সোমবার ● ১৪ অক্টোবর ২০১৩
প্রথম পাতা » পালনীয় দিবস » বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ
বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ
বর্তমান প্রজন্মকে মহাকাশ সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসু করতে এবং মহাকাশ সংক্রান্ত কল্যাণকর অবদানগুলোকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ’ একটি বিশ্বজনীন উৎসব। ৬ ডিসম্বের ১৯৯৯ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ঘোষণা (প্রস্তাবনা ৫৪/৬৮) অনুযায়ী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড স্পেস উইক অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজনে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের ৪-১০ তারিখে প্রায় সারা বিশ্বে পালন করা হয় ‘বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ’। মূলতঃ দুইটি ঘটনাকে সামনে রেখে ‘বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথমটি হলো ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর পৃথিবীর অভিকর্ষের বাইরে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘স্পুটনিক-১’ সফলভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়, যা মহাকাশের অভিযানের পথ উন্মুক্ত করে দেয় এবং দ্বিতীয়টি হলো ১৯৬৭ সালের ১০ অক্টোবর চাঁদ এবং অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তুসহ মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্বের প্রধান রাষ্ট্রসমূহ কতকগুলো মৌলিক নীতি মেনে চলার ক্ষেত্রে চুক্তিস্বাক্ষর করে। এই দুইটি দিনকে স্মরণ করেই ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর ৪ থেকে ১০ অক্টোবর পালিত হয় ‘বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ’।
২০১৩ সালে বিশ্বের প্রায় ৭০ টি দেশে এই সপ্তাহ পালন করা হয়। এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য ‘মঙ্গলে অনুসন্ধান করুন, আবিস্কার করুন পৃথিবীকে’ (Exploring Mars, Discovering Earth)। পৃথিবীর বাইরে জীবনের সন্ধানের পাশাপাশি মানুষের বর্তমান লক্ষ্য পৃথিবীর বাইরে বসতি গড়ে তোলা। এজন্যই প্রতিবেশী মঙ্গল গ্রহকে বাসযোগ্য দ্বিতীয় পৃথিবী গড়ে তোলার আয়োজন শুরু হয়েছে।
মহাকাশ অভিযান পরিচালনার মত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এসে মানুষের পক্ষে মহাশূন্যে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয়েছে। মার্কিন পদার্থবিদ রবার্ট হাচিনস্ গডার্ড ১৯২৬ সালের ১৬ মার্চ প্রথমবারের মত তরল জ্বালানী বিশিষ্ট রকেট মহাশূন্যে সফল উৎক্ষেপণ করেন। এই আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই মহাকাশ অভিযানের স্বপ্ন অনেকটাই প্রত্যাশিত হয়ে ওঠে বিজ্ঞানীদের কাছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মহাকাশ অভিযানের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। যার ফলশ্রুতিতে রাশিয়া ও মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত দেশগুলো মহাকাশ গবেষণায় প্রাযুক্তিক বিকাশ ও বস্তবায়নের দ্বারা উত্তোরত্তর সাফল্য লাভ করে। ১৯৬২ সালের ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো মনুষ্যবাহী মহাকাশযান মহাশূণ্যে পাঠানো হয়। সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে নভোচারী ইউরি গ্যগারিন ‘ভোস্তক-১’ মহাকাশযানে চড়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন, যা ইতিহাসে মহাকাশ জয়ের এক অনন্য নজির স্থাপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় মানুষ তার স্বপ্নের পরিধি বিস্তার করে পাড়ি জমিয়েছে চাঁদে, স্থাপন করেছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন।
মার্কিন মহাকাশ গবেষনা সংস্থা নাসা’র মেরিনার-৪ মহাকাশযান ১৯৬৪ সালে প্রথমবারের মত মঙ্গলে ফ্লাই-বাই করতে সমর্থ হয়। এরপর ১৯৭১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের মার্স প্রোব প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে মার্স-২ এবং মার্স-৩ প্রথমবারের মঙ্গলের পৃষ্ঠে অবতরণ করে। পরবর্তীতে কয়েকটি দেশের মহাকাশ গবেষণার অংশ হিসেবে মঙ্গলে বেশ কতগুলো সফল অভিযান পরিচালনা করা হয়। নেদারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্স ওয়ান ২০২৩ সাল থেকে মঙ্গলে প্রথম মানব বসতি স্থাপনের কাজ শুরু করবে। তাদের নভোচারী নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রধম ধাপ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি আগামী ২০৩০ থেকে ২০৩৫ সালে মঙ্গলে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
২০১২ সালের প্রতিপাদ্য: মানব নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় মহাকাশ।
২০১১ সালের প্রতিপাদ্য: মনুষ্যবাহী মহাকাশযানের পঞ্চাশ বছর।
২০১০ সালের প্রতিপাদ্য: বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের রহস্য।
২০০৯ সালের প্রতিপাদ্য: শিক্ষার জন্য মহাকাশ।
২০০৮ সালের প্রতিপাদ্য: মহাবিশ্বকে অনুসন্ধান।
২০০৭ সালের প্রতিপাদ্য: মহাকাশে ৫০ বছর।