শুক্রবার ● ২০ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » পালনীয় দিবস » আন্তর্জাতিক গ্রহাণূ দিবস
আন্তর্জাতিক গ্রহাণূ দিবস
গ্রহাণু বা অ্যাস্টরয়েড মূলত পাথরের খণ্ড যা মহাকাশে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। আমাদের সৌরজগতের বেশিরভাগ গ্রহাণুই মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত গ্রহাণু বেষ্ঠনীতে থেকে নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তন করে। কখনো কখনো এগুলো গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে গ্রহের সাথে সংঘর্ষও ঘটায়। গ্রহাণুর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অত্যন্ত কম থাকে এবং এরা আকৃতিতে গ্রহের থেকে তুলনামূলক অনেক ছোট হয়ে থাকে।
গ্রহাণু কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে সে সম্পর্কে প্রধানত দুটি মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। প্রথম মতবাদে বলা হয়, প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর পূর্বে আমাদের সৌরজগৎ যখন সৃষ্টি হয়েছিল তখন মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী অংশে আরো একটি গ্রহ সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সম্মিলিত গ্রহাণুপুঞ্জের স্বল্প ভরের কারণে এবং বৃহস্পতি গ্রহের অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ বল গ্রহাণুগুলিকে পরস্পরের সাথে একত্রিত হতে বাধা দেওয়ায় এই অঞ্চলে নতুন কোনো গ্রহ সৃষ্টি হতে পারেনি। দ্বিতীয় মতবাদে ধারণা করা হয়, গ্রহাণুগুলো কোনো এক গ্রহের অংশবিশেষ যা কোনো এক সংঘর্ষের ফলে পুরো সৌরজগতে ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রহাণু সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জানা ও এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্য নিয়েই কিছু বিজ্ঞানীদের উদ্যোগে ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ জুন পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক গ্রহাণু দিবস। এই দিবসটি বিশ্বব্যাপি সচেতনতামূলক কর্মসূচির একটি অংশ হিসেবে পালিত হয় যেখানে বিশ্বের মানুষ গ্রহাণু সম্পর্কে জানতে পারে, এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব থেকে নিজেদের বিশ্বকে, পরিবারকে, সমাজ ও সভ্যতাকে কীভাবে রক্ষা করতে পারে তা জানতে পারে।
প্রতি বছর এই গ্রহাণু দিবসটি সাম্প্রতিক ইতিহাসের বৃহত্তম প্রভাব অর্থাৎ ১৯০৮ সালে সাইবেরিয়ার তুঙ্গাসকার ঘটনা স্মরণে পালিত হয়। একটি অপেক্ষাকৃত ছোট গ্রহাণু, প্রায় ৪০ মিটার মত বা একটি মাঝারি আকৃতির অফিস ভবনের মত গ্রহাণু একটি মহানগরীর সমান এলাকা ধ্বংস করে ফেলতে সক্ষম। শতাধিক মহাকাশচারী, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও ব্যবসায়ী এবং সহস্রাধিক সাধারণ জনগণ এধরণের কাজের জন্য ‘১০০এক্স গ্রহাণু ঘোষণা’য় স্বাক্ষর করেন। ভবিষ্যতে গ্রহাণু প্রভাব প্রতিহত করার জন্য বিদ্যমান এবং নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করে গ্রহাণু সনাক্ত ও ট্র্যাকিং করা এবং এর বিক্ষেপ ক্ষমতা দেখা মানবসভ্যতার একটি বড় অর্জন হতে পারে।
স্থানীয়ভাবে বড় এবং ছোট পরিসরে এই দিবসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন, মানুষের মাঝে গ্রহাণু বৃদ্ধি সনাক্তকরণ এবং ট্র্যাকিং -এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধিতে বক্তৃতা, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, কনসার্ট আয়োজন করা হয়। মূলত এই দিবসটি এই বিশ্বের সকল প্রজাতির জীব রক্ষায় স্থানীয় ও বৈশ্বিকভাবে একদিন সাহায্য করতে পারে। এই দিনটি সেই মানুষদেরকে স্মরণ করায় যারা বিজ্ঞান প্রযুক্তির মাধ্যমে এই গ্রহকে রক্ষায় অবদান রেখেছেন।