সর্বশেষ:
ঢাকা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

cosmicculture.science: বিজ্ঞানকে জানতে ও জানাতে
শুক্রবার ● ১০ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আবিষ্কার/উদ্ভাবন » স্ট্যানলি মেয়ের: পানি থেকে জ্বালানি তৈরির উদ্ভাবক
প্রথম পাতা » আবিষ্কার/উদ্ভাবন » স্ট্যানলি মেয়ের: পানি থেকে জ্বালানি তৈরির উদ্ভাবক
১০৪৯ বার পঠিত
শুক্রবার ● ১০ মে ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

স্ট্যানলি মেয়ের: পানি থেকে জ্বালানি তৈরির উদ্ভাবক

স্ট্যানলি মেয়ের এবং তার জ্বালানি কোষের গাড়ি
পানি জ্বালানি কোষ (water fuel cell) হলো অবিরাম গতি মেশিনের প্রযুক্তিগত নকশা, যা মার্কিন উদ্ভাবক স্ট্যানলি অ্যালেন মেয়ের তৈরি করেন। তিনি দাবি করেছিলেন এই ডিভাইস মোটরগাড়িতে সংযুক্ত করলে পেট্রোলের পরিবর্তে পানিকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এখন পর্যন্ত ধারণা করা হয় পানিকে জ্বালানিতে রুপান্তরিত করার প্রথম পদক্ষেপটিই নিয়েছিলেন স্ট্যানলি। তার এই উদ্ভাবন চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়িত হলে মোটরগাড়ির বিকাশে আমূল পরিবর্তন হতো এবং জীবাশ্ম জ্বালানি সংকটকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতো। যদিও তৎকালীন উদ্যোক্তারা প্রশাসনের সহায়তায় তার এই উদ্ভাবনকে জালিয়াতি অ্যাখ্যা দিয়ে নিগ্রহ করতে ছাড়েননি। এমনকি তার মৃত্যুকেও এই রোষানলের বলি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
স্ট্যানলি মেয়েরের উদ্ভাবিত গাড়ি
স্ট্যানলি মেয়ের জন্ম ২৪ আগস্ট ১৯৪০। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বাস ইস্ট সাইড এলাকায় তিনি বেশিরভাগ জীবন কাটিয়েছিলেন। ওহিও অঙ্গরাজ্যের গ্রান্ডভিউ হাইটসে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন এবং পরে ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অল্প কিছুদিন ক্লাশ করে শেষমেষ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তরুণ স্ট্যানলি সবসময়েই নতুন কিছু তৈরি করার আগ্রহ দেখাতেন। তার যমজ ভাই স্টিফেন মেয়েরের সাথে ছোটবেলাতেই নিজেদের খেলনা তৈরি করতেন। তার এই আগ্রহ থেকেই পরিণত বয়সে তিনি অসংখ্য উদ্ভাবনের পেটেন্ট করেন, যার মধ্যে ব্যাংকিং সিস্টেম, সমুদ্রবিদ্যা, হৃদপিন্ডের পর্যবেক্ষণসহ নানাবিধ ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিলেন। অবাক করা বিষয় ছিল যে পেটেন্ট অফিসে আবেদনের সাধারণত আট মাসের মাথাতেই তার উদ্ভাবনগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ শুরু হয়ে যেতো, যা ছিল তুলনামূলক দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন। যেখানে সাধারণত অন্যদের উদ্ভাবন প্রায়োগিক হতে কম করে হলেও এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়। পেটেন্ট কর্মকর্তারা ধারণা করতেন স্ট্যানলি’র প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ছিল অন্যদের তুলনায় বেশি।
স্ট্যানলি মেয়েরের হাইড্রোজেন গাড়ির পেটেন্ট
স্ট্যানলি যে সময় পেটেন্ট জমা দেন তখন তিনি ওহিওতে বাটেল ফাউন্ডেশনে কাজ করেছেন, যা ছিল মানবিকতার জন্য প্রযুক্তিগত গবেষণা ও উন্নয়নের ভিত্তিক একটি সংস্থা। স্ট্যানলির বেশিরভাগ কাজ এখানে থাকা অবস্থাতেই হয়েছিল। তিনি এছাড়াও নাসা’র জেমিনি স্পেস প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত ছিলেন।
স্ট্যানলি মেয়েরের হাইড্রোজেন গাড়ির আরও একটি পেটেন্ট
১৯৭৫ সালে আরব তেল নিষেধাজ্ঞার সময় সৌদি আরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং তেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। মার্কিন মুলুক প্রায় তেলশূন্য হয়ে এবং অনেকগুলি কর্পোরেশন দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল অথবা ফলস্বরূপ প্রচুর অর্থ হারাচ্ছিল। আমেরিকান অটোমোবাইল শিল্পও ব্যাপকভাবে হুমকির মুখে পড়ে এবং নতুন গাড়িগুলির চাহিদা শূন্যের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। এসময় কিছু করা দরকার হয়ে পড়ে। স্ট্যানলি তার চিরায়ত উদ্যোম নিয়ে কাজে লেগে পরেন। তিনি এমন একটি গাড়ি তৈরি করতে চাইলেন সমগ্র অটোমোবাইল শিল্পে বিপ্লব ঘটাবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জীবাশ্ম জ্বালানির প্রধান নির্ভরতা মিটিয়ে ফেলবে। একটি সাক্ষাত্কারে স্ট্যানলি বলেন, “আমাদের বিকল্প জ্বালানি উত্স খুঁজে বের করা জরুরি হয়ে উঠেছে এবং খুব তাড়াতাড়ি তা করতে হবে।” এর অর্থ ছিল তেলের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে গেলে বা বিকল্প জ্বালানি তৈরি করা না গেলে আমেরিকার সমগ্র অর্থনীতি ঘুরে যাবে। এ থেকেই স্ট্যানলি মেয়ের হাইড্রোজেন জ্বালানি কোষ গাড়ীর উন্নতি ঘটাতে মনোনিবেশ করেন। তিনি দাবি করেন যে তার আবিষ্কৃত যন্ত্রের ফলে গাড়িগুলি পেট্রোলের বদলে পানি দিয়েই চলতে পারবে, আর পানি তো অফুরান।
জ্বালানি কোষ
জ্বালানি কোষটি পানির পরমাণুগুলিকে তার মৌলিক রূপে অর্থাৎ দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং একটি অক্সিজেন পরমাণুতে ভাগ করে ফেলে। পরে হাইড্রোজেন পরমাণুটি পুড়ে শক্তি উৎপন্ন করে যা গাড়ির চলার জন্য ব্যয় হবে। অবশিষ্ট অক্সিজেন অব্যবহৃত পানির সাথে নির্গমন নল দিয়ে বেরিয়ে যাবে, ফলে পরিবেশ দুষনেরও ভয় থাকবে না। এটা ছিল রীতিমতো বৈপ্লবিক। এই পদ্ধতিটি মূলধারার শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং হ্রাস করবে। এই আবিষ্কার একইসাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তেল নির্ভরতা, এমনকি সাধারণভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি বিশ্ব নির্ভরতাও কমে আসবে। এটা হতে পারতো চূড়ান্ত বিকল্প জ্বালানি, যার জোগান ছিল পর্যাপ্ত এবং সর্বত্র।
তার জ্বালানি কোষ ইঞ্জিন তৈরির কয়েক মাস পরে মেয়ের একটি ছোট গাড়ি তৈরি করেন, যা তার বৈপ্লবিক জ্বালানি কোষ ইঞ্জিন দ্বারা চলেছিল। এটা জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করে। মেয়ের দাবি করেন যন্ত্রটিতে তড়িৎবিশ্লেষণে অনুমানের থেকেও অপেক্ষাকৃত কম শক্তির প্রয়োজন হয়। তিনি হিসেব করে দেখালেন তিনি যে তড়িৎকোষ তৈরি করেছেন সেটি সাধারণ জলের কল থেকেও কম শক্তি ব্যয় করে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন পৃথক করতে সক্ষম।
মেয়ের তার গাড়িটির প্রদর্শন করান এবং বেশকিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। গাড়িটি দেখে প্রত্যেকেই অবাক হয়ে যান যে সমগ্র ধারণা কতোটা উদ্ভাবনী এবং বৈপ্লবিক ছিল। তারা সবাই মেনে নিয়েছিল যে মেয়ের জ্বালানি কোষটি তড়িৎবিশ্লেষণে হাইড্রোজেন জ্বালানিতে পরিণত হতে পারে এবং আনুমানিক হিসাবের তুলনায় অনেক বেশি হাইড্রোজেন উত্পন্ন করে।
