শনিবার ● ৭ জানুয়ারী ২০১২
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান সংবাদ » প্রথমবারের মত মিশ্র ভ্রুণের বানরের জন্ম
প্রথমবারের মত মিশ্র ভ্রুণের বানরের জন্ম
বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো ভিন্ন ভিন্ন ভ্রূণ থেকে নেয়া কোষ একত্র করে বানরের জন্ম দিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা এজন্য কয়েকটি রেসাস বানরের ভ্রূণ থেকে নেওয়া কোষ একত্র করে মেয়ে বানরের গর্ভে স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে তারা জন্ম দিয়েছেন তিনটি শাবকের, যাদের নাম রাখা হয়েছে কিমেরো, রোকু ও হেক্স (Chimero, Roku ও Hex)।
একাধিক প্রাণীর থেকে নেয়া ভিন্ন জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের কোষ থেকে গবেষণাগারে জন্মানো এ ধরনের প্রাণীকে বলা হয় ‘কিমেরাস’ বা chimeras। ভ্রুণের উন্নয়ন সংক্রান্ত গবেষণার জন্য কিমেরাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে ইঁদুরের উপর এ বিষয়ে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এবারেই প্রথম ছয়টি পৃথক ভ্রূণ থেকে নেওয়া কোষ থেকে বানরের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। জার্নাল সেল-এ এই সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাপত্রের যুগ্ম লেখক পোর্টল্যান্ডের অরিগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির (Oregon Health and Science University) শুখরাত মিতালিপভ (Shoukhrat Mitalipov) জানান, কোষগুলো কখনোই জোড়া লেগে যায় না, কিন্তু তারা একত্রে থেকে টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি করে।
মিতালিপভের গবেষক দল এর আগে বানরের ভ্রূণের সঙ্গে উৎপাদিত ভ্রূণের জনন কোষের সমন্বয় ঘটিয়ে বানর জন্মানোর এই ধরনের পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের গবেষণাকৃত কোষটি ছিল ‘প্লুরিপটেনসি’ (pluripotency) পর্যায়ে। এর মানে হচ্ছে কোষগুলো শরীরে যেকোনো ধরনের টিস্যু তৈরি করতে পারে, কিন্তু প্ল্যাসেন্টা (গর্ভফুল) বা সম্পূর্ণ প্রাণী তৈরি করতে পারে না। পরে তারা ‘টোটিপটেন্ট’ (totipotent) অর্থাৎ খুব প্রারম্ভিক পর্যায়ের ভ্রূণকোষের মিশ্রণ করার কেবল কিমেরা বানর জন্ম দিতে সক্ষম হন।
মিতালিপভ বলেন, এর থেকে ধারণা পাওয়া যায় স্থন্যপায়ীর ভ্রুণ উৎপাদিত ভ্রুনের জনন কোষের সাথে মিলতে বাধা দেয়, যা ইদুরের ক্ষেত্রে ঘটেনি। এটি আরও ইঙ্গিত দেয় যে, দুই দশকের মত দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণাগারে সংরক্ষিত স্থন্যপায়ী প্রাণী ও মানুষের উৎপাদিত ভ্রূণকোষ জীবিত ভ্রূণের কোষের মতো ততোটা শক্তিশালী নয়।
ড. মিতালিপভ আরো বলেন, ‘আমরা সবকিছুই ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করতে পারি না। যদি আমরা জনন কোষ থেরাপিকে গবেষণাগার থেকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে আসতে চাই এবং ইঁদুরের পরিবর্তে মানুষের উপর, তাহলে আমাদের বুঝতে হবে স্থন্যপায়ী প্রাণীর কোষ কি করতে সক্ষম বা অক্ষম। আমাদের অধ্যয়ন করা উচিত মানুষ তথা মানব ভ্রুণ নিয়ে।’ কিন্তু তিনি উল্লেখ করেন মানব কিমেরা নিয়ে ব্যবহারিক কোন পরীক্ষা হয়নি। তবে জনন কোষ থেরাপির মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যাওয়া স্নায়ু কোষ প্রতিস্থাপন সম্ভব।