মঙ্গলবার ● ২৮ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: প্রকৃতি ও পরিবেশ » বিশ্বের নদীগুলোতে বিপদজনক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দূষণ
বিশ্বের নদীগুলোতে বিপদজনক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দূষণ
সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাপি একটি গবেষণায় ৭২টি দেশের দুই-তৃতীয়াংশ নদীর পানিতে বিপজ্জনক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। বিশ্বজুড়ে টেমস্ থেকে টাইগ্রিস পর্যন্ত নদীগুলোর শতাধিক এলাকায় পরিচালিত গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের দূষণ হলো জীবন-রক্ষাকারী ওষুধের ওপর ব্যাকটেরিয়া নিজেদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার অনত্যম পন্থা, ফলে জীবন-রক্ষাকারী ওষুধগুলো মানবদেহে কাজ করতে পারে না।
“প্রচুর রেজিস্ট্যান্স জীন আমরা মানুষের শরীরে দেখতে পাই যারা পরিবেশগত ব্যাকটেরিয়া থেকে উদ্ভূত” এমনটি বলছিলেন মাইক্রোবায়াল ইকোলজিস্ট অধ্যাপক উইলিয়াম গেজ। জাতিসংঘ গত মাসে এক বিবৃতিতে জানায়, অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে ১ কোটি মানুষ মারা যেতে পারে।
ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী এলিসটেয়ার বোক্সল বলেন, “ওষুধগুলি মানুষের ও পশু বর্জ্যের মাধ্যমে নদী ও মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে। এটা বেশ ভীতিকর এবং হতাশাজনক। পরিবেশের বৃহত্তর অংশে প্রভাব ফেলতে পারে এমন পর্যাপ্ত মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক আমরা পেয়েছি।” হেলসিংকিতে গবেষকদের একটি গবেষণায় গত ২৭ মে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষকরা বিশ্বের পরিচিতি বিভিন্ন নদীর পানিতে বিপদজনক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন।
ইউরোপের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী দানিউব থেকে সংগ্রহ করা নমুনাগুলির মধ্যে সাতটি অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে, যাদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিসের মতো শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত ক্লারিথ্রোমাইসিন নিরাপদ মাত্রার চেয়ে চারগুণ বেশি পাওয়া গেছে। ইউরোপ মহাদেশের এই নদীটিই সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক দূষণ পাওয়া যায়। ইউরোপে পরীক্ষিত অঞ্চলগুলির মাত্র আট শতাংশ নিরাপদ সীমার উপরে ছিল।
টেমস নদী ইউরোপের সবচেয়ে পরিষ্কার নদীগুলির মধ্যে একটি হিসাবে পরিচিত, এখানেও পাঁচটি অ্যান্টিবায়োটিক মিশ্রণ পাওয়া গেছে। এখানে সিপ্রোফ্লক্সাকিন, যা চামড়া ও মূত্রনালীর সংক্রমণকে চিকিত্সা করে, তা নিরাপদ মাত্রার তিন গুণ বেশি রয়েছে।
গেজ বলেন, কম মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক থাকা নদীগুলোও আমাদের জন্য হুমকি। এগুলো রেজিস্ট্যান্স বিবর্তন ঘটাতে পারে এবং রেজিস্ট্যান্স জিনগুলো মানুষের শরীরে স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে নদীর পানিতে বিপদজনকভাবে এন্টিবায়োটিক দূষণ নির্ধারিত সীমার ৩০০ গুন ওপরে রয়েছে। তারা তারা ৭২টি দেশের নদী থেকে ৭১১টি নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশে অ্যান্টিবায়োটিক দূষণ ছিল। বিশেষ করে এসব পানিতে মানুষ ও পশুপাখির ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ রোধে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে সীমার অনেক ওপরে।
দূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। বাংলাদেশে একটি স্থানের নদীর পানিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক মেট্রোনিডাজল দূষণ নির্ধারিত সীমার ওপরে পাওয়া গিয়েছে।
১৯২০ এর দশকে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর তা নিউমোনিয়া, যক্ষা, মেনিনজাইটিস-সহ ভয়াবহ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের হাত থেকে কোটি কোটি মানুষকে বাঁচিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক দূষণের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। তাই ওষুধ শিল্প ও বিভিন্ন দেশের সরকারকে জরুরিভিত্তিতে ওষুধের ধরণ উন্নয়ন ঘটানো প্রয়োজন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান