সোমবার ● ১১ জুন ২০১২
প্রথম পাতা » পালনীয় দিবস » বিশ্ব পানি দিবস
বিশ্ব পানি দিবস
২২ মার্চ সারা বিশ্বে পালিত হয় পানি দিবস। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক অধিবেশনে একটি বিশেষ দিনকে স্বাদু পানি দিবস হিসেবে পালন করার কথা সুপারিশ করা হয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে ১৯৯৩ সালের ২২ শে মার্চকে প্রথম আন্তর্জাতিক পানি দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর স্বাদু পানির উপর এক একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে ২২ শে মার্চ আন্তর্জাতিক পানি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
২০০৫ সালে মূলত জীবনের জন্য পানি শিরোনামে একটি পানি দশকের (১৯৯৫-২০০৫) অবতারনা করা হয়েছিল। গঙ্গা-পদ্মা, যমুনা-ব্র্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা-সুরমা এই তিনটি নদীপ্রণালী অসংখ্য নদী-শাখানদী-উপনদী সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে আবৃত করে রেখেছে, যার কারণেই বাংলাদেশকে আমরা জানি নদীমাতৃক দেশ হিসেবে। তবে বাংলাদেশে প্রবাহিত নদীগুলোর পানির একটি বড় অংশই আসে অন্য দেশ থেকে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। উন্নত বিশ্বে যখন আমরা দেখতে পাই তারা কত কষ্ট করে পানি পরিশোধনের মাধ্যমে তা ব্যবহারোপযোগী করছে, সেখানে আমরা কত সহজেই পানির যোগান পাচ্ছি। অধিকন্তু ভূগর্ভস্থ পানির আধারটিতো আমাদের বড় অবলম্ববন। এসব কিছুর পরেও পানির উৎসসমূহের রক্ষা বা ভূগর্ভস্থ পানির সুষ্ঠু ব্যবহার আমরা করতে পারছি না। ঢাকা শহরকেই আমরা উদাহরণ হিসেবে নিতে পারি।
ওয়াসার ২০০৩ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ঢাকা শহরের ৮৪ ভাগ পানি সরবরাহ হয় ভূগর্ভস্থ পানি থেকে এবং বাকি ১৬ ভাগ আসে নদী থেকে। আতঙ্কের কথা হল ঢাকার অভ্যন্তর ও চারিপাশ দিয়ে যে খাল-বিল নদী-নালা জালিকার মতো প্রবাহিত হতো তা সমূলে গত ৪০ বছরে একের এক দখল, স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে ভরাট করে চিহ্নমাত্র মুছে ফেলা হচ্ছে। ফলে নানাভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন অব্যহত আছে এবং তা ক্রমশই বাড়ছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৯৯৮ সালে ডিপ টিউবয়েলের সংখ্যা ছিল ২৩৪ টি, ২০০৭ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০০তে। স্বভাবতঃই ভূত্বকের নিচে একটি স্তর ফাঁকা হয়ে গেছে। ফলে ঢাকা শহরের ভূগর্ভস্থ পানির স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ৬১.১৮ মিটার বা ১৮৬ ফুট নেমে গেছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থার সূত্র মতে, গত ১১ বছরেই নেমেছে ৩৫ মিটার এবং প্রতি বছরই তা বাড়ছে। গড়ে প্রায় ৩ মিটার বা ৯ ফুট করে নেমে যাচ্ছে। এছাড়া ঢাকার সমস্ত মাটি কংক্রিটে ঢেকে যাওয়ায় এ আর পানি শোষণ করতে পারে না বা জমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ঢাকা শহর ভয়াবহ পানি সঙ্কটে পড়বে। এমনিভাবে গ্রামাঞ্চলের দিকে তাকালেও আমরা ভিন্ন এক ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাব। বিগত শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে সারা পৃথিবীতেই বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। একই ব্যাপার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও। এই বর্ধিত চাষাবাদের জন্য পানির চাহিদাও বেড়েছে। অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে বিশ্বের শতকরা ৭০ ভাগ পানি ব্যবহৃত হয় শুধুমাত্র সেচের জন্য। ভবিষ্যতে এই চাহিদা আরো বাড়বে বৈকি। সেই সাথে কমবে বিশুদ্ধ ও স্বাদু পানির উৎস। ভবিষ্যত পৃথিবীবাসীর জন্য পানির সঙ্কট মোকাবিলা করাটাই হয়ত হয়ে উঠবে আগামীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিভিন্ন বছরে দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য -
১৯৯৪: পানিসম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের সবার দ্বায়িত্ব
১৯৯৫: নারী ও পানি
১৯৯৬: তৃষ্ণার্ত শহরের জন্য পানি
১৯৯৭: বিশ্বের পানিঃ আসলেই কি যথেষ্ট?
১৯৯৮: ভূগর্ভস্থ পানিঃ এক অদৃশ্য সম্পদ
১৯৯৯: সবাই আমরা ভাটির দেশের অধিবাসী
২০০০: একবিংশ শতাব্দীর জন্য পানি
২০০১: সুস্বাস্থের জন্য পানি
২০০২: উন্নয়নের জন্য পানি
২০০৩: ভবিষ্যতের জন্য পানি
২০০৪: পানি ও দূর্যোগ
২০০৫: জীবনের জন্য পানি
২০০৬: পানি ও জলবায়ু
২০০৭: পানির আকাল নিরসন
২০০৮: পয়নিষ্কাশন
২০০৯: আন্তসীমান্ত পানি
২০১০: সুস্থ বিশ্বের জন্য নিরাপদ পানি
২০১১: নগরের জন্য পানি
২০১২: পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা