মঙ্গলবার ● ১ অক্টোবর ২০১৩
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান নিবন্ধ: প্রকৃতি ও পরিবেশ » ১২,৯০০ বছর পূর্বে গ্রহ শীতল হওয়ার প্রমান মিলল
১২,৯০০ বছর পূর্বে গ্রহ শীতল হওয়ার প্রমান মিলল
পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম শৈত্য প্রবাহগুলোর মধ্যে ১২,৯০০ বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া একটি শৈত্যপ্রবাহে দায়ী গ্রহাণুর অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্কের ঝড় এখনো বিদ্যমান। এই বিতর্কিত আলোচনার সর্বশেষ প্রমাণ মিলেছে কানাডার কিউবেকে পূণর্বিন্যস্ত প্রস্তরে, যেখানে প্রস্তরখন্ডগুলো পেনসিলভেনিয়া পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত আকারে পাওয়া গিয়েছে। ডার্টমাউথ কলেজের আইসোটোপ ভূ-রসায়নবিদ মুকুল শর্মা বলেন, ‘এখানে যে সংঘর্ষের চিহ্ন আছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারি’। সম্প্রতি প্রসেডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্সেস-এ চলতি সপ্তাহে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
১১,৬০০ থেকে ১২,৯০০ বছর আগে পৃথিবীর জলবায়ু দ্রুতবেগে পরিবর্তিত হয়েছিল। গ্রীনল্যান্ডের মত উত্তরঞ্চলীয় দেশগুলোতে তাপমাত্রা এক শতাব্দীরও কম সময়ের মধ্যে কয়েক ডিগ্রি পর্যন্ত কমে গিয়েছিলো। এই তীব্র শৈত্যের সঠিক কারণ কারো জানা নেই। এক্ষেত্রে অন্যতম ধারণা হলো, উত্তর আমেরিকার হিমবাহের চলন গলে যাওয়া মিঠাপানিকে আটলান্টিক অথবা সুমেরীয় মহাসাগরে প্রবাহিত করেছে, যা মহাসাগরের সঞ্চালনকে শ্লথ করে উত্তর গোলার্ধে শীতলাবস্থা তৈরি করেছিল। এই ধারণা থেকে শঙ্কা করা হচ্ছে বর্তমানে বরফ গলা মিঠাপানির জন্য দ্রুত জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটতে পারে।
বিকল্প ধারণায় বলা হয়ে থাকে উত্তর আমেরিকার ওপরে উল্কা বা ধূমকেতুর বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত হয় যার ফলে সৃষ্ঠ ধুলো এবং ধোয়ার আবরণ হিমবাহ ভাঙ্গার কারন হয়ে দাঁড়ায়। ২০০৭ সালে গবেষকরা মহাদেশ জুড়ে সেই সময়কার মানুষের বসতি স্থাপনের থেকে এ ধরনের ঘটনার প্রমান লিপিবদ্ধ করেন। তবে এই তত্ত্ব গবেষণার অনেক কিছুই পরবর্তীতে ব্যাখ্যা করতে পারেনি এবং প্রাপ্ত নমুনা এই বিস্ফোরণ থেকেই সৃষ্ঠি হয়েছিল কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অধিকন্তু উত্তর আমেরিকা জুড়ে আগুনের প্রকোপের কোন প্রমান মেলেনি। ওবেরলিন কলেজের পাললিক ভূবিজ্ঞানী ব্রুস সিমোনসন জানান, ‘আমার কাছে মনে হয় না তাঁরা খুব ভাল ধারণা দাঁড় করাতে পেরেছ। এটা হতে পারে তাঁদের নির্মিত সবচেয়ে ভাল নৌকা কিন্তু জলযাত্রার জন্য এটি উপযুক্ত নয়।’
কিন্তু ধারণাটি ক্রমে ক্রমে জোরালো হয়ে উঠছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ জন এ বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ রচয়িতা রয়েছেন এবং তার মধ্যে ১১ টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। গত জুলাই মাসে ভিন্ন একটি গবেষক দল গ্রিনল্যান্ডের বরফ অভ্যন্তরে সংঘর্ষকালীন উল্কাপিণ্ডের প্ল্যাটিনাম অস্তিত্ব থাকার কথা প্রকাশ করেন। মুকুল শর্মা এবং তার সহকর্মীর এই ধারণাকেই সমর্থন করেছেন। শর্মার মতে, যে খনিজ তিনি পেনসিলভেনিয়ায় মাটির গভীরে পেয়েছিলেন তা ২০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় সৃষ্টি হয় এবং কাঁচের ফোটার আকারের হয়। এটি কেবলমাত্র সংঘর্ষ থেকেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, একটি শিল্প বিস্ফোরণের চুল্লি দিয়েও এদেরকে তৈরি করা যায় , কিন্তু কোন সম্ভাব্য উৎস খুব সাম্প্রতিক আর খুব দূরের পথ হয়ে যায়।
আইসোটোপিক গঠন অনুসারে শিলাটি কিউবেকের হাজার বর্গ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ জমি থেকে এসেছে এবং ধারণা করা হচ্ছে যে কোন একটি উল্কা উত্তর আমেরিকার বরফের মধ্যে বিস্ফোরিত হয়ে সেটিকে গলিয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রস্তরখন্ডটি আলাদা করে ফেলেছিল। গবেষকদের মতে পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষের এটি একটি সন্দেহাতীত প্রমাণ।
সম্পাদনা: ফিবা মন্ডল
সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান
৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