আইনী জটিলতা শুরুর আগ পর্যন্ত সবকিছুই ভালোভাবে চলছিলো। হাইড্রোজেন জ্বালানি কোষ উদ্ভাবনের কয়েক মাস পরেই বিভিন্ন আইনজীবীদের কাছ থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করে যে হাইড্রোজেন চালিত গাড়ীটি প্রতারণামূলক এবং অবৈধ। মেয়েরের আবিষ্কারের বিরুদ্ধে অনেক মামলা করা হয়েছিল। তার পানি জ্বালানি কোষটি আদালতে তিনজন বিশেষজ্ঞ সাক্ষী দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং তারা মতামত দেন এখানে বৈপ্লবিক কিছুই ছিল না এবং এটি কেবল প্রচলিত তড়িৎবিশ্লেষণ ব্যবহার করে। অনেক বিনিয়োগকারী দাবি করেছেন যে স্ট্যানলি বিপ্লবী কিছুই করেননি এটি মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়।
স্থানীয় সংবাদপত্রে স্ট্যালিন মেয়েরের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়
২১ মার্চ ১৯৯৮ স্ট্যানলি মেয়ের রহস্যজনকভাবে খুন হন। তারা দুই ভাই বেলজিয়ান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একটি রেস্টুরেন্টে থাকা অবস্থায় স্ট্যানলি বিষ প্রয়োগে মারা যান। স্ট্যানলি মেয়েরের ভাইয়ের বক্তব্য থেকে জানা যায় বিনিয়োগকারীদের সাথে আলাপের এক পর্যায়ে মেয়ের ক্র্যানবেরি জুসে চুমুক দেয়। এরপরেই সে তার গলায় হাত দিয়ে দরজার বাইরে বেরিয়ে পড়লেন এবং হাঁটু গেড়ে বসে অনবরত বমি করতে শুরু করেন। তার জুসে বিষ দেওয়া হয়েছিল - মৃত্যুর আগে শুধু এটুকুই বলতে পেরেছিলেন তিনি। তিন মাস তদন্ত শেষে উদঘাটিত হয় সেরেব্রাল অ্যানোরিসিম থেকে অর্থাৎ বিষক্রিয়ার মারা যান মেয়ের। তবে কোন অপরাধীই আর শনাক্ত হয়নি। পরিচিতজনরা ধারণা করছেন এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, কারণ তার পানি জ্বালানী কোষের ধারণা মুক্ত শক্তির অবারিত দ্বার হিসেবে অটোমোবাইল সহ শিল্পক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতো। হয়তো পুজিঁবাদীদের একক নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে যেতো অথবা জীবাশ্ম জ্বালানি করায়ত্ত করার শক্তির লড়াই খুব একটা বেগবান হতো না। পৃথিবীর সামগ্রিক বিকাশের তুলনায় মুষ্টিমেয় ক্ষমতাধরদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখাই লড়াই জয়ী হয়, আর স্ট্যালিন মেয়েরের সাথে সাথে একটি সম্ভাবনাময় উদ্ভাবনেরও অকাল মৃত্যু ঘটে।

সম্পাদনা: কসমিক কালচার





আবিষ্কার/উদ্ভাবন এর আরও খবর

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার খোঁজেজেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম রঙীন ছবি প্রকাশ
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! পূর্ণতা মিলল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের
প্রথম চন্দ্রাভিযানের নভোচারী মাইকেল কলিন্স এর জীবনাবসান
মঙ্গলে ইনজেনুইটি’র নতুন সাফল্য
শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নির্দেশকের সন্ধান লাভ
আফ্রিকায় ৫০ বছর পরে নতুনভাবে হস্তিছুঁচোর দেখা মিলল
বামন গ্রহ সেরেসের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতার কারণ লবণাক্ত জল
রাতের আকাশে নিওওয়াইস ধূমকেতুর বর্ণিল ছটা,আবার দেখা মিলবে ৬,৭৬৭ বছর পরে!
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০
মহাকাশে পদার্পণের নতুন ইতিহাস নাসার দুই নভোচারী নিয়ে স্পেসএক্স রকেটের মহাকাশে যাত্রা