বৃহস্পতিবার ● ৮ মে ২০১৪
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: রসায়ন » ১১৭ তম অতি ভারী মৌলের সন্ধান
১১৭ তম অতি ভারী মৌলের সন্ধান
পদার্থবিদরা নিউক্লিয়াসে ১১৭ টি প্রোটন সমৃদ্ধ এযাবৎকালে ভারী মৌল আবিস্কার করেছেন। ১১৭ তম মৌলের অস্তিত্বের মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞানীরা আশা পোষন করছেন ম্যাজিক নাম্বার সমৃদ্ধ Island of Stability খুঁজে পাওয়ার খুব কাছাকাছি চলে এসেছেন তারা।
ইউরেনিয়ামের (পা. সংখ্যা ৯২) চেয়ে ভারী মৌল প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া যায় না। এরা সবাই তেজষ্ক্রিয় এবং খুবই ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ ১১৭ তম মৌলের অর্ধায়ু সেকেন্ডের পঞ্চাশ হাজার ভাগের একভাগ। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার গবেষকেরা ২০১০ সালে যৌথভাবে রাশিয়ার জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্রিয়ার রিসার্চে এই মৌলটির অস্তিত্ব পান। কিন্তু এখনো পর্যন্ত মৌলটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি এবং IUPAC কর্তৃক পর্যায় সারনীতেও ঠাঁই দেয়া হয়নি। জার্মানির ড্র্যামস্ট্যাডটে অবস্থিত জিএসআই হেলমহলটজ সেন্টার ফর হেভী আয়ন রিসার্চে গবেষণারত বিজ্ঞানীরা নতুনভাবে ১১৭ তম মৌলের সৃষ্টি করেছেন।
গবেষণা দলের প্রধান ক্রিস্টোফ ডুলম্যান বলেন, ‘প্রথম আবিস্কারের তুলনায় আমরা ভিন্ন একটি গবেষক দল ভিন্ন একটি জায়গায় ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে এই আবিস্কার করেছি। আমি মনে করি বিজ্ঞান মহলে এটি মৌলের স্বীকৃতি লাভ করবে।’ অস্থায়ীভাবে পর্যায় সারণীতে অন্তর্ভূক্তির জন্য এর নাম দেয়া হয়েছে ইউনানসেপটিয়াম। গবেষকরা বার্কেলিয়াম (পা. সংখ্যা ৯৭) এর সাথে ক্যালসিয়াম (পা. সংখ্যা ২০) নিউক্লিয়াসের সংঘর্ষে ইউনানসেপটিয়াম উদ্ভব ঘটান। তবে এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল কারণ বার্কেলিয়ামকে পাওয়া খুবই দুরুহ।
ডুলম্যান জানান তারা বার্কেলিয়াম উৎপাদনক্ষম পৃথিবীর একমাত্র জায়গায় এই পরীক্ষাটি সম্প্ন্ন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনিসি অঙ্গরাজ্যের ওক রীজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি’র পারমানবিক চুল্লীতে ৩৩০ দিন অর্ধায়ু সম্পন্ন দুর্লভ বার্কেলিয়াম তৈরি করা হয়। এই পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ বার্কেলিয়াম তৈরি করতে গবেষকদের দুই বছর সময় লেগেছে। ১৩ মিলিগ্রাম বার্কেরিয়াম সঞ্চয়ের পর গবেষকরা পরবর্তী পরীক্ষার জন্য জার্মানিতে পাড়ি জমান। জিএসআই হেলমহলটজ সেন্টারে গবেষকরা ক্যালসিয়াম মৌলকে আলোর গতির দশ শতাংশ গতিতে বার্কেলিয়ামের সাথে সংঘর্ষ ঘটান। ডুলম্যান জানান এই প্রক্রিয়ায় তারা সপ্তাহে ১১৭টি প্রোটন সমৃদ্ধ একটি পরমানু তৈরি করতে সক্ষম হন। বিজ্ঞানীরা প্রত্যক্ষভাবে ইউনানসেপটিয়াম এর দেখা পাননি। তবে বিজ্ঞানীরা আলফা কনা নির্গমের দ্বারা ইউনানসেপটিয়াম এর ক্ষয়ের পর পরবর্তী উৎপাদিত তেজস্ক্রিয় মৌলের সন্ধান করেন। গত ১ মে ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্সে এ সংক্রান্ত নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, ক্ষয়ের কয়েকটি ধাপ পরেই আইসোটোপ লরেনসিয়াম ২৬৬ (১০৩ টি প্রোটন ও ১৬৩ টি নিউট্রন বিশিষ্ট) উৎপন্ন হয়, যা পূর্বে কখনো দেখা যায়নি। আগে ধারণা করা হতো লরেনসিয়ামের স্বল্প সংখ্যক নিউট্রন রয়েছে এবং তারা কম সুস্থিত। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই আইসোটোপটির অর্ধায়ু ১১ ঘন্টা, যা এখন পর্যন্ত জানা আইসোটোপের মধ্যে বেশি অর্ধায়ু সম্পন্ন।
তাত্ত্বিকভাবে ধারণা করা হয় পরবর্তী ম্যাজিক নাম্বার অর্থাৎ কোন পরমানুর নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তি খুব সুস্থিত হওয়ার জন্য যে সংখ্যক প্রোটন এবং নিউট্রন থাকা প্রয়োজন সেরকম পরমানুতে ১০৮, ১১০ বা ১১৪ টি প্রোটন এবং ১৮৪ টি নিউট্রন থাকতে পারে। এই ধরণের বিন্যাস পরমানুকে দীর্ঘস্থায়িত্ব দেবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোন পরমানুর নিউট্রন সংখ্যা যতই ১৮৪ এর দিকে ধাবিত হবে তা পরমানুর জীবনকালকে ততই বাড়িয়ে তুলবে।
সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান
৮ মে, ২০১৪
২৫ বৈশাখ, ১৪২১