শুক্রবার ● ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » সূর্যগ্রহণ » ক্রান্তিবৃত্ত বা সৌরপথ (Ecliptic)
ক্রান্তিবৃত্ত বা সৌরপথ (Ecliptic)
পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘূর্নায়মান বলে আমাদের কাছে মনে হয় সূর্য যেন তারামন্ডলগুলোর ভেতর দিয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে পরিভ্রমন করছে। সূর্যের এই কল্পিত পথকে বলা হয় ক্রান্তিবৃত্ত বা Ecliptic। সূর্যের এই আপাতভ্রমনের মূলে আছে কক্ষপথে পৃথিবীর পরিক্রমা। তাই ক্রান্তিবৃত্ত হচ্ছে আকাশে পৃথিবীর কক্ষপথের প্রতিচ্ছবি। যদি আকাশগোলকটি একটি বড় গোলাকার পর্দা হতো, যার মাঝখানে আছে সূর্য, তবে কক্ষপথে পরিক্রমার সময় ওই পর্দার ওপর পৃথিবীর কক্ষথের যে ছায়া পড়ত, তাই হতো ক্রান্তি বৃত্ত। সূর্য এই পথে স্থির তারাদের পটভূমিতে রেখে, দিনে ১ ডিগ্রী করে পূর্ব দিকে এগোয়। সম্পূর্ণ বৃত্ত বা ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে আসতে সূর্যের সময় লাগে ৩৬৫.২৬ দিন বা এক বছর। পৃথিবী আবর্তিত হচ্ছে তার অক্ষের উপর, এভাবে আবর্তনরত অবস্থায় পৃথিবী তার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে সূর্যকে। পৃথিবী সাড়ে ২৩ ডিগ্রী হেলানো অবস্থায় তার কক্ষপথে পরিভ্রমনরত বলে ক্রানি-বৃত্তও সাড়ে ২৩ ডিগ্রী হেলে থাকে আকাশগোলকের বিষুবরেখার ওপর। ক্রান্তিবৃত্তকে আকাশগোলকের বিষুবরেখার ওপর স্থাপন করলে তারাও সাড়ে ২৩ ডিগ্রী কোণ তৈরি করে।
আকাশগোলকের বিষুবরেখা আর ক্রান্তিবৃত্ত আকাশে যে দুটি স্থানে পরস্পরকে ছেদ করে তাদেরকে বলা হয় বিষুব বা Equinox। সূর্য যে স্থানে আকাশগোলকের বিষুবরেখাকে ছেদ করে উত্তরের দিকে এগোয় তাকে বলা হয় মহাবিষুব বা বসন্ত বিষুব বা Vernal Equinox। আবার সূর্য যে স্থানে আকাশগোলকের বিষুবরেখাকে ছেদ করে দক্ষিণের দিকে এগোয় তাকে বলা হয় জলবিষুব বা শারদবিষুব বা Autumnal Equinox। সূর্য বসন্ত বিষুব অতিক্রম করে ২১ মার্চ বা কাছাকাছি সময়ে এবং শারদবিষুব অতিক্রম করে ২২ সেপ্টেম্বর বা কাছাকাছি সময়ে, উভয় সময়েই পৃথিবীতে দিন-রাত্রির পরিমাণ সমান হয়ে থাকে। বসন্ত বিষুব অতিক্রম করে সূর্য যখন উত্তরে যেতে থাকে তখন উত্তর গোলার্ধে শুরু হয় বসন্তকাল, সূর্য যখন পৌঁছে উত্তরায়ণে তখন গ্রীষ্ম, সূর্য যখন শারদবিষুব অতিক্রম করে দক্ষিণে যেতে থাকে তখন শুরু এবং সবশেষে যখন সূর্য একেবারে দক্ষিণে পৌঁছে তখন শীতকাল। এখানে দেখা যেতে পারে ২২ জুন বা কাছাকাছি সময়ে সূর্য যখন একেবারে উত্তরে পৌঁছে যায় তখন তাকে বলা হয় উত্তরায়ণ বা গ্রীষ্মায়ণ বা Summer Solstice। একইভাবে ২২ ডিসেম্বর বা কাছাকাছি সময়ে সূর্য যখন একেবারে দক্ষিণে পৌঁছে যায় তখন তাকে বলা হয় দক্ষিনায়ণ বা শীতায়ণ বা Winter Solstice। পৃথিবীর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার বলে সূর্যের সাথে এর দূরত্ব কখনো বাড়ে আবার কখানো কমে। পৃথিবী থেকে সূর্যের নিকটতম দূরত্বকে বলা হয় অনুসূর বা Perihelion এবং দূরতম দূরত্বকে বলা হয় অপসূর বা Aphelion।