রবিবার ● ১০ নভেম্বর ২০১৩
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ: মহাকাশ » মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়কার আদিম গ্যাস
মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়কার আদিম গ্যাস
মহাবিস্ফোরণের পর মুহূর্তেই হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম মৌলগুলোর সৃষ্টি হলেও এই ঘটনার আনুমানিক প্রায় ৭৫ কোটি বছর পরে প্রয়োজনীয় অন্যান্য মৌলসমূহ সৃষ্টি হয়। জ্যোতির্বিদরা সম্প্রতি মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়ে ছড়িয়ে পড়া আদিম হাইড্রোজেন গ্যাসের সন্ধান পেয়েছেন। গবেষকদের মতে এই শীতল গ্যাস একটি গ্যালাক্সির দিকে প্রবাহমান, যা ১১০ কোটি বছর পূর্বের একটি ঘটনা। অপরিমিত গ্যাস প্রবাহ সেই আদিম সময়কেই ইঙ্গিত করছে যখন গ্যালাক্সিসমূহ প্রাচুর্যতা নিয়ে এই গ্যাস থেকেই নক্ষত্রদের সৃষ্টি করেছিলো। আর নক্ষত্রের বিস্ফোরণ বা সুপারনোভা থেকে ছড়িয়ে পড়েছিলো জীবনের মৌলিক কণিকাগুলো মহাবিশ্বের প্রান্তময়। একইভাবে আমাদের আকাশগঙ্গা গ্যালাক্সিটি আর পৃথিবীকে ধারণ করা পরিচিত সৌরজগত এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াতেই সৃষ্টি হয়েছিলো।
যুক্তরাজ্যের সুইনব্রুনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেইল ক্রিগটন এর নেতৃত্বে জ্যোতির্বিদরা এ বিষয়ে তাদের অনুসন্ধানকৃত ফলাফল অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স নামক বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশ করেছেন। গবেষক দলের মতে, দূরবর্তী হাইড্রোজেনের অস্তিত্ব সাধারণত খুঁজে বের করা সম্ভব হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা দূরবর্তী ও অত্যুজ্জ্বল একটি কোয়াসার থেকে কাকতালীয়ভাবে আসা আলোর মাধ্যমে এটি সনাক্ত করতে পেরেছেন। অ্যারিজোনার মাউন্ট গ্রাহামের লার্জ বাইনোকুল্যার টেলিস্কোপ ব্যবহার করে পদ্ধতিগত জরিপের মাধ্যমে এবং হাওয়াই এর কেক টেলিস্কোপের স্পেকট্রোগ্রাফের সাহায্যে এটি আবিস্কার করা সম্ভব হয়েছে।
কসমোলজিস্টরা বিশ্বাস করেন গ্যালাক্সিসমূহের মধ্যে প্রবাহমান আদিম হাউড্রোজেনের বিস্তীর্ণ আধার থেকেই প্রাক গ্যালাক্সিসমূহ তাদের সৃষ্টির প্রয়োজনীয় রসদ পেয়েছিলো। প্রায় ১০০ কোটি বছর আগে যখন মহাবিশ্বের বয়স বর্তমান সময়ের এক পঞ্চমাংশ ছিল তখন তরুণ গ্যালাক্সিসমূহ নতুন নক্ষত্রদের সৃষ্টি করেছিলো। তবে তা বর্তমান হারের চেয়ে একশ গুণ বেশি ছিল। এর ফলে গ্যাসের মতো জ্বালানীর প্রয়োজন দেখা দেয়, যে কারণেই নক্ষত্রের জন্ম।
গত দশকে সুপারকম্পিউটার সিম্যুলেশনের দ্বারা গ্যালাক্সি সৃষ্টির বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিলো যে গ্যালাক্সিসমূহের মধ্যে গ্যাস শীতল প্রবাহের মতো প্রবেশ করে। এই ভবিষ্যদ্বাণী পরীক্ষা করে দেখা সহজ ছিল না কারণ গ্যালাক্সির প্রান্তসীমা খুব অন্ধকার। এছাড়া গবেষক দল এমন জায়গার সন্ধান করছিলেন যেখানে কোয়াসার থেকে আলো পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কোয়াসার এবং গ্যালাক্সিই মহাবিশ্বে উজ্জ্বলতম বস্তু। যদি কোন গ্যাসীয় মেঘ কোয়াসার এবং টেলিস্কোপের মধ্যবর্তী অঞ্চলে প্রবাহিত হতে থাকে, তাহলে গ্যাস দ্বারা কোয়াসারের আলো শুষে নেয়ার ঘটনা সুনির্দিষ্ট তরঙ্গ বা বর্ণ হিসেবে ধরা পড়বে। আলো এইসব তরঙ্গসমূহ আড়াল করেই আমাদের কাছে পৌঁছবে। ফলে বাদ পড়া তরঙ্গের প্যাটার্ণ থেকেই গ্যাসের তাপমাত্রা, পুরুত্ব ও গঠন সম্পর্কে জানা যাবে। ক্রিগটন ও তার সহকর্মীরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই গ্যালাক্সি সম্পর্কে তাদের ধারণা করেছেন এবং বাদ পড়া তরঙ্গ থেকে হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ডিওটোরিয়ামের অস্তিত্ব জানতে পেরেছেন। মহাবিস্ফোরণ ঘটার মিনিটখানেক পরেই ডিওটোরিয়াম সৃষ্টি হয়েছিলো, যা মহাবিশ্বের জন্ম দিয়েছিলো।
জ্যোতির্বিদদের মতে, ডিওটোরিয়াম সময়ের সাথে নক্ষত্রের ভিতরে ও বাইরে গ্যাস আবর্তে ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে খুঁজে পাওয়া গ্যাস কখনোই নক্ষত্র সৃষ্টিতে ব্যবহৃত হয়নি।
ক্রিগলন বলেন, ‘গ্যালাক্সিগুলো প্রবলভাবে নক্ষত্র সৃষ্টি করেছে এবং গ্যাসীয় বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমান করছে যে তারা মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদিম উপকরণ।’ জ্যোতির্বিদরা এরকম আরও প্রায় দশটি গ্যাস প্রবাহের উদাহরণ খুঁজে পেতে চান যা দিয়ে গ্যালাক্সি সৃষ্টি ও পরীক্ষার নির্ভালতা যাচাই করতে পারবেন।
যোয়েল কর্মকার
সূত্র: ডব্লিউ. এম. কেক অবজারভেটরি
৫ অক্টোবর, ২০১৩