বুধবার ● ১৫ জানুয়ারী ২০১৪
প্রথম পাতা » মঙ্গলে আবাস » মঙ্গল অভিযাত্রা: অপেক্ষায় বাংলাদেশ
মঙ্গল অভিযাত্রা: অপেক্ষায় বাংলাদেশ
মহাকাশই হবে আমাদের পরবর্তী ঠিকানা, আগামীর সীমান্ত। এমন সুদুরপ্রসারী স্বপ্ন দেখা এতোদিন কল্পবিজ্ঞানের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও নেদারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্স ওয়ান ২০২৩ সাল থেকে মঙ্গল গ্রহে মনুষ্য বসতি স্থাপনের কার্যক্রম পরিচালনার সূচণা করে ইতোমধ্যে সকল মহলে নজর কেড়েছে। আক্ষরিক অর্থে এই অভিযান মানবেতিহাসের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হলেও মানুষের অদম্য অভিযাত্রার নেশা কোনভাবেই এই অগ্যস্ত যাত্রাকে রোধ করতে পারেনি, বরং আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম ঘোষণার পাঁচ মাসের মধ্যেই মার্স ওয়ান মিশনের জন্য ১৪০ টি দেশের ২০২,৫৮৬ টি আবেদন পত্র জমা পড়েছিল। এই অন্তিম যাত্রার জন্য আবেদন করেছিলেন ১৮ জন বাংলাদেশীও। ১ম রাউন্ডের প্রক্রিয়াটি শেষ হয়ে যায় গত ৩১ আগস্ট, ২০১৩।
সম্প্রতি দুই লক্ষাধিক আবেদনকারীর মধ্যে থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য মাত্র ১০৫৮ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে থেকেই পরবর্তী যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে মঙ্গল যাত্রার অভিযাত্রীদের চূড়ান্ত করা হবে। আমাদের জন্য অত্যন্ত সুখপ্রদ সংবাদ হলো এই সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনজন বাংলাদেশী। তারা হলেন: সালমা মেহের ঐশী (২৭) শারমিন জাহান (২৫) এবং লুলু ফেরদৌস (৩৫)। । মার্স-ওয়ান কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই নির্বাচিত প্রত্যেকের সাথে যোগাযোগ করেছেন। এক অভিনন্দন বার্তায় তাদেরকে এই কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রাধান্য দেয়ার পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তাদেরকে আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই চিকিৎসকের কাছ থেকে সুস্বাস্থ্যের একটি প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। একইসাথে প্রার্থীদের নির্বাচন কমিটির সাথে সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং এর মধ্যে দিয়েই পরবর্তী রাউন্ডের জন্য যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হবে। তবে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এই কার্যক্রমের ও প্রকল্পের জন্য যথাসাধ্য প্রচারণার দক্ষতাকেও বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্স-ওয়ান কর্তৃপক্ষ। নির্বাচিত প্রার্থীদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে এ বিষয়ে সহায়তা নিতে বলা হয়েছে, কারণ বিপদসঙ্কুল এই মহাকাশ অভিযাত্রায় প্রিয়জনদের কাছে কখনো ফিরে আসা সম্ভব হবে না, এই যাত্রা হবে শুধুই একমুখী।
সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশী তিনজন সৌভাগ্যবতী প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তাদের অনুভূতি জানাতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন, এ যেন হঠাৎ নাগাল পাওয়া ঘোরলাগা স্বপ্নের বাস্তবচিত্র। আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা সালমা মেহের ঐশী মার্স-ওয়ান মিশনে অংশ নেয়ার পেছনে তার মতামত জানিয়ে বলেন, “স্কুলজীবনে যখন থেকে আমি মহাকাশ নিয়ে নানারকম পড়াশুনা করতে শুরু করেছি তখন থেকেই একটা সুপ্ত স্বপ্ন ছিল মহাকাশচারী হওয়ার। ভারতের নারী মহাকাশচারী কল্পনা চাওলাকে নিজের আদর্শ ভাবতে ভাল লাগত। সাইন্স ফিকশন এর বই, মহাকাশ নিয়ে প্রকাশিত নানারকম প্রতিবেদন পড়া আমার প্রিয় বিষয়। মার্স মিশন আমার সেই সুপ্ত স্বপ্ন পূরণের একটা বড় প্ল্যাটফর্ম, যেখানে অংশ নিতে পারার সু্যোগ পাওয়াটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। প্রতিকূল পরিবেশে ভালভাবে টিকে থাকার জন্য যে মানসিক শক্তির প্রয়োজন তা আমার আছে। সুযোগ পেলে আর প্রশিক্ষণ পেলে নিজেকে মার্স মিশনের জন্য যোগ্য করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। নিঃসন্দেহে মার্স মিশন মানব সভ্যতার আর প্রযুক্তির ইতিহাসের একটা মাইল ফলক। আজ হোক কাল হোক, মানুষকে হয়ত একদিন পৃথিবীর বাইরের অনন্ত নক্ষত্রবীথির দিকে পাড়ি দিতেই হবে। মার্স মিশন কতটুকু সফল হবে সেটা সময়ই বলে দিবে। মানুষ অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে, আমিও মার্স মিশনের সফলতার বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী।”
অপর প্রার্থী শারমিন জাহান বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস কোর্স সম্প্ন্ন করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক হওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনের দায়বদ্ধতা থেকেই মঙ্গল মিশনে নাম লিখিয়েছেন তিনি।
ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা লুলু ফেরদৌস ছোটবেলা থেকেই আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন দেখে আসছেন। বিমানচালনা বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য তিনি ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ২০১২ সালে ‘এয়ার ট্রান্সপোর্টেশন এডমিনিস্ট্রেশন’ ডিগ্রি নিয়ে ওমাহার ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাসকা থেকে গ্র্যাজুয়েট হন। পরবর্তীতে নেব্রসকাতে নাসার গবেষণা সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। বর্তমানে তিনি এরোস্পেস সায়েন্সে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনে পড়াশোনা করছেন। লুলু মনে করেন মার্স ওয়ান মিশনটি তার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এক মিশন হতে পারে এবং যে কোন দেশের স্থানীয় সীমানার মধ্যে স্বপ্ন সীমাবদ্ধ নয়।
২০২৩ সালে মঙ্গল গ্রহে মানুষের প্রথম পদচারণার ইতিহাস গড়ায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা সে বিষয়ে আগাম কোন নিশ্চয়তা না থাকলেও অদম্য দুঃসাহসিকতায় আমরাও যে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য জ্ঞানচর্চার পবিবেশ ও প্রাযুক্তিক বিকাশের পথকে সুগম করতে ত্যাগের মানসিকতা ধারণ করতে পারি তা সুনিশ্চিত।