সর্বশেষ:
ঢাকা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

cosmicculture.science: বিজ্ঞানকে জানতে ও জানাতে
রবিবার ● ২২ এপ্রিল ২০১২
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান নিবন্ধ: মুক্তবুদ্ধি চর্চা » গ্যালিলিওকে ভ্যাটিকানের শ্রদ্ধা প্রসঙ্গে অভিমত: বিজ্ঞানচেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান নিবন্ধ: মুক্তবুদ্ধি চর্চা » গ্যালিলিওকে ভ্যাটিকানের শ্রদ্ধা প্রসঙ্গে অভিমত: বিজ্ঞানচেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ
৯৯০ বার পঠিত
রবিবার ● ২২ এপ্রিল ২০১২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গ্যালিলিওকে ভ্যাটিকানের শ্রদ্ধা প্রসঙ্গে অভিমত: বিজ্ঞানচেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ

জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও গ্যালিলি
আজ থেকে ঠিক চারশ’ বছর আগে (১৬১১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল) জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও তার তৈরিকৃত টেলিস্কোপটি তৎকালীন পণ্ডিত ব্যক্তিদের সামনে প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করেন। এটি দিয়ে তিনি রোমের এক পাহাড় থেকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। এর মাধ্যমে পৃথিবী যে মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় বরং পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণরত তা সবাইকে বোঝাতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তৎকালীন ক্যাথলিক ধর্মযাজকরা এটিকে বাইবেল ও ধর্মবিশ্বাসের বিরোধী আখ্যা দিয়ে গ্যালিলিওর জোর বিরোধিতা ও তাকে নিগৃহীত করেন।

কিন্তু এ ঘটনার ঠিক চারশ’ বছর পর গত ১৪ এপ্রিল, ২০১১ বৃহস্পতিবার ভ্যাটিকান থেকে এ মহান জ্যোতির্বিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। গ্যালিলিও যে জায়গায় তার টেলিস্কোপটি সবার সম্মুখে এনেছিলেন ঠিক সেখানেই ভ্যাটিকান এক বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। গ্যালিলিওর সম্মানে শিল্পকলাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামের প্রদর্শনী ছিল সেখানে। এখানে বর্তমানে আমেরিকান একাডেমী নামে কলা ও মানবিক বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

১৬১১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও তার তৈরিকৃত টেলিস্কোপটি তৎকালীন পণ্ডিত ব্যক্তিদের সামনে প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ৩১ অক্টোবর ভ্যাটিকান সিটির পোপ দ্বিতীয় জন পল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেন যে, গ্যালিলিওকে ধর্মদ্রোহের অভিযোগে শাস্তি দেওয়াটা তাদের জন্য ভুল ছিল, তিনি এ ঘটনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা ও তার ওপর থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। ইতিহাস থেকে দেখা যায়, বিজ্ঞান চর্চা ও বিকাশে সনাতনী ধ্যান-ধারণা বরাবরই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে থাকে। সেই প্রেক্ষাপটে এই ধরনের স্বীকৃতিকে এ দেশের বিভিন্ন বিজ্ঞান ব্যক্তিত্ব বিজ্ঞান কর্মী, ও সংগঠকরা কীভাবে দেখছেন সে বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে এখানে। দৈনিক সমকালের বিজ্ঞান পাতা কালস্রোত-এ এটি প্রকাশিত হয়েছিল গত ৭ মে, ২০১১ তারিখে, মতামতগুলো সংগ্রহ করেন কসমিক কালচার-এর বিজ্ঞান কর্মী যোয়েল কর্মকার।

দ্বিজেন শর্মা, প্রকৃতিবিদ
ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো আমাদের স্মরণ করা উচিত। গ্যালিলিওকে চার্চের চাপিয়ে দেওয়া মতামত গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছিল কিন্তু তাতে বিজ্ঞান ও সত্য থেমে থাকেনি। বিজ্ঞানের সঙ্গে কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতা, অবিশ্বাসের সংকট এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তাই এই উদ্যোগকে অবশ্যই সাধুবাদ জানানো উচিত, যা সংস্কৃতি বিকাশের জন্য এখনও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বিজ্ঞানচেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ।

ড. আলী আসগর, পদার্থবিজ্ঞানী
গ্যালিলিও তার টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাকাশকে জানার ও দেখার সূচনা এবং প্রকৃতির নিয়ম যে মহাবিশ্বের সর্বক্ষেত্রেই সমান তা প্রমাণের চেষ্টা করেছিলেন। চারশ’ বছর পর তাকে সম্মান প্রদর্শন করাটাকে আমি বলব এটি শুধু গ্যালিলিওকে চার্চের অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি প্রদান করা নয় বরং গ্যালিলিওকে উপলব্ধি করতেই তাদের চারশ’ বছর সময় লেগেছে। এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

এফআর সরকার, শৌখিন জ্যোতির্বিদ,
এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ এবং সম্মান জ্ঞাপন। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্যালিলিওকে যে নিগৃহীত হতে হয়েছিল সেই অন্ধকার সময়ের অবসান ঘটেছে এ স্বীকৃতির মাধ্যমে।

সুকল্যাণ বাছার, প্রকৌশলী, জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘর
সনাতনী চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে গ্যালিলিওর কর্মকাণ্ড এই কথাই প্রমাণ করে বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় বরাবরই সত্য ও যুক্তির কাছে অন্ধবিশ্বাসের বাতাবরণ পরাজিত হয়। ইউরোপের মতো উন্নত দেশে এ ধরনের সচেতনতার প্রভাব অনুন্নত দেশগুলোর পশ্চাৎপদতা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

মশহুরুল আমিন, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন
এ ঘটনাটিকে আমরা মানবসভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আমাদের অগ্রগতিকে মূল্যায়নে অবশ্যই অতীতের দিকে ফিরে তাকানো উচিত, তাহলেই আমরা নির্ধারণ করতে পারবো আমাদের ভবিষ্যতে কী রকমভাবে এগুনো প্রয়োজন। আর সত্যকে মেনে নেওয়াটাই সঠিক, যা আমাদের অনুপ্রাণিত করবে সব ইতিবাচক অর্জনকে গ্রহণে।

খালেদা ইয়াসমিন ইতি, ডিসকাশন প্রজেক্ট
গ্যালিলিও স্মরণে এ উদ্যোগটি ভ্যাটিকানের আগেই নেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু দেরি নেওয়া হলেও এটা অবশ্যই একটা অগ্রগতি। এছাড়াও যেসব বিজ্ঞানী বিশেষ করে বিজ্ঞান চর্চায় নারীদের অতীতে ধর্মীয় রোষানলের শিকার বা নিগৃহীত হয়েছিলেন তাদের সবাইকে এ সময়ে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বলা যায় আমরা যদি বিজ্ঞানকে তার সুদৃঢ় অবস্থানে দাঁড় করাতে পারি তবে সাধারণের মাঝে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার রোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব।

নুরুন নবী সিদ্দিকী, আহ্বায়ক, বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ
এ স্বীকৃতি এটাই প্রমাণ করে সত্য সবসময়ই সত্য। এর বিরুদ্ধাচরণ করলেও তা আড়াল করা সম্ভব নয়। তাই বিজ্ঞানকে সবসময় তার স্বাভাবিক ধারায় চলতে দেওয়া উচিত। তবে গ্যালিলিওর ওপর চারশ’ বছর আগের চাপিয়ে দেওয়া দোষ লঙ্ঘন করা বা শ্রদ্ধা প্রদর্শনের এ ঘটনাকে বিশ্বের কোনো বিশেষ মহলের অনুকূলে প্রত্যাশা করাটা অনুচিত হবে।

ইমরান হাবিব রুমন, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ
গ্যালিলিওর সময়ে চার্চ বিজ্ঞানের ওপর প্রভুত্ব করত কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞান সবকিছুকে পরিচালনা বা নির্দেশনা দিচ্ছে। আমরা মনে করি ধর্মীয় এ বাধাগুলো না থাকলে বিজ্ঞানচর্চা ও মনস্কতা আরও বৃদ্ধি পেত, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আজকের দিনে ধর্মান্ধতা বা অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হলে বিজ্ঞানকে সমাজের মধ্যে প্রবাহিত করা প্রয়োজন। এভাবেই গ্যালিলিওর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সম্ভব।

যোয়েল কর্মকার, কসমিক কালচার
প্রাচীন সমাজের নিয়ন্ত্রকগণ বিজ্ঞানকে কখনও কখনও তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতেন যা সাধারণকে বশে রাখার জন্য সহায়ক উপকরণ ছাড়া আর কোনো মঙ্গলজনক ব্যবস্থার সৃষ্টি করেনি। এতদিন পরে হলেও গ্যালিলিওর প্রতি ধর্মীয় শাসক গোষ্ঠীর এ স্বীকৃতি ভবিষ্যতে বিজ্ঞানচর্চা ও বিকাশে যুক্তিনির্ভরতা ও উদারতা বাড়াবে।

নিয়াযুল ইসলাম, অনুসন্ধিৎসু চক্র
বিজ্ঞান এবং ধর্ম এ দুটোর অবস্থান বরাবরই সংঘাতময়। এখন পর্যন্ত আমাদের সমাজে বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে ধর্মের অবস্থান একই আছে এবং গ্যালিলিওর মতো নিগ্রহের ঘটনা ঘটেই চলছে। তাই ভ্যাটিকানের এ স্বীকৃতি যুক্তি ও প্রমাণের নিরিখে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের কাছে তাদের ভুল স্বীকার করা। তবে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় স্বভাবগতভাবে ধর্মকে ব্যবহারের প্রবণতা কতটুকু হ্রাস পেয়েছে বা এখনও তারা করছে সেটা বিবেচনা করা উচিত।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার খোঁজেজেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম রঙীন ছবি প্রকাশ
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথম চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স এর জীবনাবসান
মঙ্গলে ইনজেনুইটি’র নতুন সাফল্য
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আফ্রিকায় ৫০ বছর পরে নতুনভাবে হস্তিছুঁচোর দেখা মিলল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা