বুধবার ● ২৮ আগস্ট ২০১৩
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: মহাকাশ » মঙ্গল ও বৃহষ্পতি গ্রহের মাঝে ধূমকেতুর কবরস্থান
মঙ্গল ও বৃহষ্পতি গ্রহের মাঝে ধূমকেতুর কবরস্থান
কলম্বিয়ার অ্যান্টিওকুয়্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল ধূমকেতুর এর কবরস্থানের খোঁজ পেয়েছেন। তারা গবেষনায় দেখিয়েছেন কিভাবে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সুপ্ত থাকা ধুমকেতু আবার জীবন ফিরে পেয়ে নিজেদের আলোকচ্ছটায় আকাশ রাঙিয়েছে। গবেষকরা এই ধূমকেতুদের নাম দিয়েছেন লাসারের ধূমকেতু। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস জার্নালে প্রকাশিত এক তথ্যে গবেষকরা এ কথা জানান।
ধূমকেতু সৌরজগতের মধ্যে সবচেয়ে ছোট বস্তু হিসেবে বিবেচিত, যা কয়েক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এবং বরফ ও পাথুরে কনার এক মিশ্রন। যদি তারা কখনো সূর্যের কাছাকাছি আসে তখন বরফের কিছু অংশ গ্যাসে পরিণত হয়, যা পুচ্ছের আকারে আমরা মহাকাশে দেখতে পাই। পর্যবেক্ষণকৃত অধিকাংশ ধূমকেতুই ডিম্বাকৃতির কক্ষপথ পরিভ্রমন করে, ফলে কালেভদ্রে তারা সূর্যের কাছাকাছি আসে। এদের মধ্যে কোন কোনটি প্রায় হাজার বছরে নিকটবর্তী নক্ষত্রকে পরিভ্রমন করে থাকে।
স্বল্প পরিভ্রমনকালের এরকম প্রায় পাঁচশত ধূমকেতু রয়েছে, যাদের জন্ম হয়েছে দীর্ঘ পরিভ্রমন কাল ধূতকেতুগুলোর বৃহস্পতি গ্রহের কাছ দিয়ে অতিক্রম করার সময় কক্ষপথ বিচ্যুতি থেকে। সাধারণ ঘটনা না হলেও কখনো কখনো এসব ধূমকেতুর পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষ হয়েছে এবং ধারণা করা হয় আমাদের গ্রহে পানির সূত্রপাত এই সকল ধূমকেতু থেকেই।
নতুন অনুসন্ধানের জন্য সৌরজগতের তৃতীয় এবং স্বতন্ত্র একটি অঞ্চলে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়, যা মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যে অবস্থিত গ্রহাণূ বেল্ট হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলে ১ মিটার থেকে ৮০০ কিলোমিটার ব্যাসের প্রায় দশ লক্ষাধিক গ্রহাণূ রয়েছে। এই সকল গ্রহাণূদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা রয়েছে কখনোই গ্রহ হিসেবে গঠিত হতে না পারা উপাদান এরা, যা সুদূর অতীতে বৃহস্পতি গ্রহের প্রবল মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
গত দশকে এই গ্রহাণূ বেল্ট অঞ্চলে ১২টি সক্রিয় ধূমকেতু আবিস্কৃত হয়েছে। এটা ছিল কিছুটা অপ্রত্যাশিত যা গবেষকদের ধূমকেতুগুলোর উৎপত্তি সন্ধানে আগ্রহী করে তোলে। অধ্যাপক ফেরিন এবং তার সহকর্মী অধ্যাপক জর্জ জুলুয়াগা এবং পাবলো কুয়ার্টাস কে নিয়ে গঠিত এই গবেষক দলের কাছে এখন নতুন ব্যাখ্যা রয়েছে।
অধ্যাপক ফেরিন ব্যাখ্যা করলেন, “আমরা ধূমকেতুদের একটি কবরস্থানের সন্ধান পেয়েছি। কল্পনা করুন কোনরকম ইঙ্গিত ছাড়াই এইসকল গ্রহাণুরা যেন অনন্ত জীবনের সন্ধানে সূর্যের পানে ছুটে চলেছে। আমরা খুঁজে পেয়েছি যে এদের মধ্যে কেউ কেউ শুধুমাত্র মৃত পাথর নয়, বরং সুপ্তাবস্থায় থাকা ধূমকেতু। হয়তো তারা আবার জীবন ফিরে পাবে যদি সূর্য থেকে পাওয়া শক্তি মাত্র কিছু শতাংশ বৃদ্ধি পায়।”
অত্যাশ্চর্যভাবে, এটা খুব সহজেই ঘটতে পারে যদি গ্রহাণু বেল্টের অধিকাংশ বস্তুর কক্ষপথকে বৃহস্পতি গ্রহের মাধ্যাকর্ষন বল সামান্য ঠেলে দিতে পারে। তাহলে তাদের কক্ষপথ পরিবর্তিত হয়ে যাবে, যা সূর্যের সাথে তাদের দূরত্বকে সর্বনিম্ম পর্যায়ে নিয়ে আসবে এবং গড় তাপমাত্রা কিছুটা বাড়িয়ে তুলবে।
গবেষনায় ধারণা করা হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ বছর পূর্বে গ্রহাণু বেল্ট অঞ্চলটি হাজারো সক্রিয় ধূমকেতুতে মুখরিত ছিল। এই সংখ্যা এখন কমে গেছে এবং কার্যক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। জানামতে এখন মাত্র বারোটি সক্রিয় ধূমকেতু রয়েছে যা সূর্যের কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থানের কারণে নবোতেজোদ্দীপ্ত হয়েছিল এবং যে সামান্যতম শক্তি তারা সূর্য থেকে আহরণ করেছিল তা তাদেরকে কবরের অন্ধকুপ থেকে পুনরুদ্ধারে যথেষ্ট ছিল।
অধ্যাপক ফেরিন জানান, “এই বারোটি ধূমকেতুই লাসারের ধূমকেতু, এরা হয়তো হাজার কিংবা প্রায় লক্ষাধিক বছর পরে আবার জীবন ফিরে পেয়েছে। হতে পারে হাজারো গ্রহাণূর মধ্যে এদের কোন প্রতিবেশীর ভাগ্যেও একই অবস্থা ঘটবে।”
সূত্র: সায়েন্স ডেইলী
৫ আগস্ট, ২০১৩