সোমবার ● ২০ জানুয়ারী ২০১৪
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: মহাকাশ » প্রথমবারের মত দেখা মিলল মহাজাগতিক ওয়েব ফিলামেন্ট
প্রথমবারের মত দেখা মিলল মহাজাগতিক ওয়েব ফিলামেন্ট
জ্যোতির্বিজ্ঞানিরা একটি দূরবর্তী ছায়াপথ বিশালাকৃতির গ্যাসীয় মেঘকে আলোকিত করার দৃশ্য দেখার কথা জানিয়েছেন। এই ফিলামেন্টের নেটওয়ার্ক দ্বারা মহাবিশ্ব জুড়ে ছায়াপথ সংযুক্ত আছে বলে তারা ধারনা করছেন। সম্প্রতি গবেষণা জার্নাল নেচার-এ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল দ্বারা পরিচালিত এই তত্ত্বানুসন্ধানটি প্রকাশিত হয়েছে।
হাওয়াই কেক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ১০ মিটার কেক-১ টেলিস্কোপ ব্যবহার করে গবেষকরা একটি বৃহৎ, উজ্জল ‘নীহারিকা’ বা গ্যাসের মেঘ সনাক্ত করেছে যেটি মহাকাশ জুড়ে প্রায় দুই মিলিয়ন আলোক বর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
গবেষণা প্রবন্ধের সহরচয়িতা সেবেস্টিনো ক্যান্টালুপো জানান, “এটি একটি খুব ব্যতিক্রমী বস্তু: এটি বিশাল, আকৃতিতে পূর্বে সনাক্ত করা কোন নীহারিকা বা নেবুলা থেকে দ্বিগুণ বড় এবং কোয়েসার এর ছায়াপথসংক্রান্ত পরিবেশ অতিক্রম করে অধিক মাত্রায় প্রসারিত হয়েছে।”
মূলধারার আনুমানিক চিন্তায় মহাজাগতিক পদার্থ জালে সকল ছায়াপথ সংযুক্ত যার বেশির ভাগ (প্রায় ৮৪ শতাংশ) অদৃশ্য অন্ধকার পদার্থ। কম্পিউটার সিমিউলেশনের মাধ্যমে মহাবিশ্বের গঠন বিবর্তনের ফলে এই জালের উদ্ভব, অদৃশ্য অন্ধকার পদার্থের বিতরণকে বড় আকারে দেখানো, ছায়াপথ সৃষ্টিকারী অন্ধকার পদার্থের ‘বর্ণবলয়’ এবং তাদেরকে সংযুক্ত রাখা মহাজাগতিক জালের ‘ফিলামেন্ট’ দেখা গিয়েছে।
মধ্যাকর্ষণের ফলে সাধারণ পদার্থ অন্ধকার পদার্থকে অনুসরণ করে থাকে, এক্ষেত্রে অন্ধকার পদার্থের সিমিউলেশনে দেখা প্যাটার্নকেই গ্যাসীয় ফিলামেন্ট অনুসরণ করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত, যদিও, এই ফিলামেন্টগুলোকে দেখা সম্ভব হয়নি। ছায়াপথের অভ্যন্তরে গ্যাস উজ্জ্বল পারিপার্শ্বিক উৎস থেকে আলো শোষণের ক্ষমতাকে সনাক্ত করা হয়েছে, কিন্তু সেই গ্যাসের বিতরণ কিভাবে হয় তা জানা যায় নি। নতুন গবেষণায়, গবেষকরা কোয়েসার থেকে তীব্র বিকিরণের ফলে হাইড্রোজেন গ্যাসের ফ্লুরোসেণ্ট ঔজ্জ্বলতা উদ্ঘাটন করেছেন।
কোয়েসার এক প্রকার সক্রিয় গ্যালাকটিক নিউক্লিয়াস, বা মূল, যা ছায়াপথের কেন্দ্রে একটি দানবাকার ব্লাকহোল দ্বারা চালিত হয়ে তীব্র বিকিরণ নির্গত করে। এর আগে দূরবর্তী কোয়াসার নিয়ে একটি জরিপে অন্যান্যদের সাথে ক্যান্টালুপো মহাজাগতিক ওয়েবে অন্ধকার গ্যালাক্সি নামে পরিচিত ঘন গ্যাসের জটলা সনাক্ত করেছিলেন। নক্ষত্র গঠন করার জন্য এই অন্ধকার গ্যালাক্সিগুলো হয় আকারে খুবই ছোট অথবা বয়সে নবীন।
ক্যান্টালুপো বলেন, “মহাজাগতিক জালে অন্ধকার গ্যালাক্সিগুলো অপেক্ষাকৃত অধিক ঘনত্ব বিশিষ্ট হয়ে একটি ক্ষুদ্র অংশ জুড়ে থাকে। নতুন এই চিত্রে বহুলাংশে বিকীর্ণ এবং বর্ধিত হয়ে যাওয়া নীহারিকা ছাড়াও আমরা অন্ধকার গ্যালাক্সিগুলোকে দেখতে পারছি। কিছু গ্যাস ছায়াপথগুলোতে পড়বে কিন্তু বেশিরভাগ বিকীর্ণ এবং নক্ষত্র গঠনে অক্ষম হয়ে থাকবে।”
কম্পিউটার সিমিউলেশন দ্বারা গবেষকরা নেবুলা বা নীহারিকায় গ্যাসের পরিমান পূর্ব ধারনার চেয়ে অন্তত দশ গুন বেশি বলে অনুমান করছেন।
ফিবা মণ্ডল
সূত্র: নেচার
২০ জানুয়ারি, ২০১৪