সর্বশেষ:
ঢাকা, নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১

cosmicculture.science: বিজ্ঞানকে জানতে ও জানাতে
শনিবার ● ২২ জুন ২০১৩
প্রথম পাতা » স্থানীয় বিজ্ঞান সংবাদ » গন্তব্য সুন্দরবন নয়, নক্ষত্র আকাশ - ডিসকাশন প্রজেক্টের বিজ্ঞান আয়োজন
প্রথম পাতা » স্থানীয় বিজ্ঞান সংবাদ » গন্তব্য সুন্দরবন নয়, নক্ষত্র আকাশ - ডিসকাশন প্রজেক্টের বিজ্ঞান আয়োজন
৪৭৯ বার পঠিত
শনিবার ● ২২ জুন ২০১৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গন্তব্য সুন্দরবন নয়, নক্ষত্র আকাশ - ডিসকাশন প্রজেক্টের বিজ্ঞান আয়োজন

গন্তব্য সুন্দরবন নয়, নক্ষত্র আকাশ

বুড়িগঙ্গা থেকে শীতলক্ষ্যা হয়ে আমাদের লঞ্চ ছুটে চলছে পদ্মার বুক চিরে। বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা দু’পাড়ের শিল্প নগরীর নিয়ন ও সোডিয়ামের হলুদ আলো রাতের পরিবেশকে করে তুলেছে আরও শৈল্পিক। রাতে যখন পদ্মায় এসে পড়লাম বিশাল জলরাশির দু’ধারের গ্রামগুলো থেকে আসা দুর্বল আলোকরশ্মি কুয়াশার বাধা পেরিয়ে আর আমাদের কাছে আসতে পারল না। এদিকে রাতের গভীরতার সঙ্গে বাতাসের তাপমাত্রাও কমে যাচ্ছে। আর বাতাসের জলীয়বাষ্প আরও ভারি হয়ে কুয়াশায় রূপ নিয়ে নদী জলের পৃষ্ঠের দিকে নেমে যাচ্ছে।
সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে সদরঘাট হাইস্পিড ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করেছি। ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজের সুন্দরবন ভ্রমণ। তবে ডিসকাশন প্রজেক্ট যাচ্ছে গ্যালিলিও গ্যালিলি ৩৭০তম মৃত্যুবার্ষিকী এবং স্টিফেন হকিংয়ের ৭০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে। ডিসকাশন প্রজেক্টের একটি দলের সঙ্গে যাচ্ছে চার ইঞ্চি প্রতিফলন টেলিস্কোপ আর গ্যালিলিয়ান টেলিস্কোপ ছাড়াও রয়েছে বিজ্ঞানের ডকুমেন্টারি। এছাড়াও ইম্পেরিয়াল কলেজের প্রকৃতির টানে ছুটে চলা প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী। ব্রিফ হিস্টোরি অফ টাইমের লেখক তাত্তি্বক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের মতে, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এতো বিশাল অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেনি। এরিস্টটলীয় নিশ্চল পৃথিবীর ধারণা তিনিই টলিয়ে দিয়েছিলেন।
৩৭০তম মৃত্যুবার্ষিকী আর মাত্র ২৩ ঘণ্টা পর। আমার সহযাত্রী ইম্পেরিয়াল কলেজের ইংরেজির প্রভাষক সুমনা বিশ্বাসের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ শেষে আরও জন পনেরো সহযাত্রী, যারা ডিসকাশন প্রজেক্ট-ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজ শাখার বিজ্ঞান কর্মী। সবাই মিলে টেলিস্কোপ নিয়ে জাহাজের ছাদে পৌঁছালাম। কুয়াশার চাদর কেটে পদ্মার জলরাশির উপর দিয়ে ছুটে চলা নিজেদেরকে মহাসাগরের পথে মনে হচ্ছিল। আকাশের দিকে তাকালে সামনে ও পেছনে অসংখ্য আলোক বিন্দুর মধ্যে সবচেয়ে কাছে যাকে দেখা যাচ্ছিল তা কোন নক্ষত্র নয়। সে আমাদের-ই এক প্রতিবেশী বৃহস্পতি। গন্তব্য সুন্দরবন হলেও ওই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছিল আমরা বৃহস্পতির দিকেই যেন ছুটছি। স্তব্ধ-নীরবতার মধ্যে একটা মাত্র শব্দ কানে ভেসে আসছে আর তা ইঞ্জিন রুম থেকে। এর বাইরে আমাদের আলোচনার শব্দ। মাঝে মধ্যে লঞ্চের তলা ডুবোচরে ঠেকে গেলে কেমন ধাক্কা লাগে। আমরাও জড়তার কারণে সামনে পেছনে ঝুঁকে পড়ছিলাম। মহাকর্ষীয় বলের আবিষ্কারক আইজ্যাক নিউটনের আগে এ ব্যাপারটার ব্যাখ্যা কেউই দিতে পারেননি। নানা আলোচনা আর নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের মধ্যদিয়ে প্রকৃতির সবুজের পরিবর্তে সবার মন ছুটে চলেছে আকাশের ওই নক্ষত্রের দিকে যেখানে আমাদের গঠনকারী ভারি মৌলগুলো উৎপন্ন হয়। এই নক্ষত্রগুলোই যে বার বার আমাদের ডাকে। কেননা আমরা হলাম নক্ষত্রের-ই সন্তান। কেমন একটা ঘোরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলাম। মহাকাল যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। ভোররাত চারটার সময় সবাইকে বিদায় জানিয়ে নিজের কেবিনে এসে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম তা, টেরও পেলাম না!
ঘুম ভাঙ্গার সঙ্গে যেন রাতের সে স্বপ্নও ভেঙে গেল। একদিকে স্বপ্ন ভেঙে বাস্তবে ফেরার হতাশা আর অন্যদিকে নদীর বুকে সূর্যরশ্মির জেগে ওঠার অপার সৌন্দর্য। উত্তেজনা শীতকে হার মানাল। লক্ষ্য করলাম বিরাণ পদ্মার বুকে কে যেন সগৌরবে ভেসে বেড়াচ্ছে। কাছে আসলে বুঝতে পারলাম আমাদের আগে আসা ভ্রমণকারীদের ফেলে দেয়া জলের বোতল। মনটা খারাপ হয়ে গেল। সন্ধ্যায় ২০ মিনিটের একটা আলোচনা সভা হলো ঝধাব ঊহারৎড়হসবহঃ, ঝধাব ঊধৎঃয শিরোনামে। রাতে আবার নক্ষত্রের অপার্থিব সৌন্দর্যের হাতছানি। কখন যে সময় কেটে গেল বুঝতেও পারলাম না। অবশ্য সুমনা দিদি গ্যালিলিয়ান টেলিস্কোপ দিয়ে এক ঘণ্টা ধরে বৃহস্পতির দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তিনি তার এ সময়ের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘এ সময় আমার মনে হচ্ছিল আমরা শূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছি আর মাঝে মধ্যে ভারি কুয়াশাগুলো যখন আমাদের ছুয়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল মেঘের ওপর দিয়ে যাচ্ছি আর টেলিস্কোপে বৃহস্পতিকে হীরার মতোই লাগছিল। আর তাও বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর মৃত্যুবার্ষিকীতে একটা গ্যলিলিয়ান প্রতিসরণ টেলিস্কোপ দিয়ে।’
আট জানুয়ারি, এ দিনটা মানব সভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। কেননা ১৬৪২ সালের এ দিনে মানবসভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম এক চরিত্র দীর্ঘ নয় বছরের কারা ও গৃহবন্দীত্ব শেষ করে জীবন থেকে চির বিদায় নেন। আর এর ঠিক ৩০০ বছর পরে আরেক বিজ্ঞান অভিযাত্রী স্টিফেন হকিংয়ের জন্ম হয়। তিনি নিজেকে গ্যালিলিওর উত্তরসূরি মনে করেন। ভ্রমণের পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে কটকা-জামতলা বন পরিদর্শন ও সৈকত ভ্রমণের সঙ্গে যোগ হলো গ্যালিলিয়ান প্রতিসরণ টেলিস্কোপ দিয়ে ফিল্টার কাচ ব্যবহার করে সূর্য দেখা। এ সময় ডিসকাশন প্রজেক্টের বিজ্ঞানকর্মীরা বনে পর্যটকদের ফেলে আসা পানির বোতল, চকোলেট, চিপস, বিস্কুট, চানাচুরের প্যাকেট কুড়িয়ে আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান অর্থাৎ ডাস্টবিনে ফেলে বন ও পরিবেশ রক্ষার কাজে অংশগ্রহণ করে। সন্ধ্যায় শিল্পী রেজোয়ান আলীর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় গ্যালিলিওর ৩৭০তম মৃত্যুবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান। ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজ সাংস্কৃতিক ক্লাব নন্দন কাননের দলীয় পরিবেশনায় রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ এর পরপর-ই জ্যাকব ব্রনোওস্কির তৈরি করা ‘চার্চের বিচার’ ডকুমেন্টারির প্রদর্শনী ও সুমনা বিশ্বাসের গ্যালিলিও গ্যালিলির ওপর বিশেষ প্রবন্ধ পাঠ। এদিন সন্ধ্যায় আরও একজনের কথা স্মরণ করা হয় আর তিনি হলেন জিওর্দানো ব্রনোকে। এরপর এক মিনিট দাঁড়িয়ে এই তিন মহান সাধকদের সম্মানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহফজুল হক বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘গ্যালিলিও আমাদের জন্য আদর্শ। তার আত্মত্যাগ আমাদের প্রেরণা। তাদের আত্মত্যাগের কারণেই আমরা আজকের সভ্যতাকে পেয়েছি। তাদের প্রতি আমাদের এ সভ্যতা ঋণী।’ তিনি আট জানুয়রির সব কার্যক্রমকে এ দুই বিজ্ঞানীর সম্মানে উৎসর্গ করেন। এর পর ডিসকাশন প্রজেক্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বিজ্ঞান প্রচার ও প্রসারে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে তারা অনেক বেশি কাজ করছে। এখন থেকে আমরা তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।’ এদিকে ডিসকাশন প্রজেক্টের পক্ষ থেকে বিজ্ঞান লেখক খালেদা ইয়াসমিন ইতি জানিয়েছেন, গ্যালিলিও স্মরণে এ উদ্যোগটি আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞান সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি যৌথভাবে কাজ করতে পারে তাহলে বিজ্ঞানচর্চা এগিয়ে যাবে এবং কুসংস্কার এমনিই কেটে যাবে।’ এরপর প্রতি রাতেই লঞ্চের ছাদে চলে নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প আর দিনে ফিল্টার কাচে সূর্য পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে ছুটেছি।
#মাজেদুল ইসলাম





স্থানীয় বিজ্ঞান সংবাদ এর আরও খবর

বঙ্গবন্ধু কেমিক্যাল মেট্রোলজি অলিম্পিয়াড ২০২০ স্থগিত করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কেমিক্যাল মেট্রোলজি অলিম্পিয়াড ২০২০ স্থগিত করা হয়েছে
সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার পরিষদের ১৫তম আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসব সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার পরিষদের ১৫তম আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসব
ত্রয়োদশ অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড ২০১৮ ত্রয়োদশ অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড ২০১৮
বড়িশার বড়োবাড়িতে শেষ হল সাবর্ণ সংগ্রহশালার ত্রয়োদশ আসর বড়িশার বড়োবাড়িতে শেষ হল সাবর্ণ সংগ্রহশালার ত্রয়োদশ আসর
ওয়াইডাব্লিউসিএ জুনিয়র হাই স্কুলে আসিফের বিজ্ঞান বক্তৃতা ‘আকাশ ও মহাকাশ এবং মহাবিশ্বে আমরা’ অনুষ্ঠিত ওয়াইডাব্লিউসিএ জুনিয়র হাই স্কুলে আসিফের বিজ্ঞান বক্তৃতা ‘আকাশ ও মহাকাশ এবং মহাবিশ্বে আমরা’ অনুষ্ঠিত
জ্যোতির্বিদ রাধাগোবিন্দ চন্দ্র স্মরণ উৎসব - ২০১৬ জ্যোতির্বিদ রাধাগোবিন্দ চন্দ্র স্মরণ উৎসব - ২০১৬
অনুষ্ঠিত হল ‘একাদশ তম বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড-২০১৬’ অনুষ্ঠিত হল ‘একাদশ তম বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড-২০১৬’
বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত ‘হালিমা-শরফুদ্দীন’ বিজ্ঞান পুরস্কার পাচ্ছেন বিজ্ঞান বক্তা আসিফ বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত ‘হালিমা-শরফুদ্দীন’ বিজ্ঞান পুরস্কার পাচ্ছেন বিজ্ঞান বক্তা আসিফ
প্রথম জাতীয় জীববিজ্ঞান ক্যাম্প অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় জীববিজ্ঞান ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
আবদুল জব্বার সম্মাননা পেলেন ড. আলী আসগর আবদুল জব্বার সম্মাননা পেলেন ড. আলী আসগর

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার খোঁজেজেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম রঙীন ছবি প্রকাশ
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথম চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স এর জীবনাবসান
মঙ্গলে ইনজেনুইটি’র নতুন সাফল্য
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আফ্রিকায় ৫০ বছর পরে নতুনভাবে হস্তিছুঁচোর দেখা মিলল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা