সর্বশেষ:
ঢাকা, মে ১৪, ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১

cosmicculture.science: বিজ্ঞানকে জানতে ও জানাতে
শনিবার ● ১২ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » মাথায় কত প্রশ্ন » কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট কী?
প্রথম পাতা » মাথায় কত প্রশ্ন » কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট কী?
২০৮৩ বার পঠিত
শনিবার ● ১২ মে ২০১৮
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট কী?

পৃথিবীর কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট
কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট কী

কোন গ্রহকে প্রদক্ষিণরত প্রাকৃতিক বস্তুকে আমরা উপগ্রহ হিসেবে জানি। যেমন চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় বলে চাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ। আভিধানিকভাবে স্যাটেলাইট দিয়ে কৃত্রিম বা প্রাকৃতিক দুইধরনের উপগ্রহকেই বোঝান হয়। যেসকল উপগ্রহ কৃত্রিমভাবে কোন গ্রহের কক্ষপথে স্থাপন করা হয় তখন তাকে আমরা কৃত্রিম উপগ্রহ বলে থাকি। সম্প্রতি বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু-১ নামের যে স্যাটেলাইট মহাশূণ্যে পাঠানো হয়েছে তা একটি কৃত্রিম উপগ্রহ। সাধারণ অর্থে স্যাটেলাইট দিয়ে এমন কোন যন্ত্রকে বোঝান হয় যা মহাশূণ্যে উৎক্ষিপ্ত করা হয় এবং পৃথিবী বা মহাশূণ্যের কোন বস্তুকে ঘিরে আবর্তিত হয়।

মানুষের তৈরি হাজার হাজার কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে রয়েছে। এদের কোনোটি পৃথিবীর ছবি সংগ্রহ করে যা আবহাওয়াবিদদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে সম্পর্কে তথ্য প্রদানে সাহায্য করছে। কিছু কৃত্রিম উপগ্রহ অন্যান্য গ্রহ, সূর্য, কৃষ্ণবিবর বা দূরবর্তী ছায়াপথ এর ছবি সংগ্রহ করছে। এসব তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা অন্যান্য গ্রহ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারছে।

এছাড়া আরও কিছু কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে যারা মূলত যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন: টিভি সিগন্যাল, বিশ্বজুড়ে ফোন কল এর সংযোগ স্থাপন প্রভৃতি। ২০টিরও বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ জিপিএস সিস্টেম এর কাজে ব্যবহৃত হয়। আপনার যদি জিপিএস রিসিভার থাকে তাহলে কৃত্রিম উপগ্রহ আপনাকে সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে সাহায্য করবে।

কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট কেন গুরুত্বপূর্ণ

কৃ্ত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে একবারে পৃথিবীর বিস্তৃত জায়গা দেখা সম্ভব, যা বার্ডস আই ভিউ বা পাখির চোখ দিয়ে দেখা বুঝায়। এই কারণে ভু-পৃষ্ঠে স্থাপিত কোনো যন্ত্রের চেয়ে কৃ্ত্রিম উপগ্রহ আরও দ্রুত এবং আরও বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এমনকি কৃ্ত্রিম উপগ্রহগুলো টেলিস্কোপ এর চেয়েও বেশি কার্যকরীভাবে পৃথিবী পৃষ্ঠের কোন কিছু পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কৃ্ত্রিম উপগ্রহগুলো ভু-পৃষ্ঠ থেকে এতো উচ্চতায় স্থাপনের কারণ হলো যাতে মেঘ, ধুলো বা বায়ুমণ্ডলের কোন কণা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে।

কৃ্ত্রিম উপগ্রহ স্থাপনের পূর্বে টিভি সিগন্যালগুলো বেশি দূর যেতে পারতো না। তখন টিভি সিগন্যালগুলো সরলরেখা বরাবর গমন করতো। ফলে সিগন্যালগুলো পৃথিবীর বক্রতার কারণে হারিয়ে যেত। কখনো কখনো পাহাড় বা উচু ভবনের কারণেও সিগন্যাল বাধাগ্রস্থ হতো। টেলিফোন কলও একইভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতো। অনেক দূর পর্যন্ত বা পানির নিচে টেলিফোনের তার স্থাপন করা অনেক জটিল এবং ব্যয়সাপেক্ষ।

কিন্তু এখন কৃ্ত্রিম উপগ্রহ আসার পরে টেলিফোন কল, টিভি সিগন্যাল প্রথমে পৃথিবী থেকে উপরের কৃ্ত্রিম উপগ্রহে পাঠানো হয়। তারপরে প্রায় তৎক্ষণিকভাবেই কৃ্ত্রিম উপগ্রহ সেই সিগন্যালগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ফেরত পাঠায়।

কৃ্ত্রিম উপগ্রহের অংশগুলো কী কী

কৃ্ত্রিম উপগ্রহ বিভিন্ন আকারের ও গড়নের হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ কৃ্ত্রিম উপগ্রহেরই দুটি সাধারণ অংশ থাকে - একটি এ্যান্টেনা ও একটি শক্তির উৎস। এ্যান্টেনা তথ্য প্রদান ও গ্রহণ করে থাকে। সৌর প্যানেল বা ব্যাটারি শক্তির উৎস হতে পারে। সৌর প্যানেল সূর্যরশ্মিকে বিদ্যুতে পরিণত করে।

নাসা’র অনেক কৃ্ত্রিম উপগ্রহে ক্যামেরা ও বিভিন্ন সেন্সর যু্ক্ত থাকে । কখনো কখনো এইসব যন্ত্রপাতি পৃথিবীর দিকে তাক করা থাকে ভূমি, বায়ু ও পানির তথ্য সংগ্রহের জন্য। অন্যান্য সময় এগুলো সৌরজগত ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে।

কৃ্ত্রিম উপগ্রহ কীভাবে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে

অধিকাংশ কৃ্ত্রিম উপগ্রহই রকেটের মাধ্যমে মহাশূণ্যে উৎক্ষেপণ করা হয়। একটি কৃ্ত্রিম উপগ্রহ তখনই পৃথিবীকে আবর্তন করে যখন তার গতি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টানের (যে বল দ্বারা পৃথিবী সবকিছুকে নিজের দিকে আকর্ষন করে) সাথে সমতা রক্ষা করে। নাহলে এটি উৎক্ষেপণের পরে সোজা মহাশূণ্যে হারিয়ে যেত অথবা আবার পৃথিবীত ফিরে আসত।

কোন বস্তুকে পৃথিবী থেকে মুক্তিবেগে অর্থাৎ ১১.২ কি.মি./সেকেণ্ড বেগে মহাশূণ্যে উৎক্ষেপণ করলে সেটি আর পৃথিবীতে ফিরে আসে না। এক্ষেত্রে মুক্তিবেগে একটি বস্তুকে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ২৫০ কি.মি. উপরে উঠিয়ে পৃষ্ঠের সমান্তরালে এমনভাবে উৎক্ষিপ্ত করা হয় যেন সেটি সেকেণ্ডে ৮ কি.মি. বেগে গতিশীল থাকে, ফলে সেটি পৃথিবীর চারিদিকে প্রদক্ষিণ করতে থাকবে। এই প্রদক্ষিণ পথই হলো কক্ষপথ। কৃ্ত্রিম উপগ্রহগুলো পৃথিবীর কক্ষপথে বিভিন্ন উচ্চতায়, বিভিন্ন গতিতে এবং বিভিন্ন পথে আবর্তিত হয়।

দুটো সাধারণ ধরনের কক্ষপথ হলো ‘জিওস্টেশনারী’ বা ‘ভূ-স্থির কক্ষপথ’ এবং অপরটি ‘পোলার’ বা ‘মেরু কক্ষপথ’। কক্ষপথের নামানুসারে আবার কখনো ব্যবহার বিধি অনুসারে কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর নাম করা হয়। যেমন: বঙ্গবন্ধু-১ হচ্ছে জিওস্টেশনারী স্যাটেলাইট বা ভূ-স্থির কৃত্রিম উপগ্রহ।

ভূ-স্থির কৃত্রিম উপগ্রহগুলো বিষুবরেখা (দুই মেরু থেকে সমান দূরত্বে পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে যে রেখা কল্পনা করা হয় তাকে বলা হয় বিষুবরেখা) বরাবর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে এবং পৃথিবীর ঘুর্ণনের সাথে সমান বেগে আবর্তিত হয়। ফলে ভূ-স্থির কৃত্রিম উপগ্রহগুলোকে সবসময় পৃথিবীর সাপেক্ষে এক জায়গায় স্থির বলে মনে হয়। অপরদিকে ‘পোলার’ বা ‘মেরু কৃত্রিম উপগ্রহ’ পৃথিবীর মেরু বরাবর প্রদক্ষিণ করে।

‘জিওস্টেশনারী’ বা ‘ভূ-স্থির কক্ষপথ’ পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩৬০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। সাধারণত রেডিও এবং টিভি এর ট্রান্সমিশনের কাজে এটি বেশি ব্যবহৃত হয়। একটি ভূ-স্থির উপগ্রহ পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গা দেখতে পারে। ফলে এরকম ৩টি উপগ্রহ দিয়ে সারা পৃথিবীর ছবি তোলা বা যোগাযোগ রক্ষার কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।

কৃ্ত্রিম উপগ্রহগুলোর কেন একটির সাথে অন্যটির সংঘর্ষ হয় না

নাসা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো মহাশূণ্যের কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর নজরদারি করে। একটি কৃত্রিম উপগ্রহ যখন উৎক্ষেপণ করা হয় তখন এটিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করা হয় যাতে অন্যদের সাথে সংঘর্ষ না ঘটে। তবে মহাশূণ্যে কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যা যতো বাড়বে এর সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেড়ে যাবে। ২০০৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দুটি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট ইরিডিয়াম-৩৩ ও কসমক-২২৫১ এর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটেছিলো।

মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ও প্রাণ

১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘স্পুটনিক-১’ উৎক্ষেপণ করে। কৃত্রিম উপগ্রহটির নকশা করেছিলেন সের্গেই করালিওভ। পৃথিবীর প্রথম প্রাণী হিসেবে লাইকা নামের একটি কুকুর ১৯৫৭ সালের ৩রা নভেম্বর পৃথিবীর কক্ষপথ পরিক্রমণের সৌভাগ্য অর্জন করেছিল। ‘স্পুটনিক-২’ নামের এই কৃত্রিম উপগ্রহটিও সোভিয়েত ইউনিয়ন উৎক্ষেপণ করে।

NASA Knows! অবলম্বনে রচিত।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার খোঁজেজেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম রঙীন ছবি প্রকাশ
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথম চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স এর জীবনাবসান
মঙ্গলে ইনজেনুইটি’র নতুন সাফল্য
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আফ্রিকায় ৫০ বছর পরে নতুনভাবে হস্তিছুঁচোর দেখা মিলল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা