শনিবার ● ৫ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্জন/সাফল্য » ঘন্টি কলমি : নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ পেল বাংলাদেশ
ঘন্টি কলমি : নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ পেল বাংলাদেশ
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষের (২০০৮) তথ্য মতে বাংলাদেশে কলমি পরিবারের ৫৫ টি প্রজাতি জন্মে। সম্প্রতি এ তালিকায় যোগ হল নতুন আরেকটি কলমি ফুলের প্রজাতি। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সৌরভ মাহমুদের এ সংক্রান্ত একটি গবেষনা প্রকাশিত হয় আন্তর্জাতিক জার্নাল ট্রপিক্যাল প্লান্ট রির্সাস এর ২০১৬ সালের প্রথম সংখায়। তিনি জানান পৃথিবীতে কলমি পরিবারের (Convulvulaceae) ১৫০০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এ সকল লতা ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ছরিয়ে আছে আমাদের ছয় মহাদেশের নান প্রান্তে। এন্টর্কটিকা শুধু বাদ পড়েছে।
তিনি জানান ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে বুনো কলমি লতা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে ঢাকার হাতিরঝিল ও বনানী লেকের কাছে একটি প্রাকৃতিক পরিত্যাক্ত জায়গাতে তিন প্রজাতির লতার (হলুদ কলমি, তেলকুচা, টিনোসপোরা) সাথে একই জায়গাতে এ লতাটি প্রথম দেখতে পান । লতাটিতে ছোট্ট ও ঘন্টা আকৃতির গোলপী বর্ণের ফুল ধরেছিল। বেশ অনেকখানি জায়গা জুরে শাখা প্রশাখা সহ বেড়ে ওঠেছে।
লতাটির বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে ফুলের গঠন গবেষনা করে ও মাপ ঝোপ নিয়ে ভারতীয় কয়েকজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীর কাছে পাঠান ছবিসহ। তাঁরা এটি সনাক্ত করে দেন Ipomoea triloba হিসেবে।
লতাটি নিয়ে জার্নালে প্রকাশিত তথ্যমতে- এটি এক বর্ষজীবী লতা। লতা ১-৩ মিটর লম্বা ও ১.৫-৩ মিলিমিটার চওরা। লতাটির পাতার আকৃতি পান পাতার মতো, দৈর্ঘ্য প্রায় ৫.৬ সেমি। একটি মঞ্জরীতে একাধিক ফুল থাকে। ফুল ফোটে সকালে। দুপুরের আগে পাপড়ি বন্ধ হয়ে যায়। বৃতি পাঁচটি, অসমান, দৈর্ঘ্য ৮-১০ মিলিমিটর। দল ৫টি, যুক্ত ও ঘন্টা আকৃতির। দৈর্ঘ্য ২০-২২ মিলিমিটার। পুংকেশর পাঁচটি, দৈর্ঘ্য ৮ মিলিমিটার। ফল ৬-৮ মিলিমিটার চওড়া, ৪ বীজী। বীজের দৈর্ঘ্য ৩ মিলিমিটার, মসৃন, রঙ চকলেট বাদামী। ফুল ফোটা শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসে। ফল পরিপক্ক হলে বহিত্বক ফেটে বীজ লতার ঝোপের চারদিকে ছড়িয়ে পরে। মাটিতে জলের ছোয়া পেলে চারা গজায়।
তিনি জানান, বীজ সংগ্রহ করে বাড়িতে টবে লাগিয়ে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে চারা গজিয়েছে । কয়েকটি চারা ঢাকার রমনা পার্কে এবং কার্জন হলের বাগানে রোপনের ইচ্ছা রয়েছে তার। বিশ্বে এটি Little Bell, Little bell morning glory, Pink convolvulus হিসেবে পরিচিত। বাংলা নাম রাখা যেতে পারে ঘন্টি কলমি। প্রকৃতিবিদ অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা ও আমি এ নামটি রেখেছি।
ফুল না দেখলে এ লতাটি অন্য লতার প্রজাতি থেকে সহজে পৃথক করা যায়না। সাধারণত আদ্র ও আলো-ছায়াময় জায়গাতে এটি ভালো জন্মে। ভারতের কেরেলা, কর্নটাক, মুম্বাই, গুজরাট ও পশ্চিমবঙ্গে এটি প্রকৃতিক পরিবেশে জন্মে। তাছাড়া নেপাল, বার্মা, আফ্রিকা ও চীনে এটি আছে। শোভা বর্ধনকারী ফুল হিসেবে এটি বাড়ির আঙ্গিনায় ও বাগানে লাগানো যেতে পারে। কিউবাতে এটি মুধু উৎপাদনকারী ফুল হিসেবে সুখ্যাতি ছড়িয়েছে।
সৌরভ মাহমুদ পরিবেশ ও প্রকৃতি বিষয়ে লেখালেখি করছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। প্রকৃতি সংরণে বিশেষ করে পাখি উদ্ভিদ সংরণে গবেষনা ও কাজ করছেন গত কয়েক বছর ধরে। তিনি বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও তরুপল্লবের সদস্য। উদ্ভিদ বিজ্ঞানে এম এসসি করার পর পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে এম এস করছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যলয়ে। তাছারা পারবেশ ও জীববৈচিত্র বিষয়ে কাজ করছেন সিইজিআইএস এ । পাখি নিয়ে তার গবেষনা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জর্নালে।