সর্বশেষ:
ঢাকা, মে ১৫, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

cosmicculture.science: বিজ্ঞানকে জানতে ও জানাতে
বৃহস্পতিবার ● ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » চন্দ্রগ্রহণ » চন্দ্রগ্রহণের বিস্তারিত
প্রথম পাতা » চন্দ্রগ্রহণ » চন্দ্রগ্রহণের বিস্তারিত
৭৯০ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

চন্দ্রগ্রহণের বিস্তারিত

পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদপ্রাচীণ মানুষদের কাছে গ্রহণের বিষয়টি যেমন ছিল এক বিস্ময়কর ঘটনা তেমনি তারা বিশ্বাস করত গ্রহণের ফলে ঝড়-ঝঞ্ঝা, বৃষ্টি, ভূমিকম্প, উল্কাপাত, জলোচ্ছ্বাস, মহামারীর মত কোনও না কোন দুর্যোগ আসবেই। বর্তমান সময়ে আমরা জানি কেন সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ ঘটে থাকে। একদিকে এর সাথে কোন দৈব বা অতিপ্রাকৃত ঘটনার যেমন যোগসাজশ নেই অন্যদিকে এই মহাজাগতিক ঘটনা আমাদের বিজ্ঞান মানসে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখছে।

চন্দ্রগ্রহণ কি
পৃথিবী উপবৃত্তাকার পথে সূর্যকে প্রদক্ষিণরত, মহাকাশে এই কক্ষপথ ক্রান্তিবৃত্ত (Ecliptic) নামে পরিচিত। তেমনি চাঁদও উপবৃত্তাকার পথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণরত। চাঁদের কক্ষপথ ক্রানি-বৃত্তকে দুটি বিন্দুতে ছেদ করে। ছেদ বিন্দুকে পাত (Node) বলা হয়। যে ছেদ বিন্দুর মধ্যে দিয়ে চাঁদ দক্ষিণ থেকে উত্তরে যায় তাকে আরোহী পাত (Ascending Node) বলে এবং যে ছেদ বিন্দুর মধ্যে দিয়ে চাঁদ পুনরায় উত্তর থেকে দক্ষিণে যায় তাকে অবরোহী পাত (Descending Node) বলে। প্রতি মাসে চাঁদ দুইবার এই ক্রানি-বৃত্ত অতিক্রম করে।
কক্ষপথ পরিভ্রমনের এক পর্যায়ে চাঁদ পৃথিবীকে মাঝখানে রেখে সূর্যের সাথে এক সমতলে এবং এক সরলরেখায় চলে এলে সূর্যের আলো পৃথিবীতে বাঁধা পড়ে চাঁদে পৌঁছতে পারে না। তখনই ঘটে থাকে চন্দ্রগ্রহণ। প্রতি পূর্ণিমাতেই চাঁদ পৃথিবীকে মাঝখানে রেখে সূর্যের বিপরীতে অবস্থান করে। কিন্তু প্রতি পূর্ণিমাতেই চন্দ্রগ্রহণ ঘটে না। কারণ, চন্দ্রগ্রহণ ঘটতে হলে চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবীকে অবশ্যই একই সরলরেখায় ও একই সমতলে থাকতে হবে। চাঁদের কক্ষতল পৃথিবীর কক্ষতলের সাথে গড়ে ৫ ডিগ্রী ৯ মিনিট কোনে অবস’ান করে। ফলে প্রতি পূর্ণিমাতেই চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সমতলে থাকলেও একই সরলরেখায় আসতে পারে না।চন্দ্রগ্রহণ ঘটতে হলে চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবীকে অবশ্যই একই সরলরেখায় ও একই সমতলে থাকতে হবে।

চন্দ্রগ্রহণের প্রকার
চন্দ্রগ্রহণ সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে। পূর্ণ এবং আংশিক চন্দ্রগ্রহণ। চাঁদ যখন পৃথিবীর প্রচ্ছায়ায় পুরোপুরি অবস্থান করে তখন পূর্ণ গ্রহণ ঘটে এবং যখন চাঁদ যখন পৃথিবীর প্রচ্ছায়ায় সম্পূর্ণ অবস্থান না করে কিছু অংশ উপচ্ছায়ায় থাকে তখন আংশিক গ্রহণ ঘটে। উল্লেখ্য, পৃথিবীর ছায়া দুই রকম হয়: প্রচ্ছায়া এবং উপচ্ছায়া। প্রচ্ছায়া অঞ্চলে সূর্যের আলো একদমই পৌঁছতে পারে না কিন্তু উপচ্ছায়া অঞ্চলে সূর্যের আলো কিছু পরিমাণ পৌঁছায়। চাঁদ যখন শুধুমাত্র উপচ্ছায়ায় অবস্থান করে তখন কোন গ্রহণ ঘটে না, চাঁদকে শুধু কিছুটা ম্লান দেখায়। পূর্ণ গ্রহণ শুরু হওয়ার আগের মুহুর্তে আংশিক গ্রহণ হতে থাকে এবং এক সময় পূর্ণ গ্রহণ শুরু হয় যখন চাঁদ প্রচ্ছায়ায় প্রবেশ করতে শুরু করে। চাঁদ যতক্ষণ প্রচ্ছায়ায় থাকে ততক্ষণ ঘটে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ। নির্দিষ্ট সময় পরে পৃথিবীর প্রচ্ছায়া থেকে চাঁদ ধীরে ধীরে বের হতে শুরু করলে আবার শুরু হয় চাঁদের আংশিক গ্রহণ। [নিচের ছবিতে বর্ণনা করা হয়েছে] অর্থাৎ চাঁদের আংশিক গ্রহণ দিয়ে গ্রহণ শুরু এবং পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের দশা পেরিয়ে আবার তা আংশিক গ্রহণে ফিরে আসে।
প্রচ্ছায়ার আকৃতি কোনের মত, যা এক সময় একটি বিন্দুতে শেষ হয়। এটি প্রচ্ছায়া-কোনের শীর্ষবিন্দু (Apex)। পৃথিবীর আকার চাঁদের তুলনায় অনেক বড় হওয়ায় পৃথিবীর ছায়াও তুলনামূলক বড় হয়। একারণে পৃথিবীর প্রচ্ছায়া অঞ্চলের ব্যাসও অনেক বড় হয়। তাই পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ অনেক সময় ধরে দেখা সম্ভব। কিন্তু সূর্যগ্রহণের বেলায় এর ঠিক উল্টো ঘটে বলে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ খুবই অল্প সময়ের জন্য দেখা যায়। চন্দ্রগ্রহণের সমস্ত দশা প্রায় চার ঘন্টা ধরে চলে। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে পূর্ণিমা থাকে সেখান থেকেই চন্দ্রগ্রহণ দেখা যায়।
সূর্যগ্রহণ খালি চোখে দেখা অত্যন্ত ক্ষতিকর হলেও চন্দ্রগ্রহণ খালি চোখেই দেখা সম্ভব। উজ্জ্বলতা বেশি না থাকায় তা চোখের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়, তবে পূর্ণিমার সময় টেলিস্কোপে পর্যবেক্ষণ করলে বা ক্যামেরা ব্যবহার করলে ফিল্টার ব্যবহার করতে হবে।

পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণে তামাটে রঙের চাঁদ
গ্রহণ চলাকালীন সূর্যগ্রহণের মতো চাঁদ পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় না। বরং চাঁদকে একটি তামাটে বা লাল রঙের চাকতির মতো মনে হয়। কারণ সূর্যের আলোকরশ্মির মধ্যে নীল রঙয়ের রশ্মি সহ কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মির পুরোটাই পৃথিবীর বায়ুমন্ডল শোষণ করে নেয়। অবশিষ্ট বেশি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের লাল বা কমলা রঙের রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমন্ডল দ্বারা শোষণের পরেও কিছুটা অংশ প্রতিসরিত ও বিচ্ছুরিত হয়ে চাঁদের উপরে পড়ে। একারণে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ তামাটে বর্ণের হয়। পৃথিবীর নিজস্ব বায়ুমন্ডল না থাকলে চাঁদকে কালোই দেখাতো।

চন্দ্রগ্রহণের ঐতিহাসিক ঘটনা
১৫০৪ সালের শুরুর দিকে কলম্বাসের তার চতুর্থ সমুদ্রযাত্রায় দক্ষিণ আমেরিকার জ্যমাইকা উপকূলে অবস’ানের এক পর্যায়ে স্থানীয় আদিবাসীদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। মুখোমুখি হন তীব্র খাদ্য ও পানীয় সংকটের। ঐ মুহুর্তে উত্তরণের কোন পথ খুঁজে না পেলেও পাচ্ছিলেন নিজেকে সহ জাহাজের সকল নাবিকের বেঘোরে প্রাণ খোয়ানোর ইঙ্গিত। কলম্বাসের কাছে তখন ছিল সমসাময়িক জার্মান গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদ রেগিওমন্টেনাস্‌ তৈরিকৃত চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণের তালিকা সহ একটি জ্যোতির্বিজ্ঞানপঞ্জি। সেখানে কলম্বাস দেখতে পান ১৫০৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি, বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটতে যাচ্ছে একটি পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ। এই মহাজাগতিক ঘটনাকেই তিনি স্থানীয় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। তাদেরকে ভয় দেখান যে যদি তারা তাদের খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ না করেন তবে ঈশ্বর তাদের প্রতি রুষ্ট হবেন আর তাদের উপর নেমে আসবে চির অন্ধকার! এভাবে চন্দ্রগ্রহণের বদৌলতে সেইবার তারা সকলে মুক্তি পান।
সূর্যগ্রহণের মত চন্দ্রগ্রহণ ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি না করলেও এই মহাজাগতিক ঘটনা সাধারণের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি ও যৌক্তিক চিন্তায় অনুপ্রাণিত করে।

গ্রহণ ঘেরা কুসংস্কার
প্রাচীণ মানুষদের কাছে গ্রহণ মানেই ছিল দেবতাদের অভিশাপ। বর্তমান সময়েও দেখতে পাওয়া যায় গ্রহণ চলাকালীন সময়ে খাবার গ্রহণ না করা, বাইরে বের না হওয়া, গর্ভবতী মহিলাদের বিভিন্ন বিধিনিষেধ মেনে চলা প্রভৃতি। কিন্তু গ্রহণের সাথে এসবের কোন সম্পর্ক নেই। এটি প্রকৃতির এক নিয়মের আওতায় ঘটে চলা স্বাভাবিক ঘটনা। জোয়ার-ভাঁটার পরিবর্তন ছাড়া এর অন্য কোন প্রভাব নেই। কাজেই সব রকম অন্ধবিশ্বাস বা কুসংস্কার ত্যাগ করুন। এই মহাজাগতিক ঘটনা দেখতে সবার আকাশ থাকুক মেঘমুক্ত!





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার খোঁজেজেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম রঙীন ছবি প্রকাশ
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথম চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স এর জীবনাবসান
মঙ্গলে ইনজেনুইটি’র নতুন সাফল্য
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আফ্রিকায় ৫০ বছর পরে নতুনভাবে হস্তিছুঁচোর দেখা মিলল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা