বুধবার ● ১৭ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » অতীতের সূর্যগ্রহণসমূহ » ২১ জুন বাংলাদেশ থেকে দৃশ্যমান আংশিক সূর্যগ্রহণ
২১ জুন বাংলাদেশ থেকে দৃশ্যমান আংশিক সূর্যগ্রহণ
আগামী ২১ জুন ২০২০ বাংলাদেশে থেকে দৃশ্যমান হবে আংশিক সূর্যগ্রহণ। আকাশ মেঘমুক্ত থাকা সাপেক্ষে এই মহাজাগতিক ঘটনাটি অবলোকন করা যাবে। ৩ ঘন্টা ২৯ মিনিট স্থায়ী এই আংশিক সূর্যগ্রহণ শুরু হবে বাংলাদেশ স্থানীয় সময় সকাল ১১:২৩:০১ টায়, সূর্যগ্রহণটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে দুপুর ০১:১২:২৯ টায় এবং আংশিক সূর্যগ্রহণ শেষ হবে দুপুর ০২:৫২:০৫টায়।
সূর্যগ্রহণ একটি মহাজাগতিক ঘটনা। যা সুদূর অতীত থেকে আজও পর্যন্ত মানুষকে আকৃষ্ট করছে। এই জাতীয় ঘটনা বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের আদিম কুসংস্কার বা অতিপ্রাকৃত জগতের সাথে যোগসূত্র ঘটানোর তেমন প্রয়াস পায় না বরং আধুনিকায়নের সাথে সাথে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ও যৌক্তিক আকাঙ্খারই সহজাত জিজ্ঞাসার নিবৃত্তি ঘটানোর সুযোগ করে দেয়।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ২১ জুন উত্তর গোলার্ধের সবেচয়ে বড় দিন, যা কর্কটক্রান্তি দিবস হিসেবেও পরিচিত। এদিন সূর্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে অবস্থান করে। কর্কটক্রান্তি রেখা বা অক্ষাংশ বাংলাদেশের মধ্যভাগ দিয়ে অতিক্রম করেছে। এই দিনে সূর্য উত্তরায়নের শেষ সীমাও সংঘটিত হয়। উত্তর গোলার্ধে সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার ঠিক উপরে লম্বভাবে ৯০ ডিগ্রি কোণে থাকে কিন্তু এসময় দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্য ৪৩ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে।তাই ২১ জুন উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় অর্থাৎ ১৪ ঘণ্টা এবং রাত সবচেয়ে ছোট অর্থাৎ ১০ ঘণ্টা হয়ে থাকে। ফলে ঐদিন উত্তর গোলার্ধে সর্বাপেক্ষা অধিক এবং দক্ষিণ গোলার্ধে সর্বাপেক্ষা কম সৌরতাপ গ্রহণ করে।
সূর্যগ্রহণ ঘটে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে চাঁদ অবস্থান করায়। যদিও সূর্যের চেয়ে চাঁদ অপেক্ষাকৃত অনেক ছোট এবং সূর্য চাঁদের তুলনায় পৃথিবী থেকে চারশ গুণ বেশি দূরত্বে ও আকারেও প্রায় চারশ গুণ বড়। ফলে পৃথিবীর আকাশে চাঁদ ও সূর্যকে একই সমান দেখায় অর্থাৎ পৃথিবী থেকে উভয়েরই কৌণিক আকার সমান, ০.৫ ডিগ্রী। ফলে চাঁদের ছায়া সূর্যকে পুরোপুরি আবৃত করে ফেলতে পারে এবং সূর্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। তবে চাঁদের কক্ষপথের অবস্থানের প্রেক্ষিতে নির্ভর করে সূর্যগ্রহণটি পূর্ণ নাকি আংশিক নাকি বলয় ঘটবে। চন্দ্রপথ সৌরপথের ওপর ৫ ডিগ্রী কোণে হেলে থাকে বলে কেবলমাত্র শুধু দুটি জায়গাতেই তারা পরস্পরকে ছেদ করে এবং সূর্যগ্রহণ ঘটে। পৃথিবীকে ঘিরে চাঁদের কক্ষপথ আর সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর কক্ষপথ যদি একই সমতলে থাকতো তবে প্রতিমাসের প্রতি অমাবস্যাতেই চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে অবস্থান করত এবং সূর্যগ্রহণ ঘটতো। কিন্তু চাঁদের কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথের থেকে ৫ ডিগ্রী হেলে থাকে বলেই চাঁদ সাধারণত পৃথিবী ও সূর্যের রেখা ও পৃথিবীর ছায়ার কিছুটা ওপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়। তাই শুধুমাত্র চন্দ্রপথ ও সৌরপথের ছেদবিন্দুর দুটি জায়গাতেই গ্রহণ সম্পন্ন হয়। তবে এক্ষেত্রে তখনই গ্রহণ ঘটবে যখন ছেদবিন্দু দুটির রেখা সূর্যের সোজাসুজি থাকবে। আংশিক সূর্যগ্রহণে চাঁদ সম্পূর্ণভাবে সূর্যকে আড়াল করতে পারে না।
তবে সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কখনো খালি চোখে সরাসরি সূর্যের দিকে তাকাবেন না এবং টেলিস্কোপ বা দূরবীন ব্যবহার করলে যথাযথ ফিল্টার ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু কোন ফিল্টার দিয়েই একনাগাড়ে বেশিক্ষণ তাকানো ঠিক নয়। অন্যথায় চোখ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কেউ কেউ এক্সরে প্লেটের কালো অংশ, রোদ চশমা বা সাধারণ কালো কাচ ব্যবহার করে থাকেন, কিন্তু এগুলোও সূর্যরশ্মি আটকাতে পারে না, ফলে চোখের ক্ষতি হয়। তবে ১৩ ও ১৪ গ্রেডের ওয়েল্ডিং গ্লাস কিংবা বড় পাত্রে পানি নিয়ে সূর্যের প্রতিচ্ছবি অবলোকন করতে পারেন। পাশাপাশি হাতে তৈরি পিনহোল ক্যামেরা দিয়ে কোনো কাগজ বা পর্দার ওপর সূর্যের প্রতিবিম্ব ফেলেও গ্রহণ দেখা যেতে পারে।
সূর্যগ্রহণ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যে জানতে যোগাযোগ করতে পারেন, কসমিক কালচার: ০১৯১৪৪৩৪৩৮০, ০১৫৫৩৪৪০৯০৬ এই নম্বরে অথবা ইমেইল করুন: [email protected] এই ঠিকানায়।