শনিবার ● ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » মাথায় কত প্রশ্ন » কোন বস্তু বা প্রাণীর বয়স নির্ধারণ করা হয় কিভাবে?
কোন বস্তু বা প্রাণীর বয়স নির্ধারণ করা হয় কিভাবে?
বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের সত্যতা বের করার প্রধান উপায় হচ্ছে এর বয়স নির্ধারণ করা। এর মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারি আসলেই জিনিসটি কোন প্রাচীন সভ্যতার স্মারক নাকি স্রেফ ভাওতাবাজি। যেমন গত শতাব্দীর আবিষ্কৃত যিহূদার গসপেলের কথাই ধরা যাক। গসপেলটি লেখা হয়েছিল প্যাপিরাসে মিশরীয় প্রাচীন ভাষা কপটিকে। কিন্ত এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ উঠতেই পারে, আর যখন পরীক্ষণে দেখা গেল এটি সত্যিই খ্রিষ্টীয় প্রথম থেকে দ্বিতীয় শতকের একটি দলিল তখন আর সন্দেহের অবকাশ রইল না। এসব ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় কার্বনের সাহায্যে বয়স নির্ধারণ করা হয়, যা Radio Carbon Dating নামে পরিচিত। তবে যাদের উৎপত্তি জীবিত প্রাণী বা উদ্ভিদ থেকে কেবলমাত্র সেই ধরনের পদার্থের বয়স নির্ধারণে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
এ পদ্ধতির মূল তত্ত্ব হচ্ছে এই যে, মহাজাগতিক রশ্মি নিউট্রন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করছে এবং তা বাতাসের নাইট্রোজেনের সাথে নিউক্লীয় বিক্রিয়া সম্পন্ন করছে: 14N (n,p) 14C এই 14C তেজস্ক্রিয় এবং তার অর্ধজীবন হচ্ছে ৫৭৩০ বছর। আমরা জানি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় একটি মৌল বা যৌগ নিজে নিজেই অথবা অন্য মৌল বা যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে অপর কোন যৌগে রূপান্তরিত হয়। এক্ষেত্রে বিক্রিয়ার শুরুতে যেক’টি পরমানু ছিল বিক্রিয়ার পরেও ঠিক একই সংখ্যক পরমানু অবশিষ্ট থাকে, এদের প্রকৃতিও থাকে অভিন্ন, শুধু পরিবর্তন ঘটে বিন্যাসে। কিন্তু নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় (অর্থা যে বিক্রিয়া সংঘটিত হয় পরমানুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে) একটি পরমানু তার গঠন সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে ভিন্ন ধর্ম বিশিষ্ট নতুন পরমানুর সৃষ্টি করে। এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া। এখানে এক পরমানু থেকে অন্য পরমানুতে রূপান্তরের সময় বিভিন্ন রশ্মি বিকিরিত হয়। যাকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বলে আর এই পুরো ঘটনাটিকে বলা হয় তেজস্ক্রিয়তা। যে সকল পরমানু তেজস্ক্রিয়তা প্রদর্শন করে তাকে তেজস্ক্রিয় পরমানু বলে। 14C হচ্ছে সেরকম একটি তেজস্ক্রিয় পরমানু। আর একটি তেজস্ক্রিয় পরমানুর তেজস্ক্রিয়তা অর্ধেকে পৌঁছতে যে সময় লাগে তাকে সেই পরমানুর অর্ধজীবন বলে। যাহোক, নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় 14N (n,p) 14C তৈরি হওয়ার পর শীঘ্রই তা কার্বন-ডাই-অক্সাইডে পরিণত হয় এবং সাধারণ কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সাথে মিশ্রিত হয়ে সালোক-সংশ্লেষণে অংশগ্রহণ করে। এভাবে উদ্ভিদের শরীরে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে সব প্রাণীতে। বৃক্ষ ও প্রাণীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে তা আবার বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড হিসাবে ফিরে আসে (কার্বন চক্র)। এ কারণে উদ্ভিদ ও প্রাণীর শরীরে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে 14C থাকে। জীবিত প্রাণীর দেহে 14C এর তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ হচ্ছে প্রতি গ্রাম কার্বনে প্রতি মিনিটে ১৫.৩টি ক্ষয়। যেহেতু 14C এর ক্ষয়ের হার এবং নতুন 14C এর সৃষ্টির মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত সাম্যাবস্থা বিরাজমান, সেহেতু এ মান সকল জীবিত প্রাণী ও উদ্ভিদে একই থাকে। কোন প্রাণী বা উদ্ভিদ মারা গেলে তা এই সাম্যাবস্থায় থাকে না। কেননা তখন আর কোন নতুন 14C শরীরে প্রবেশ করে না কিন্তু শরীরে থাকা 14C নিজস্ব গতিতে ক্ষয় পেতে থাকে। সুতরাং যেকোন পুরাতন বস্তু হতে নির্গত তেজস্ক্রিয়তা মেপে তার বয়স নির্ণয় করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে ৫০০ বছর হতে ২৫,০০০ বছর পর্যন্ত বয়স নির্ধারণ সম্ভব।