

শুক্রবার ● ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » সূর্যগ্রহণ » সূর্য গ্রহণের ক্রিয়া কৌশল
সূর্য গ্রহণের ক্রিয়া কৌশল
সকল সূর্যগ্রহণই ঘটে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে চাঁদ অবস্থান করায় এবং পৃথিবীর উপর চাঁদের ছায়া পতিত হওয়ায়। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে চাঁদের সরাসরি বা আংশিক অবস্থান এবং পৃথিবীর কোন অঞ্চল থেকে ঘটনাটি দেখা হচ্ছে তার উপর সূর্যগ্রহণের প্রকার নির্ভর করে। এখানে বর্ণনা করা হয়েছে সূর্যগ্রহণ কিভাবে ঘটে এবং চাঁদের অবস্থান ভেদে গ্রহণের তারতম্যের বিস্তারিত।
এখানে যে চিত্রগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকৃত মাপের নয়। কারণ সৌরজগত এতোটাই বড়! উদাহরণস্বরূপঃ সূর্যের অবস্থান আমাদের থেকে ৯২ মিলিয়ন মাইল দূরে কিন্তু একটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবীর উপর পতিত প্রচ্ছায়ার প্রস্থ মাত্র কয়েক মাইল।
পূর্ণ সূর্যগ্রহণ
পূর্ণ সূর্যগ্রহণ তখনই ঘটে থাকে যখন সূর্য চাঁদ দ্বারা পুরোপুরি ঢেকে যায়। চিত্রে দেখানো হয়েছে পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় আসলেই কি ঘটে। এখানে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে চাঁদ তার উপবৃত্তাকার কক্ষপথের এমন স্থানে অবস্থান করে (অমবস্যার সময়) যখন চাঁদ ও পৃথিবীর ব্যবধান অপেক্ষাকৃত কম থাকে। ফলে চাঁদ পৃথিবীর উপর ছায়ার সৃষ্টি করে। প্রচ্ছায়া হলো তাই যখন চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আড়াল করে রাখে। পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময়, চাঁদ পৃথিবীর অপেক্ষাকৃত কাছে চলে আসে যা প্রচ্ছায়া হিসেবে পৃথিবীতে পতিত হয়। গাণিতিকভাবে বলতে গেলে এর উজ্জ্বলতা হয় ১.০০০ বা তার চেয়েও বেশি। প্রচ্ছায়ার মাঝে অবস্থিত মানুষের কাছে তখন মনে হয় চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে রেখেছে - আর এটাই পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। যদিও পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সৌন্দর্য্যর মাঝে লুকায়িত থাকে না সূর্যের অস্পষ্ট করোনা ও অন্যান্য সৌর বৈশিষ্ট্যগুলো।
আংশিক সূর্যগ্রহণ
আংশিক সূর্যগ্রহণ তখনই ঘটে থাকে যখন সূর্য চাঁদ দ্বারা আংশিকভাবে ঢেকে থাকে। চিত্রে খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রচ্ছায়ার বাইরে কিছু অংশ রয়েছে, যেখানে সূর্য আংশিকভাবে চাঁদ দ্বারা আচ্ছাদিত, যা উপচ্ছায়া নামে পরিচিত এবং তা প্রচ্ছায়ার তুলনায় আরও বেশি বিস্তৃতি নিয়ে পৃথিবীকে আচ্ছাদিত করে রাখে।
বলয় সূর্যগ্রহণ
বলয় সূর্যগ্রহণের বেলায় চাঁদ সূর্যের কেন্দ্রকে ঢেকে ফেলে কিন্তু সূর্যের কিনারা অনাবৃত থাকে এবং সূর্যের কিনারা ঘেঁষে একটি বলয় দৃশ্যমান হয়। এক্ষেত্রে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরবর্তী অবস্থানে থাকায় প্রচ্ছায়া হ্রস্ব হয়ে থাকে। আংশিক সূর্যগ্রহণ থেকে এক্ষেত্রে এটাই তফাত যে চাঁদ সূর্যের ঠিক সম্মুখভাগে অবস্থান করে এবং ছায়ার কেন্দ্রস্থলে থাকে সূর্য।
সংকর সূর্যগ্রহণ
এই প্রকারের গ্রহণে একই সাথে পৃথিবীর কিছু অংশ থেকে বলয়গ্রহণ এবং কিছু অংশ থেকে পূর্ণগ্রহণ দেখা যায়। এক্ষেত্রে চাঁদ পৃথিবী থেকে অধিক দূরত্বে থাকায় প্রচ্ছায়া পুরোপুরি পৃথিবীতে পৌঁছতে পারে না। ফলে গ্রহণের শুরুতে পৃথিবীর পশ্চিম অংশ থেকে বলয়গ্রহণ প্রত্যক্ষ করা যায় যেহেতু সেখানে কেবল দিনের সূচনা হচ্ছে। চিত্র অনুযায়ী, গ্রহণের চলন পথের উপর এবং নিচের অংশের পর্যবেক্ষণকারী বলয়গ্রহণ প্রত্যক্ষ করবেন। যেহেতু গ্রহণের পথ পরিবর্তিত হচ্ছে তাই গ্রহণের চলন পথের কেন্দ্রে অবস্থিত কোন পর্যবেক্ষণকারীর কাছে তা পূর্ণগ্রহণ মনে হবে। আবার যারা এই গ্রহণের চলন পথের কাছাকাছি অবস্থিত, কিন্তু এর মধ্যে নয় তাদের কাছে এটিকে মনে হবে আংশিক গ্রহণ। চাঁদ পৃথিবী থেকে খুব দূরে অবস্থান করায় এক্ষেত্রে দৃশ্যমান পূর্ণগ্রহণ হবে খুবই সংক্ষিপ্ত।
শব্দার্থ
প্রচ্ছায়া: গ্রহণের সময় পৃথিবী বা চাঁদের ছায়া
উপচ্ছায়া: গ্রহণের পূর্ণ বা কাল ছায়ার চারিদিকে আংশিক বা ঈষদন্ধকার ছায়া।