রবিবার ● ১৭ নভেম্বর ২০১৩
প্রথম পাতা » স্থানীয় বিজ্ঞান সংবাদ » লিউনিড উল্কাবৃষ্টি পর্যবেক্ষণ
লিউনিড উল্কাবৃষ্টি পর্যবেক্ষণ
ডিসকাশন প্রজেক্ট ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট লিওনিড উল্কাবৃষ্টি পর্যবেক্ষণ আয়োজন করেছিল নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ৫ নাম্বার ঘাটে, ১৬ নভেম্বর ২০১৩ শনিবার। ‘একসময় আমাদের সভ্যতা ছিল নদীভিত্তিক। নদীর পানিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল পৃথিবীর বড় বড় সভ্যতা। বাণিজ্য, যোগাযোগ আর সংস্কৃতি বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ছিল নদী। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চাঁদ আর নক্ষত্রের আলো দেখে নিরুপন হতো। কৃষিনির্ভর সভ্যতায় নদীর প্রবাহকেই পরিবহনের জন্য ব্যবহার করেছিল আদি মানুষ। নদী এভাবে মানুষকে বয়ে নিয়ে এসেছে পরিণত সভ্যতায়। তেমনি এই নদীই আমাদের বয়ে নিয়ে যাবে মহাকাশে, মহাবিকাশের বন্দরে। যায়। লোকায়ত সংস্কৃতির মধ্যেদিয়ে সভ্যতার উৎস ও ধারাবাহিকতা খুঁজলে তা আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে। স্পষ্ট হবে মহাকাশের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক, নদীর সঙ্গে জীবনের সংযোগ।
৫ নাম্বার জাহাজ ঘাটের একপাশে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যচিত্র প্রদর্শন আরেক পাশে টেলিস্কোপে উল্কাবৃষ্টি দেখার আয়োজন। অনুষ্ঠানটি শুরু হয় ইহুদি মেনহীনের বেহালা আর রবিশঙ্করের সেতারে যুগলবন্দী ওয়েস্ট মিটস ইস্ট, যা পশ্চিম ও প্রাচ্যের সেতুবন্ধনের কথা বলে। রবীন্দ্রনাথের আনন্দলোকে মঙ্গল আলোকের মতো মঙ্গলালিক গানগুলো দিয়ে তৈরি একটি কোরাস গাওয়া হলো। উদ্বোধনী থিম সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয় রবীন্দ্রনাথের ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’। তখন জাহাজঘাটের জেটি ঘিরে জ্বলছে মঙ্গল প্রদীপ। এরপর অতুল প্রসাদের ‘যদি তোর রিদ যমুনা হলো রে উছল রে ভোলা’ গানটি গান সুমনা বিশ্বাস। গাওয়া হয় কবি আরিফ বুলবুলের লেখা ও সুরের শীতলক্ষ্যাকে কেন্দ্র করে লেখা গান।
এ আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইংরেজির শিক্ষক সুমনা বিশ্বাস জানান, ‘আমরা একদিকে চেয়েছি পশ্চিমা ও প্রাচ্যের সমন্বিত পরিবেশ, চেয়েছি ধ্রুপদি সঙ্গীতের মগ্নতায় মানবীয় অনুভূতিগুলো জেগে উঠুক, তার জন্য রবীন্দ্রনাথের মঙ্গল কামনা করা গানগুলোকে এনেছি। আমার তো মনে হয়েছে অন্যান্য গান ও কবিতাগুলো নদী ও নক্ষত্রের কথা বলেছে, টেলিস্কোপে চোখ রেখে বিপুল জনস্রোতের আকাশ দেখা বলছে কৃষক, জেলে আর মাঝিদের সংগ্রামইতো নক্ষত্রের সঙ্গে নদী ও জীবনের সম্পর্কের কথা।’
উৎসবটি কসমোলজিস্ট অধ্যাপক জামাল নজরুলকে উৎসর্গ করা হয়। জামাল নজরুল ধ্রুপদি পদ্ধতিতে মহাজাগতিক ধ্রুবক ল্যামডার মান নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন কসমোলজিস্ট, আপেক্ষিতাতত্ত্বের বিশেষজ্ঞ এবং পৃথিবীতে সাড়া জাগানো অসাধারণ গ্রন্থ আলটিমেট ফেট অফ ইউনিভার্সের লেখক। জামাল নজরুল বলেছিলেন, অর্থের মাত্রাতিরিক্ত দৈন্য খারাপ, মাত্রারিক্ত অর্থ আরো খারাপ।’ তার গবেষণারক্ষেত্র ছিল, কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব, আপেক্ষিকতত্ত্ব, নক্ষত্রের গঠন, মহাবিশ্ব তত্ত্ব।
এরপরই সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষে অ্যাডভোকেট প্রদীপ ঘোষ বাবু এবং ডিসকাশন প্রজেক্টের খালেদা ইয়াসমিন ইতি জানান, এ ধরনের অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান সংস্কৃতির মিলিত প্রবাহকে না নিয়ে যেতে পারলে টিকে থাকাই জটিল হবে। কেননা কৃষক, মাঝি আর জেলেরা এগুলোর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। আমরা তাদেরই সন্তান। আমাদের শিকড় সেখানেই প্রোথিত। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাবি্ব শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন অস্তিত্বের কারণেই বিজ্ঞান-সংস্কৃতির মিলিত শক্তি নিয়ে কাজ করে যেতে হবে।