শুক্রবার ● ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: প্রত্নতত্ত্ব » মানবসদৃশ নতুন প্রজাতির সন্ধান: পাল্টে যেতে পারে মানুষের আদি ইতিহাস
মানবসদৃশ নতুন প্রজাতির সন্ধান: পাল্টে যেতে পারে মানুষের আদি ইতিহাস
বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সমাধি গুহা থেকে মানবসদৃশ নতুন একটি প্রজাতির দেহাবশেষের সন্ধান পেয়েছেন। এই আবিস্কারে দেহাবশেষের ১৫টি অংশ পাওয়া গেছে, যা আফ্রিকায় এর আগে এককভাবে পাওয়া আবিস্কারের মধ্যে সবচেয়ে বড়। গবেষকরা মনে করছেন এই আবিস্কার আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে ধারণাই পাল্টে দেবে।
জার্নাল ‘ইলাইফ’-এ প্রকাশিত এই গবেষণা প্রবন্ধে আরও উল্লেখ করা হয় এই প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান পালনের অভ্যেস ছিল। নালেডি নামে অভিহিত এই প্রজাতিটির গণ হচ্ছে হোমো, আধুনিক মানুষও এই গণের অন্তর্ভূক্ত। তবে যে সকল গবেষকরা এই আবিস্কার করেছেন তারা নিশ্চিতভাবে জানেন না হোমো নালেডি ঠিক কত আগে পৃথিবীতে বাস করত। গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক লী বার্জার বিবিসিকে জানান,সম্ভবত হোমো গণের প্রথম প্রজাতি ছিল এরাই এবং এরা আজ থেকে ৩০ লক্ষ বছর পূর্বে পৃথিবীতে বাস করত। তিনি আরও দাবি করেন,হোমো নালেডি সম্ভবত আদিম দু’পেয়ে প্রাইমেট ও আধুনিক মানুষের মধ্যবর্তী কোনো প্রজাতি।
অধ্যাপক লী বলেন,‘কর্মোসম্পাদনের ২১ দিনের পরে আমরা আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মানুষের সাথে অধিক সম্পর্কযুক্ত প্রজাতির সবচেয়ে বৃহৎ জীবাশ্ম আবিস্কার করেছি। এটি ছিল আমাদের জন্য একটি ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা।’
দেহাবশেষের ১৫টি অংশের মধ্যে বিভিন্ন বয়সের যেমন সদ্যোজাত থেকে বয়স্ক পুরুষ ও নারী উভয়েই ছিল। গবেষকরা জানান, আমরা জানতে চলেছি কখন এই প্রজাতির শিশুরা কখন জন্মগ্রহণ করতো, কখন মায়ের বুকের দুধ খেত, কিভাবে তাদের বিকাশ হতো, তাদের বিকাশের গতি, বিকাশের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের ভিন্নতা, কিভাবে শৈশব থেকে কৈশোর ও কৈশোর থেকে বয়স্ক হতো এবং কিভাবে তাদের মৃত্যু হতো।
অধ্যাপক লী জানান,হাড়গুলো কতটা সুরক্ষিত ছিল তা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। খুলি, দাঁত ও পা দেখে মনে হচ্ছিল এগুলো হয়তো কোনো মানবশিশুর, যদিও কঙ্কালটি ছিল আসলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর। এর হাত ছিল মানুষের হাতের মতোই,হাতের আঙ্গুলগুলো শিম্পাঞ্জী বা বানরের মতো বাকানো। এটির মস্তিষ্ক ছিল গরিলার মতো ছোট এবং ঊরুসন্ধি ও কাঁধ ছিল আদিম মানুষদের মতো। তারপরেও এরা আধুনিক মানুষদের মতো একই গণের অন্তর্ভূক্ত কারণ এর খুলির গড়ন বেশ উন্নত, দাঁতগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট,পাগুলো লম্বা এবং পায়ের পাতা আধুনিক মানুষের মতো।
লী বলেন ‘আফ্রিকায় পাওয়া যেকোনো আদিম মানুষের চেয়ে হোমো নালেডি ভিন্ন।
এই দেহাবশেষ আবিস্কার করার পরবর্তীতে গবেষকরা ধারণা করেছেন যে, গুহাটি সম্ভবত মৃতদেহ কবর দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো এবং নালেডিরা প্রতিটি মৃতদেহকে এখানে বয়ে নিয়ে আসতো। গবেষকদের ধারণা সত্যি হলে এটা ধরে নিতে হবে যে, হোমো নালেডিরা ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত ছিল, যা এখনো মানুষের মধ্যে বিরাজমান এবং জানামতে গত ২০ লক্ষ বছর ধরে মানব প্রজাতি তা অনুসরণ করে এসেছে।
অধ্যাপক লী বলেন, আমাদের ধারণা কি তবে ভুল, যা আমরা এতোদিন ভেবে এসেছি আধুনিক মানষের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য হিসেবে? তবে গবেষকদের ধারণা মানবজাতির ক্রমবিকাশের সত্যিকারের ইতিহাস হয়তো নতুন করেই রচনা করতে হতে পারে।
১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
সূত্র: বিবিসি
বিষয়: #গণ #প্রজাতি #হোমো নালেডি