয়েছে এই মিশনে অংশগ্রহণ করতে। অনন্ত নক্ষত্রবীথির পানে মানুষের এই অভিযাত্রা হয়তো একদিন সত্যিই বাস্তবে পরিণত হবে বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা লুলু ফেরদৌস ছোটবেলা থেকেই আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন দেখে আসছেন। বিমানচালনা বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য তিনি ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ২০১২ সালে ‘এয়ার ট্রান্সপোর্টেশন এডমিনিস্ট্রেশন’ ডিগ্রি নিয়ে ওমাহার ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাসকা থেকে গ্র্যাজুয়েট হন। পরবর্তীতে নাসা নেব্রসকা স্পেস গ্রান্ট কনসোর্টিয়ামে গবেষণা সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি এরোস্পেস সায়েন্সে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনে পড়াশোনা করছেন।
অন্য দুইজন প্রতিযোগীর মধ্যে মাহফুজুর রহমান রংপুর শহরে বসবাস করেন এবং লাবণ্য নির্জন বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।

পরবর্তী বাছাই প্রক্রিয়া
তৃতীয় রাউন্ড হচ্ছে আঞ্চলিক বাছাই রাউন্ড, যা টিভি এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে দর্শকদের দেখানো হবে। এখানে অঞ্চলভিত্তিক ২০-৪০ জন আবেদনকারীকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করা হবে, যেখানে মঙ্গল মিশনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের উপযুক্ততা যাচাই করা হবে। দর্শকরা প্রতি অঞ্চল থেকে একজন করে প্রার্থী নির্বাচন করবে এবং মার্স ওয়ান কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত প্রার্থীদের বাছাই করবে।
চতুর্থ রাউন্ডে উত্তীর্ণ প্রত্যেককে ইংরেজিতে যোগাযোগে সক্ষম হতে হবে। এই বাছাই প্রক্রিয়াটি সারা বিশ্বে প্রদর্শন করা হবে। কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা প্রার্থীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক গল গঠন করবে, যাদেরকে রূঢ় অবস্থায় টিকে থাকার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে এবং কঠিন অবস্থায় দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। দলগুলোকে মঙ্গলের অনুরূপ পরিবেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। এভাবে চারজন সদস্য নিয়ে গঠিত ছয়টি পৃথক দল বাছাই করা হবে যারা চিরস্থায়ীভাবে মার্স ওয়ান নভোচারী হিসেবে কাজ করবে। যদি এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যথোপযুক্ত ও যোগ্য অভিযাত্রী পাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে পুনরায় এই বাছাই প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে পূর্বে মঙ্গল অভিযানে অংশ নেয়া মহাকাশযানগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই কৌশলগত সমস্যার কারণে ব্যর্থ মিশনে পরিণত হয়েছিল। তাই নানা সংশয় আর অনিশ্চয়তা নিয়ে মার্স ওয়ানের এই অদম্য ও একমুখী অভিযাত্রা কতোটা সম্ভাবনার মুখ দেখবে তা বিজ্ঞানীরা এখনো স্পষ্টভাবে নির্ধারণ না করতে পারলেও মহাজাগতিক সভ্যতা গড়ার লক্ষ্যে দুঃসাহসী মানুষদের পৃথিবীর বাইরে অভিযানের এটি একটি শুভ সূচণা হলেও হতে পারে। আর মহাজাগতিক সভ্যতা বিস্তারের এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণও স্বর্নজ্জ্বোল হয়ে থাকার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। হয়তো সুদূর ভবিষ্যতে মহাকাশই হবে আমাদের পরবর্তী ঠিকানা আর ভবিষ্যত প্রজন্ম পৃথিবীর বাইরে থেকেই গভীর উৎসাহ নিয়ে তাদের আদিম বাসস্থানকে খুঁজে ফিরবে।

 





আর্কাইভ

মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার খোঁজেজেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম রঙীন ছবি প্রকাশ
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথম চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স এর জীবনাবসান
মঙ্গলে ইনজেনুইটি’র নতুন সাফল্য
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আফ্রিকায় ৫০ বছর পরে নতুনভাবে হস্তিছুঁচোর দেখা মিলল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা