শনিবার ● ২২ জুন ২০১৩
প্রথম পাতা » স্থানীয় বিজ্ঞান সংবাদ » বিন্দু থেকে বিশ্ব: ডিসকাশন প্রজেক্টের ৬০তম ওপেন ডিসকাশন
বিন্দু থেকে বিশ্ব: ডিসকাশন প্রজেক্টের ৬০তম ওপেন ডিসকাশন
একটি মাত্র বিন্দু থেকে কী করে ঘটল মহাবিস্ফোরণ? বিশ্বটা কী আসলেই সরে যাচ্ছে দূরে? কীভাবে সরে যাচ্ছে? এর পেছনে কারণ কি? জোনাকির মতো জ্বলছে যেসব তারকা তারা কারা? এদের উৎপত্তিই বা কোথা থেকে? ওই দূরে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা নক্ষত্রে মানুষের অবচেতন মন বারবার চলে যায়। কারণ সেখনেই যে তার উৎপত্তি। কিন্তু বাধা এ পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ মায়া। এ মায়ার জাল এতটাই প্রবল যে সেকেন্ডে প্রায় ৭.৭ মাইল বেগে ছুটে চলতে না পারলে কখনই তা কাটানো সম্ভব না। এ মায়া কাটিয়ে আজ থেকে ৫৫ বছর আগে ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের উৎক্ষেপিত মহাকাশযান স্পুটনিক-১ প্রথমবারের মতো পৃথিবী মধ্যাকর্ষণ বলের মায়া কাটিয়ে পৃথিবীর চারদিকে কৃত্রিম উপগ্রহ হিসেবে ঘুরতে সক্ষম হয়।
মানব জাতির জন্য এক অনন্য অর্জন। এ অর্জনের ৫৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিজ্ঞান সংগঠন ডিসকাশন প্রজেক্টের উদ্যোগে ১২ অক্টোবর শুক্রবার বিকেল ৪টায় নারায়ণগঞ্জের সুধীজন পাঠাগার আয়োজন করে এক বিজ্ঞান বক্তৃতার। বিন্দু থেকে বিশ্ব (ইরম ইধহম ্ ঞযব টহরাবৎংব) শিরোনামের এ অনষ্ঠানে বিজ্ঞানবক্তা আসিফ বক্তৃতা করেন। ডিসকাশন প্রজেক্টের ৬০তম ওপেন ডিসকাশন, অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থিত দর্শকদের সঙ্গে ডিসকাশন প্রজেক্টকে পরিচয় করিয়ে দেন বিজ্ঞান লেখক ও ডিসকাশন প্রজেক্টের সমন্বয়ক খালেদা ইয়াসমিন ইতি। তিনি বলেন, ১৯৯২ সালের ১৯ মে থেকে ২০ বছর ধরে বিজ্ঞান বক্তৃতার মাধ্যমে আমরা নিজেদের এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে বিজ্ঞানকে পেঁৗছে দেয়ার জন্য কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, ‘ডিসকাশন প্রজেক্ট মৌলিক জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি বিজ্ঞানবিষয়ক বই প্রকাশ করেছি। বর্তমানে আমরা মহাবৃত্ত নামে একটি মৌলিক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী বের করেছি। ইতোমধ্যে যার তিনটি সংখ্যা বের হয়েছে।’
বক্তৃতার শুরুতে আসিফ বলেন, ‘পৃথিবী নামের একটি শ্যামল গ্রহের আধিবাসী আমরা। সেকেন্ডে ১৬ মাইল বেগে সূর্যের চারদিকে ছুটে চলেছি। আর সূর্য পৃথিবীসহ গ্রহগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আন্তঃনাক্ষত্রিক শূন্যতার ভেতর দিয়ে সেকেন্ড ৪২ মাইলগতিতে ধাবমান, আমরা তো মহাজাগতিক পথিক। স্বতঃত মহাবিশ্বের মধ্যে দিয়ে বহমান আমাদের গন্তব্য কী? একটি বিন্দুর মহাবিস্ফোণের মধ্যদিয়ে এ মহাবিশ্বের সূচনা। মহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং হলো এমন একটি ঘটনা যার আগে বর্তমান বিশ্বের পদার্থ, শক্তি, স্থান, কাল একটি মাত্র বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত ছিল। প্রায় ১৫শ কোটি বছর আগে এ বিন্দুর বিরাট বিস্ফোরণের মধ্য দিয়েই মহাবিশ্বের সূচনা। মহাজাগতিক বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল ১ জানুয়ারিতে।’ বিজ্ঞানের ইতিহাসে থেলিসের অবদানকে স্বীকার করে মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্রম ইতিহাস তুলে ধরেন। আয়োনিয়দের অবদানের কথা বিশেষভাবে আলোচনায় আসে। আলোচনায় টলেমির বিশ্বপর্যবেক্ষণ কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক ধারণা, কেপলার ও ডেনমার্কের জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহে গ্রহদের অবস্থান সম্পর্কে সুনিদিষ্ট মতবাদ, গ্রহগতির তিনটি সূত্র ব্যবহার করে বর্তমানে কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর তিনটি সূত্র, জিওর্দানো ব্রুনোর মধ্যযুগীয় কুসংস্কার ও পুরনো চিন্তারদাসত্ব থেকে মানুষকে বিজ্ঞানের আলো নিয়ে আসার সংগ্রাম, আইজাক নিউটনের মহাকর্ষের গাণিতিক মডেল জগতের একটি রূপ দাঁড়ায় বটে। কিন্তু মহাবিশ্বের সত্যিকার একটি গাণিতিক মডেল পেতে আলবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তাকে প্রথম সার্থকভাবে ব্যবহার করে রুশ পদার্থবিজ্ঞানী আলেক্সান্দার ফ্রিডম্যান। ১৯২২ সালে ফ্রিডম্যান মহাবিশ্ব সমপর্কে দুটি স্বতঃসিদ্ধ নিয়ে প্রসারণশীল এক মহাবিশ্বের রূপ আমাদের সামনে উঠে আসে। এরপর স্টান্ডার্ড বিগ ব্যাং মডেল এবং হিগস বোসন কণা নিয়ে কথা বলেন আসিফ। বক্তৃতার সঙ্গে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে স্ক্রিনে প্রয়োজনীয় ছবি ভেসে ওঠে। তারপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। পুরো অনুষ্ঠানটিতে সহযোগিতা করেন জাহাঙ্গীর সুর, মাজেদুল হাসান, সামি, শরীফউদ্দিন সবুজ, ডা. ফরহাদ আহমেদ জেনিথ।
আয়োজক সুধীজন পাঠাগারের পক্ষ থেকে আসজাদুল কিবরিয়া বলেন, ‘মানুষ অজানাকে জানতে চায়। তাই বইয়ের জ্ঞানের পাশাপাশি বিজ্ঞান বক্তৃতার আয়োজন করে সবার মাঝে জ্ঞান-বিজ্ঞানকে ছড়িয়ে দিতে চাই। আর সেজন্যই এই বক্তৃতার আয়োজন।’ বিজ্ঞান বক্তা আসিফ বক্তৃতার উপসংহারে বলেন, ১৯৯০ সালে ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সাগানের অনুরোধে নাসা ভয়েজারকে একবারের জন্য পৃথিবীর দিকে পেছন ফিরায়, পেছন ফিরে ভয়েজার একটি মাত্র ছবি তুলে যাত্রাকরে আন্তঃনাক্ষত্রীয় শূন্যতায়। সেই ছবিটাতে দেখা যায় অন্ধকারের মাঝে কয়েকটা’ আলোক-রেখা। তার মাঝে মলিন একটা বিন্দু। কার্ল সাগানের ভাষায়, ‘পেল বস্নু ডট’। আর ওই বিন্দুটাই আমাদের পৃথিবী। এই ছবি মানব সভ্যতাকে মনে করিয়ে দেয় মহাজাগতিক পরিম-লে মানুষের অবস্থান কত নগণ্য ও তুচ্ছ। আসিফ বলেন, তারপরও এই নগণ্য ও তুচ্ছ আমরা মহাবিশ্বের মহারূপ সম্পর্কে জানতে চাই। এটা নির্ভর করছে আমাদের টিকে থাকার ওপর। মানবিক বোধের বিকাশই পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখতে পারে। আসুন আমরা মানিবক বোধের বিকাশ ঘটাই।
#বিজ্ঞপ্তি