সর্বশেষ:
ঢাকা, মে ১৪, ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১

cosmicculture.science: বিজ্ঞানকে জানতে ও জানাতে
সোমবার ● ২২ জুন ২০১৫
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান নিবন্ধ: প্রকৃতি ও পরিবেশ » ফের প্রজাতি গণবিলুপ্তির পথে পৃথিবী - যোয়েল কর্মকার
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান নিবন্ধ: প্রকৃতি ও পরিবেশ » ফের প্রজাতি গণবিলুপ্তির পথে পৃথিবী - যোয়েল কর্মকার
৬৯৬ বার পঠিত
সোমবার ● ২২ জুন ২০১৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ফের প্রজাতি গণবিলুপ্তির পথে পৃথিবী - যোয়েল কর্মকার

ফের প্রজাতি গণবিলুপ্তির পথে পৃথিবীকয়েক লক্ষ বছর ধরে সগর্বে পৃথিবী রাজত্ব করা মনুষ্য প্রজাতি ভবিষ্যতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে এমনটা শুনলে সকলেরই চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার কথা! কিন্তু আদতে এমন সতর্কবাণীই শুনিয়েছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এর আগে পৃথিবীতে  প্রাণীকূলের গণবিলুপ্তি ঘটেছিল আজ থেকে ৬ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে অতিকায় ডাইনোসরের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হওয়ার মধ্যে দিয়ে। ধারণা করা হয়, তখন অতিকায় গ্রহাণুপুঞ্জ পৃথিবীতে আঘাত হানার কারণে সৃষ্টি হয়েছিল ‘নিউক্লিয়ার উইন্টার’ এর। অর্থাৎ গ্রহাণু পৃথিবীপৃষ্ঠে সজোরে আছড়ে পড়ার কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠের চারপাশে ঘন মেঘের স্তর সৃষ্টি হয়েছিল, যা পৃথিবী পৃষ্ঠে সূর্যের আলো পৌঁছতে বাধা দেয়। ফলশ্রুতিতে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে খাদ্যাভাবে বিলুপ্তি ঘটে ডাইনোসরের।
গত ১৯ জুন, ২০১৫ তারিখে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস সাময়িকীতে প্রকাশিত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, মেরুদণ্ডী প্রাণীরা স্বাভাবিকের চেয়ে ১১৪ গুণ দ্রুত হারে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই বিলীয়মান সারির প্রথমেই মনুষ্য প্রজাতি থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক বাণী করেছেন পৃথিবীর প্রাণীকূল ষষ্ঠবারের মতো গণবিলুপ্তির শিকার হতে যাচ্ছে, আর এটি ঘটবে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি হারে। মানুষ পরিবেশগতভাবে যে বিষাক্ততা ছড়িয়েছে তা প্রাণীদের বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছে আর তাই গত ১৫০০ বছরে ৭৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৪০ প্রজাতির পাখি ও ৩৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে ক্রিটাশিয়াস-টারিশিয়ারি যুগের পরে এটিই হতে চলেছে প্রজাতির বৃহত্তম গণবিলুপ্তি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল এরিখ অনেকটা দ্বিধাহীনভাবেই দাবি করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা ষষ্টতম গণবিলুপ্তির পর্যায়ে রয়েছি। তাদের হিসেব-নিকেশ প্রজাতির বিলুপ্তিরই ইঙ্গিত নির্দেশ করছে।
মেরুদণ্ডী প্রাণীদের বিলুপ্তির ঐতিহাসিক হার যাচাইয়ের জন্য বিজ্ঞানীরা জীবাশ্ম বা ফসিল থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে থাকেন। এতে দেখা যায়, বিলুপ্তির বর্তমান হার স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অন্তত ১০০ গুণ বেশি। যদিও প্রাকৃতিকভাবে প্রতি ১০০ বছরে দশ হাজার স্থন্যপায়ী প্রজাতি থেকে মাত্র দুটি স্তন্যপায়ী প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে চিত্রটি সম্পূর্ণ উদ্বেগজনক, কারণ বর্তমানে স্বাভাবিক সীমার থেকে ১১৪ গুণ বেশি হারে প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এজন্য মানুষকেই দায়ী করেছেন। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ওশেনিয়া দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ১৮০০ প্রজাতির পাখি গত ২০০০ বছরে হারিয়ে গেছে। আদিম মানুষরাও অস্ট্রেলিয়ায় বাস করা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী যেমন দানবাকার ভালুক, থলিবিশিষ্ট সিংহ ও মাংসাশী ক্যাঙ্গারু বিলুপ্তির জন্য দায়ী ছিল। বর্তমানে পৃথিবীর চারটি প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ৪১ শতাংশ উভচর বিলুপ্তির পথে রয়েছে।
গবেষণা নিবন্ধের প্রধান লেখক জেরার্ডো সেবালোস উল্লেখ করেন, মেরুদন্ডী প্রাণীর বিলুপ্তির বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কয়েক লাখ বছর সময় লাগবে,  কিন্তু পৃথিবীর অনেক প্রজাতিই হয়তো তার আগেই হারিয়ে যাবে। অধ্যাপক পল এরিখ মনে করেন বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে সার্বজনীন উদ্যোগ নেয়া উচিত। গবেষকদের মতে অনালোকিত অবস্থা সত্ত্বেও এর থেকে উত্তরণের পথ বের করা সম্ভব। সত্যকারভাবে প্রজাতির এই ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি এড়াতে হলে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণের স্বার্থে আমাদের জলবায়ুগত পরিবর্তন, প্রাণীদের আবাসস্থল ধ্বংস করা রোধ করতে হবে এবং প্রাণীদের বংশবিস্তারে উদ্যোগী হতে হবে।
পৃথিবী এ পর্যন্ত পাঁচটি গণবিলুপ্তি প্রত্যক্ষ করেছে। যার মধ্যে ৪৪ কোটি ৩৯ লক্ষ বছর আগে প্রথমবারের মতো ওর্ডোভিয়ান-সিলুরিয়ান বিলুপ্তিতে সামুদ্রিক ৮৩ শতাংশ প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এর পরে ৩৯ কোটি বছর আগে ডেভোনিয়ান বিলুপ্তিতে পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ প্রাণী বিলুপ্ত হয়। ২৪ কোটি ৮০ লক্ষ বছর আগে পার্মিয়ান বিলুপ্তিতে তীব্র খরায় ৯৬ শতাংশ প্রাণ বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক প্রাণী ধ্বংস হয়ে যায়। সর্বশেষ পঞ্চমবারের মতো ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে বিলুপ্তির মধ্যে দিয়ে ডাইনোসরের বিলোপ ঘটে। অধিকাংশ গবেষকই একমত পোষণ করেন যে ডাইনোসরদের অবলুপ্তির পর বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তির হার আগে কখনই এত ব্যাপক ছিল না।পঞ্চমবারের মতো ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে বিলুপ্তির মধ্যে দিয়ে ডাইনোসরের বিলোপ ঘটে
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার কর্তৃক সঙ্কটাপন্ন এবং অধিক সঙ্কটাপন্ন প্রজাতির হার নিচে উল্লেখ করা হলো:

 

শ্রেণীকরণ

প্রজাতির সংখ্যা, আইসিইউএন ২০১৪

অধিক সঙ্কটাপন্ন হার

(অধুনালুপ্ত)

সঙ্কটাপন্ন হার
(অধুনালুপ্ত + অধুনালুপ্ত বন্যপ্রাণী + বিলুপ্তির সম্ভাবনাময়)

প্রজাতির সংখ্যা,
আইসিইউএন এর মূল্যায়ণ

১৫০০ সাল হতে

১৯০০ সাল হতে

১৫০০ সাল হতে

১৯০০ সাল হতে

মেরুদণ্ডী

৩৩৮

১৯৮

৬১৭

৪৭৭

৫৯% (৩৯,২২৩)

স্তন্যপায়ী

৭৭

৩৫

১১১

৬৯

১০০% (৫,৫১৩)

পাখি

১৪০

৫৭

১৬৩

৮০

১০০% (১০,৪২৫)

সরীসৃপ

২১

৩৭

২৪

৪৪% (৪,৪১৪)

উভচর

৩৪

৩২

১৪৮

১৪৬

৮৮% (৬,৪১৪)

মাছ

৬৬

৬৬

১৫৮

১৫৮

৩৮% (১২,৪৫৭)

*ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার

কিন্তু বিজ্ঞানীরা সন্দেহাতীতভাবেই ষষ্ঠ গণ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে মানুষের অবস্থান নিয়ে যে সংশয় প্রকাশ করেছেন তা কতোটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে সেটা নিশ্চিত করা না গেলেও পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের অবস্থান ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হলে গণ বিলুপ্তিকে কিছুটা শ্লথ হতে পারে বৈকি।

সূত্র: সায়েন্স অ্যাডভান্সেস সাময়িকী, দ্য টেলিগ্রাফ





আর্কাইভ

মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার খোঁজেজেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম রঙীন ছবি প্রকাশ
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথম চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স এর জীবনাবসান
মঙ্গলে ইনজেনুইটি’র নতুন সাফল্য
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আফ্রিকায় ৫০ বছর পরে নতুনভাবে হস্তিছুঁচোর দেখা মিলল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা